বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যুক্তরাজ্য-ইইউ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ব্রেক্সিট ভোট

১৫ জানুয়ারি, দি গার্ডিয়ান : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ছিন্ন করার (ব্রেক্সিট) খসড়া চুক্তি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা।। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হওয়ার কথা যুক্তরাজ্য-ইইউ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে'র সঙ্গে ইইউ’র খসড়া চুক্তি পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে এ নিয়ে চলমান বিতর্কের অবসান হবে। সমঝোতার মধ্য দিয়ে ইইউ ছাড়বে যুক্তরাজ্য। তবে ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। পার্লামেন্টে এই চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রবল আশঙ্কার খবর দিয়েছে তারা। সবমিলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে জোটটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন থেরেসা। সেই খসড়া চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে চুক্তি চূড়ান্ত করা নিয়ে বারবারই হোঁচট খেয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। চুক্তি নিয়ে দ্বিমতের  কারণে পদত্যাগ করেছেন  ব্রেক্সিটবিষয়ক দুইজন মন্ত্রী। অন্য কয়েকজন মন্ত্রীসহ পদত্যাগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। তুমুল বিরোধিতার মধ্যে থেরেসার ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে অনুমোদন না পাওয়ার আশঙ্কাই প্রবল। দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে,  থেরেসা তার নিজ দলের প্রায় একশ এবং সবমিলে দুইশ আইনপ্রণেতার সমর্থন পাচ্ছেন না।

মঙ্গলবারের ভোটাভুটিতে পার্লামেন্ট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলে তিন দিনের মধ্যে বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ পাবেন প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্ট সেটিও প্রত্যাখ্যান করলে হাঁটতে হবে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের পথে। একে নো ডিল ব্রেক্সিট নামে ডাকা হচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর মঙ্গলবার সেই ভোটগ্রহণের প্রাক্কালে এ নিয়ে এমপিদের সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হলে একটি চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের ঝুঁকি তৈরি হবে। এদিকে  নো ডিল ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে থেরেসা মে যেন বিপাকে পড়েন তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ব্রেক্সিট বিরোধীরা। শুধু বিরোধীরাই নয়, নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারাও এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা নো ডিল ব্রেক্সিট প্রশ্নে থেরেসার পাশে নেই। এদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন এরইমধ্যে চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, পার্লামেন্ট চুক্তি পাসে ব্যর্থ হলে তার দল অবিলম্বে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাবে।

চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেবে লেবার পার্টিসহ অন্য বিরোধী দলগুলো। এর পাশাপাশি থেরেসা মে’র নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টিরও প্রায় শখানেক এমপি চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেবেন। ইতোমধ্যেই পার্লামেন্টে নানা প্রস্তাব উত্থাপন ও পাসের মাধ্যমে ব্রেক্সিট কার্যকরে সরকারের ক্ষমতা অনেকটাই সীমিত করে ফেলতে সমর্থ হয়েছেন বিরোধীরা। 

বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপিরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে মঙ্গলবারের ভোটাভুটিতে ‘লজ্জাজনক পরাজয়ের’ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।’ তবে সমালোচকদের প্রতি ফের চুক্তিটি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন থেরেসা মে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার সুরক্ষায় ব্রেক্সিট ইস্যুতে এমপিদের ভূমিকা ইতিহাসে লেখা থাকবে।মঙ্গলবারের এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর। তবে আইনপ্রণেতাদের তুমুল বিরোধিতার মুখে ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী মে। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ড অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত। কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার তাদের নেই। সে কারণে তারা  চুক্তি অনুমোদনের ব্যাপারে কোনও ভোট দিতে পারবে না। কেবল এ সংক্রান্ত বিতর্ক শেষে পর্যালোচনা হাজির করতে পারবে। সে কারণেই নিম্নকক্ষের ভোটাভুটির মধ্য দিয়েই ব্রেক্সিটের খসড়া চুক্তির প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-ও স্বীকার করেছেন, ইইউ’র সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি শতভাগ যথার্থ নয়। তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভুল নয়। কিন্তু যখন ইতিহাস লেখা হবে তখন লোকজন এই পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের দিকে তাকাবে। তখন তারা প্রশ্ন তুলবে, ব্রেক্সিট ইস্যুতে ভোটাভুটির সময়ে আমরা অর্থনীতি ও নিরাপত্তা সুরক্ষা রেখে গিয়েছি কিনা।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ