শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় ট্রাক-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৫ নেতা নিহত

খুলনা অফিস : খুলনা-রূপসা সেতু বাইপাস সড়কে ট্রাক-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৫ নেতা নিহত হয়েছে। এদের সকলের বাড়ি গোপালগঞ্জে হওয়ায় গোপালগঞ্জ শহরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের বাড়িতে চলছে আহাজারি ও শোকের মাতম। সকাল থেকেই নিহতদের বাড়িতে ভিড় করে স্বজন, প্রতিবেশী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। পরে জানাজা শেষে তাদেরকে স্ব স্ব কবরস্থানে দাফন দেয়া হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত পৌণে ১১টার দিকে খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানার সামনে জব্বার সড়কের কাছে হরিণটানা গেট নামক স্থানে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলো- গোপালগঞ্জ শহরের সবুজবাগ এলাকার এডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে ও গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব হাসান বাবু, একই এলাকার মৃত আলাউদ্দিন শিকদারের ছেলে ও গোপালগঞ্জ সদর যুবলীগের সহ-সভাপতি সাদিকুল আলম, থানাপাড়ার গাজী মিজানুর রহমানের ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক ওয়ালিদ মাহমুদ উৎসব, গেটপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন মোল্লার ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাজু আহমেদ এবং চাদমারী এলাকার ওয়াহিদ গাজীর ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য অনিমুল ইসলাম গাজী। এদের মধ্যে সাদিকুল গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, খুলনা জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে যাত্রীসহ একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো গ ৩৫-০০২৫) রূপসা সেতুর দিকে যাচ্ছিল। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ১৮-২৫৮৪) প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাইভেটকারে থাকা চালকসহ ৫ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। স্থানীয়রা জানায়, সড়কের মাঝখানে এক পথচারীকে (মস্তিস্ক বিকৃত) বাঁচাতে গিয়ে প্রাইভেটকারটি আইল্যান্ড ক্রস করে ডানদিকের সড়কে চলে আসে। তখনই বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সাথে প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রাইভেটকারটি ধুমড়ে-মুচড়ে যায় ও ট্রাকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাইভেটকারের জানালা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করে।
 গোপালগঞ্জ সদর থানা যুবলীগের সহ-সভাপতি সাদিকুল আলমের সদ্য কেনা প্রাইভেট কার নিয়ে বেড়াতে বের হয়ে আর ফেরা হলো না এই পাঁচ বন্ধুর। দুর্ঘটনায় নিহত গাজী ওয়ালিদ মাহমুদ উৎসবের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় গোটা পরিবার। উৎসব জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মিজানুর রহমানের ছেলে ও প্রধানমন্ত্রীর এ্যাসাইনমেন্ট অফিসার গাজী হাফিজুর রহমানের ভাইয়ের ছেলে।
 গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, ‘এই মর্মান্তিক মৃত্যু গোপালগঞ্জবাসীকে মর্মাহত করেছে। এই মৃত্যুতে গোপালগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজ যে পাঁচটি ছেলে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, তাদের সামনে সোনালি স্বপ্ন ছিল। তাদের মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগ পাঁচজন ভবিষ্যৎ মেধাবী নেতা হারাল।’
লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বন্ধু একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে খুলনায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। গাড়িটি খুলনা মহানগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে গোপালগঞ্জ ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তিনি বলেন, খেজুরবাগান অতিক্রম করার সময় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গাড়ির সামনে এসে পড়ে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মংলা থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়িটির সংঘর্ষ হয়। নিহত পাঁচজনই প্রাইভেটকারের যাত্রী। ট্রাকটি জব্দ করা হলেও চালকসহ অন্যরা পালিয়ে গেছে।
এদিকে দুর্ঘটনায় গোপালগঞ্জের পাঁচ তরুণ নেতার মৃত্যুতে গোপালগঞ্জ শহর জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনেও শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের বাড়িতে চলছে আহাজারি ও শোকের মাতম। সকাল থেকেই নিহতদের বাড়িতে ভিড় করে স্বজন, প্রতিবেশী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
এর আগে, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে খুলনা থেকে নিহতদের লাশ গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে এসে পৌঁছায়। এ খবর পেয়ে ভোর রাত থেকেই হাসপাতালে ভিড় জমান নিহতদের স্বজন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বন্ধু, সহপাঠিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সকাল সাড়ে ৭টার পর একে একে নিহতদের লাশ এ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় স্ব স্ব পরিবারের কাছে। বাদ যোহর নিহত ওই পাঁচ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতার জানাজা গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। গোপালগঞ্জের ছাত্র ও যুব নেতাদের অকাল মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক সংগঠন, জেলা আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শোকবার্তায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
পিকনিকের বাস উল্টে স্কুল ছাত্রী নিহত, আহত ৩০ : খুলনায় পিকনিকের বাস উল্টে মেঘলা নামের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চুকনগরের চাকুন্দিয়া জামেয়া এমদাদুল উলুম মাদরাসার পাশে বাসটি একটি কালভার্ট অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত মেঘলা যশোর সদরের শ্যামনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
গুরুতর আহতরা হলো-জেবা খাতুন (১৬), রেশমা (৩০), আব্দুল্লাহ (১১), নাসিরুল ইসলাম (৪০), রিয়া (১৪), আফরোজা (২০), আমেনা (৪৫), লাবনী (১৪), টুম্পা (১২), খাদিজা (১৫), সুমাইয়া (১৪), মাসুরা (১৩) জিনিয়া (১২), মমতাজ (১৫), নিলা (১৩), রামকৃঞ্চ বিশ্বাস (৪৮)। আহতদের মধ্যে জেবা খাতুন, রেশমা, আব্দুল্লাহ ও নাসিরুল ইসলামের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রেশমা হলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও নাসিরুল ইসলাম ধর্ম শিক্ষক। নাসিরুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ, বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক রামকৃঞ্চ বিশ্বাস ও স্কুলের আয়া আমেনা স্কুলের।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, যশোর সদরের শ্যামনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাসে করে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রতিমধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের চাকুন্দিয়া নামক স্থানে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি রাস্তা থেকে প্রায় ২০ ফুট নিচে উল্টে পড়ে। এতে বাসের নিচে চাপা পড়ে মেঘলা নামে একজন ছাত্রী নিহত হয়। এছাড়া অন্তত ৩০জন  আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে ডুমুরিয়া উপজেলা কমপে¬ক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের মধ্য থেকে আশঙ্কাজনকদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজ করেছে।
চুকনগর হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ (আইসি) উপ-পরিদর্শক ওমর ফারুক জানান, বাসটিতে ৬০জন শিক্ষার্থী ছিলো।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তায় সংস্কার কাজ চলায় কারণে কার্পেটে গর্ত ছিলো। সেই গর্তে বাসটি আটকে যায়। আটককে যাওয়া বাসটি চালাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনন্ত ২০ ফুট দূরে উল্টে পড়ে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ