শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মিরসরাইয়ে প্রতি বছরই বাড়ছে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে প্রতি বছরই বেড়ে চলছে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা। আবার সনাক্ত করতে না পারার কারণে চিকিৎসার বাহিরে থেকে যাচ্ছে ২০ শতাংশ রোগী। যক্ষ্মা সনাক্তকারী রোগীদের ৯৬ শতাংশ অরোগ্য লাভ করলেও চিকিৎসার বাইরে থাকা রোগীদের কারণে এ রোগের নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। মিরসরাইয়ে যক্ষ্মা ওষুধ প্রতিরোধী বা এমডিআর রোগী আছে ৪ জন। তবে যক্ষ্মা নির্মূলে সমাজে প্রচার প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে বলে মনে করে যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করা কর্মীরা।
২০০৪ সাল থেকে সরকারের থাকে যৌথ উদ্যোগে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক উপজেলায় যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত, চিকিৎসা সেবা নিয়ে কাজ শুরু করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর মিরসরাইয়ে ৩৫ থেকে ৮০ জন রোগী বেশি সনাক্ত করা হচ্ছে এবং তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তথ্য মতে. ২০১৬ সালে মিরসরাইয়ে ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর সভায় ৬৬৫ জন, ২০১৭ সালে ৭০২ জন ও ২০১৮ সালে ৭৭৯ জন যক্ষ্মা রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরজন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি ব্র্যাকে একজন ম্যানেজারের নেতৃত্বে ৭ জন মাঠ কর্মী ও ৩১০ জন সেবিকা (ডটসপ্রোপাইডার) রোগীদের সময় মতো ওষুধ খাওয়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন।
ব্র্যাকের মাঠ কর্মী নুরুল ইসলাম জানান, মিরসরাইয়ে জনসংখ্য অনুপাতে প্রতিবছর ৯৬১ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সেক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ রোগী সনাক্ত করা গেলেও ২০ শতাংশ রোগী সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। সনাক্ত না হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রতি একজন রোগী বছরে ১০ জন রোগী বাড়াতে থাকে। সংক্রামক এ রোগী নিরবে পরিবারের সদস্য কিংবা সমাজের লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আরেক মাঠ কর্মী মোমেনা আক্তার জানান, জীবাণুযুক্ত কফ ও জীবাণুমুক্ত কফ পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা সনাক্ত করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও আবুতোরাব উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীদের বিনামূল্যে কফ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। করেরহাট ইউনিয়নে ব্র্যাকে সেবিকা (ডটসপ্রোপাইডার) হিসেবে কাজ করা রোজিনা আক্তার ও খইয়াছড়া ইউনিয়নে সেবিকা হিসবে কাজ করা দিল আফরোজ জানান, তারা প্রতিদিন সকালে যক্ষ্মা রোগীকে ওষুধ খাওয়ানো কাজ করেন। তাদের এ কাজের জন্যই ব্র্যাক থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা জানান, অনেক রোগী আছে দুয়েক মাস ওষুধ খেয়ে ভালো লাগলে তারা আর ওষুধ খেতে চান না। খইয়াছড়া ইউনিয়নের পোলমোগরা গ্রামের আবুল কাশেম জানান, তিনি দীর্ঘদিন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে ব্র্যাকের মাধ্যমে কফ পরীক্ষা করে ৬ মাস নিয়মিত ওষুধ সেবনের ফলে এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ।
যক্ষ্মা প্রকল্পের ব্র্যাকের ম্যানেজার রওশন আরা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্র্যাকের মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগীদের খুঁজে এনে পরীক্ষা নিরীক্ষার করে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। যক্ষ্মা ভালো হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিয়মিত ওষুধ সেবন। যক্ষ্মা রোগীরা সাধারনত কাশি, জ্বর, খাবারে অরুচি ও ওজন কমে যাওয়ায় ভূগতে থাকেন। রোগ সনাক্ত হওয়ার পর নিয়মিত ৬ মাস ওষুধ খেলে এ রোগ সেরে ওঠে। কিন্তু ওষুধ সেবনে অনিয়মের কারণে অনেক যক্ষ্মা রোগী এমডিআর (যক্ষ্মা ওষুধ প্রতিরোধী) পর্যায়ে চলে যায়। মিরসরাইয়ে এধরণের ৪ জন রোগী রয়েছে। যা প্রতিনিয়ত সমাজরে জন্য আতঙ্কের। এক্ষেত্রে সমাজে সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রক সহকারি হুমায়ন কবির জানান, মিরসরাইয়ে প্রতিবছর সনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ রোগী আরোগ্য লাভ করছে। আমরা চেষ্টা করছি সনাক্ত হওয়াদের শতভাগ আরোগ্য করে তুলতে এবং যক্ষ্মা সনাক্ত না হওয়াদের সনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ