মানুষের জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময়
জাফর ইকবাল : মানুষের জীবন বড়ই বৈচিত্রময়। যখন যেটি চিন্তায় আসে সেটিই করতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক সময় নিজের জীবনও বাজি রাখতে হয়। আজকের আলোচনায় এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো।
এক রঙের পোশাকে পঁয়ত্রিশ বছর : কেন আপনি প্রতিদিন একই রকম ধূসর রঙের টি-শার্ট পরেন?- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ জানিয়েছিলেন, প্রতিদিন কোন পোশাক পরবেন এই চিন্তা করে সময় নষ্ট করার বদলে দিনের পুরোটা সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজে খরচ করাই তার কাছে শ্রেয় মনে হয়।
শুধু জুকারবার্গ নন, স্টিভ জবস, ডিন ক্যামেন কিংবা ক্রিস্টোফার নোলানের মতো অনেক সফল ব্যক্তির প্রতিদিন একই রঙের পোশাক পরার অভ্যাস রয়েছে। তবে এবার একই রঙের পোশাক পরে আলোচনায় এসেছেন সিরিয়ার এক ব্যক্তি। কারণ সিরিয়ান এই নাগরিক এক দুই বছর নয়, দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর হলুদ রঙের পোশাক পরছেন। শুধু হলুদ রঙের শার্ট বা টি-শার্ট নয় প্যান্ট, আন্ডারওয়্যার এমনকি তার নিত্য ব্যবহার্য মাথার টুপি, ছাতা, ফোনের কভার ও বাসার অনেক আসবাবও হলুদ রংয়ের।
আবু জাকুর নামের এই ব্যক্তির বাড়ি সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে। ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি হলুদ রঙের পোশাক পরা শুরু করেছেন। কারণ তার কাছে হলুদকে ভালোবাসার প্রতীক বলে মনে হয়। সেই থেকে শুরু। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক। এই পুরোটা সময় তিনি একদিনের জন্য হলুদ ব্যতীত অন্য কোনো রঙের পোশাক পরেননি।
সব সময় কেন হলুদ পরেন? একটি চীনা বার্তা সংস্থার এমন প্রশ্নের জবাবে আবু জাকুর বলেন, ‘হলুদ ছাড়া অন্য কোনো রঙের পোশাক পরলে নিজেকে নিষ্প্রাণ মনে হয়। ফলে অন্য কোনো পোশাক পরে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।’
প্রতিদিন হলুদ রঙের পোশাক পরে থাকায় আবু জাকুর এখন আলেপ্পোর খুবই পরিচিত মুখ। পথে চলতে অনেকেই তার সঙ্গে কথা বলেন, ছবি তোলেন, আবার অনেকে হাসাহাসিও করেন। এই খ্যাতির পাশাপাশি অনেক বিড়ম্বনা তিনি সহ্য করেন। কারণ যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার অনেকেই তাকে বাশার আল আসাদ, আইএস কিংবা আল-কায়েদার চর মনে করে। তবে যে যাই বলুক, আবু জাকুরের তাতে কিছু যায় আসে না। তিনি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত হলুদ রঙের পোশাক পরতে চান।
অদ্ভুত শাস্তি : প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য মেনে কাজ করে। এ জন্য কর্মীদেরও লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সেগুলো পূরণ না হলে কর্মীদের বিভিন্ন দ-ের মুখোমুখি হওয়ার নজিরও দেখা যায়।
তবে চীনের একটি পণ্যপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় তাদের ছয় কর্মীকে অদ্ভুত সাজা দিয়েছে। এই ঘটনা ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
চীনের সানডং প্রদেশের এই প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয় বিভাগের ছয় কর্মীকে একটি লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই কর্মীরা লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে শাস্তিস্বরূপ তাদের সবাইকে রাস্তায় হামাগুড়ি দিয়ে চলতে বলা হয়। চাকরি হারানোর ভয়ে ব্যস্ত রাস্তায় নেমে পড়ে কর্মীরা। হামাগুড়ি দিয়ে চলন্ত গাড়ির সাথে তারাও চলতে থাকে। এই দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে থাকে প্রতিষ্ঠানটির আরেক কর্মকর্তা। কিছুক্ষণের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এসে এই অপমানজনক কাজ থেকে তাদের বিরত করে। গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ওই কর্মকর্তাকে। কর্মীদের এই অপমানজনক শাস্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পুলিশ মানহানির মামলা করেছে।
৭৭ সিংহের সঙ্গে রাতযাপন : বিশ্বের নামকরা থিমবেজড পার্কগুলো পর্যটকদের জন্য নানা রকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার আয়োজন করে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জিজি কনজারভেশন পর্যটকদের জন্য এমন একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার ব্যবস্থা করেছে যা রীতিমতো পিলে চমমে যাওয়ার মতো। সিংহের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এই পার্ক কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের জন্য ৭৭টি প্রাপ্তবয়স্ক সিংহের সঙ্গে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করেছে।
সিংহের সঙ্গে থাকতে হবে শুনে যাদের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে তাদের অতটা ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ আপনাকে ঠিক একই ঘরে সিংহের সাথে থাকতে হবে না। অভয়ারণ্যের মাঝখানে তিন রুমের একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আর বাড়িটি ঘেরা হয়েছে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে। দর্শনার্থীদের থাকতে হবে এই ঘরটিতে।
তবে দর্শনার্থীরা যে সিংহ থেকে খুব দূরে থাকবেন তাও নয়। ঘরের পাঁচ মিটারেরও কম দূরত্বে ঘোরাফেরা করবে এক একটি হিংস্র সিংহ। ছয়জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ঘরটিতে থাকতে মোটা অঙ্কের অর্থ গুনতে হবে। প্রতি রাতের জন্য একশ চার মার্কিন ডলার।
জিজি কনজারভেশনের পরিচালক সুজানে স্কট মেইল অনলাইনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দর্শনার্থীরা এই ঘরে কিংবা সামনের উঠানে পায়চারী করতে করতে সিংহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তাদের খুনসুটি দেখতে পারবেন। রাতের বেলা খুব কাছ থেকেই সিংহের ভয়ংকর গর্জন শুনতে পারবেন। এই সবই তাদের বন্য প্রাণীর সঙ্গে বসবাসের এক বিরল অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।’ অভয়ারণ্য থেকে অর্জিত অর্থ পৃথিবীতে সিংহ সংরক্ষণে ব্যবহার করা হবে।
২০ বছর কুমিরের সঙ্গে বসবাস : কুমির কতটা বিপজ্জনক প্রাণী এ বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। কিন্তু সেই কুমিরের সঙ্গেই কেউ যখন রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা কাটায় তখন তা বিস্ময় না জাগিয়ে পারে না। বলছি কানথিপ নাথিপের কথা। উত্তর থাইল্যান্ডের পিটসানুলক শহরের ৫৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তির সার্বক্ষণিক সঙ্গী ভয়ংকর এক কুমির।
বিশ বছর আগের কথা। নাথিপ দুই সন্তানকে নিয়ে একটি কুমিরের খামারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। খামারে গিয়ে তার সন্তানরা কুমির পোষার বায়না ধরে। নাথিপ যতই তার সন্তানদের বোঝাতে চেষ্টা করেন- কুমির পোষার মতো প্রাণী নয়, ততই তারা বেঁকে বসতে থাকে। অবশেষে সন্তানদের ধনুকভাঙ্গা পণের কাছে হার মানেন নাথিপ। খামার থেকে দুটি কুমির নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে কিছুদিন পর একটিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কারণ নির্গেন নামের ওই কুমিরটি কিছুতেই বশ মানছিল না। এরপর থেকে এক বা দুইদিন নয় দীর্ঘ দুই দশক ধরে তিনি থং নামের আরেকটি কুমিরের সাথে একই বাড়িতে বসবাস করছেন।
নাথিপের দুই সন্তান এখন লেখাপড়ার জন্য শহরের বাইরে থাকে। কিন্তু থংকে নিয়ে সুখেই আছেন নাথিপ। প্রতিবেশী বা আগন্তুকদের কাছে থং ভয়ংকর প্রাণী হলেও নাথিপের কাছে থং তার তৃতীয় সন্তানের মতো। অনলাইন পোর্টাল সানুককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘থং খুবই পোষ্য। কারো জন্যই এটি ক্ষতিকর নয়। অধিকাংশ সময় সে একটি কাঠের টেবিলের নিচে থাকে। অল্প আহার ও যত্নে সে মহাসুখেই আছে।’