শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শারাপোভা কি ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছেন?

অরণ্য আলভী তন্ময় : রাশিয়ান গ্লামার গার্ল মারিয়া শারাপোভা এখন আর নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেন না। অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনেও সেভাবে পাওয়া যায়নি আগের সেই খেলোয়াড়কে। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২৬টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন মারিয়া শারাপোভা। নামের পাশে রয়েছে পাঁচটি গ্র্যান্ডস্লাম। সেইসঙ্গে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটাও দখল করেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে একুশ সপ্তাহ এক নম্বরে ছিলেন শারাপোভা। বিশ্ব টেনিসের ১০ জন প্রমীলা খেলোয়াড়ের মধ্যে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ডস্লাম জয়ীদের একজন শারাপোভা। রাশিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। সেইসঙ্গে অলিম্পিকেও পদক জয়ের রেকর্ড রয়েছে তার। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে রৌপ্য জিতেছিলেন শারাপোভা। এ তো গেল রাশিয়ান তারকার অর্জনের খেরোখাতা। শারাপোভার নামের পাশে যোগ হয়েছে কলঙ্কের দাগও। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ার কারণে টেনিস থেকেও নির্বাসনে যেতে হয়েছিল সাবেক এই নাম্বার ওয়ান তারকাকে। তবে নিষেধাজ্ঞা থেকে কোর্টেও ফিরে এসেছেন তিনি। কিন্তু ফিরেনি শুধু তার ফর্ম। যে কারণে টেনিস বোদ্ধাদের মনের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠছে, শারাপোভা কী পারবেন আবার স্বরূপে ফিরতে? নাকি ফুরিয়েই যাবেন পাঁচ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক? তবে চলমান অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম তিন ম্যাচে কিন্তু ভিন্ন শারাপোভাকে দেখতে পায় টেনিস ভক্তরা। নতুন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে তো রীতিমতো উড়িয়েই দেন তিনি। রাউন্ড অব বত্রিশেও দেখা যায় তার দাপট। তিন সেটের কঠিন লড়াইয়ে ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টের শেষ ষোলোর টিকিটও নিশ্চিত করেন রুশ সুন্দরী। যেখানে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। সাবেক এক নম্বর খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। ড্যানিশ টেনিস তারকাকে হারানোর পর শারাপোভার ভক্তদের মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে যায় বহুগুণে। এবার বুঝি দীর্ঘদিন পর আবারও গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন শারাপোভা। কিন্তু সেই ইঙ্গিত বেশিদূর এগুলো কই? অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ ষোলো থেকেই যে বিদায় নিলেন মারিয়া শারাপোভা! মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের চতুর্থ রাউন্ডে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অস্ট্রেলিয়ার এ্যাশলে বার্টি কঠিন লড়াইয়ের পর ৪-৬, ৬-১ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন মারিয়া শারাপোভাকে। মারিয়া শারাপোভা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন এক দশকেরও বেশি সময় আগে। মেলবোর্নে সেটাই তার এখন পর্যন্ত শেষ শিরোপা! দীর্ঘ সময় টেনিস কোর্টে আলোচনায় থেকেছেন রাশিয়ান তারকা। কিন্তু এর পরের সময়টাতে মেলবোর্নের শিরোপাটাকে আর উঁচিয়ে ধরতে পারেননি। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর খেলোয়াড় শারাপোভাকে হারিয়ে টানা নয় ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছেন বার্টি। সেইসঙ্গে প্রথম কোন গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিলেন তিনি। ২০০৯ সালের পর প্রথম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে এই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেন এ্যাশলে বার্টি। তার আগে সর্বশেষ এই রেকর্ড গড়েছিলেন জেলেনা ডোকিচ। ডোকিচের পর এ্যাশলে বার্টিই প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই টুর্নামেন্টের শেষ আটে জায়গা করে নেন। টুর্নামেন্টের ১৫তম বাছাই এ্যাশলে বার্টি শারাপোভার বিপক্ষে জিতে তাই দারুণ রোমাঞ্চিত। ম্যাচের শেষে তিনি বলেন, ‘এমন দর্শকদের সামনে সুন্দর এই কোর্টে খেলার চেয়ে ভাল কী আর হতে পারে?’ তবে হেরে গিয়েও বিতর্কে শারাপোভা। চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে হারের পর সাংবাদিক সম্মেলনে অস্বস্তিকর প্রশ্নের সামনে পড়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন রুশ সুন্দরী। রড লেভার এ্যারেনায় দ্বিতীয় সেটের ঠিক পরে শারাপোভা ‘বাথরুম ব্রেক’ নেন এবং কোর্টে ফেরেন ৭ মিনিট পর। যা নিয়ে সরব গোটা টেনিস দুনিয়া।
অতীতেও তিনি বেশ কয়েক বার এই একই কাজ করেছেন। বলা হচ্ছে, তার এতটা সময় কোর্টে না থাকার আসল কারণটা কী? দ্বিতীয় সেটে দারুণভাবে জয়ে ফেরা বার্টির ছন্দ নষ্ট করা। এ জন্য তার যথেচ্ছ সমালোচনাও হলো। সময় নষ্টের জন্য ভৎসিত হন পাঁচবারের গ্র্যান্ডস্লামজয়ী এই টেনিস তারকা। আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান গ্যালারিতের উপস্থিত দশর্কেরা। অনেকে আবার শারাপোভা কোর্টে ফিরতে দেরি করার জন্য তাঁকে বিদ্রুপ করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এটা নিয়ে প্রশ্নও করা হয়। ঠিক তখনই রুশ তারকা মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্নে আপনারা আমার কী উত্তর আশা করেন?’ প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক পুরো ঘটনাই তাকে নতুন করে বলেন। তারপর শারাপোভা বলেন, ‘আপনারা আমাকে যে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলছেন তা খুবই তুচ্ছ প্রশ্ন।’ ঠিক তার পরেই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, চোটের জন্য এখন তো তিনি নিষিদ্ধ মেলডোনিয়াম নিতে পারছেন না। তা হলে কিভাবে নিজের চিকিৎসা করছেন? বোঝাই গেল, শারাপোভাকে বিব্রত করতেই এমন প্রশ্ন। তাতে আরও বেশি বিরক্ত হয়ে পড়েন বিশ্ব টেনিসের সাবেক এই শীর্ষ তারকা। রেগে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কি আর কোনও প্রশ্ন আছে?’ শারাপোভার ‘অখেলোয়াড় সুলভ’ আচরণ নিয়ে সরব অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোতে তার আচরণের নিন্দা করছেন অনেকে। কেউ কেউ তাকে প্রতারকও বলছেন। এদিকে, শারাপোভাকে বিদায় করা এ্যাশলে বার্টি বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন? জানতে চাওয়া হলে অস্ট্রেলিয়ার এই প্রতিভাবান খেলোয়াড় বলেন, ‘ও যা করার তা নিয়মের মধ্যে করেছে। প্রতি ম্যাচে একবার টয়লেট ব্রেক নেওয়া যায়। আমার মনে হয় ও যে লকার রুমে গিয়েছিল সেটা কোর্টের কাছাকাছি নয়। কাছের লকার রুমে যায়নি। এটা নিয়ে আমি কী করতে পারি?’ এই প্রথম মেজর কোন টুর্নামেন্টের শেষ আটে জায়গা করে নেওয়া বার্টি এসময় আরও বলেন, ‘অপেক্ষা করতেই হতো। সেটাই করেছি। জানি ও যেটা করেছে সেটা নিয়মের মধ্যে করেছে। তা ছাড়াও এটা করায় আমার খেলায় কোন ধরনের প্রভাব পড়েনি। ছন্দও নষ্ট হয়নি।’ এই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলেও শারাপাভো অবশ্য ভেঙে পড়ছেন না। তিনি জানালেন এখনও গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বপ্ন দেখেন। তার মতে, ‘যদি আমি এই স্বপ্নটা নাই দেখতাম, তা হলে এত খেটে নিজেকে এই জায়গাটায় আনতে পারতাম না।’ তবে পেশাদারী খেলোয়াড়দের বাজে সময়কে পেছনে ফেলে ঘুড়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। শারাপোভা হয়তো সেটাই করতে পারেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ