বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

তেল ছাড়াই চলে যে গাড়ি

জাফর ইকবাল : জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বজুড়েই বাজার পেয়েছে হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক গাড়ি। একটু দেরিতে হলেও দেশের রাস্তায় ঘুরছে হাইব্রিড গাড়ির চাকা। নীতিমালা না থাকায় ইলেকট্রিক গাড়ি চলতে না পারলেও আগ্রহ রয়েছে ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের।
গাড়ির জ্বালানি বলতে আগে তেলকেই বোঝাত। উপমা হিসেবেও ব্যবহার হয় ‘তেল ছাড়া চলে না যে গাড়ি।’ তবে প্রযুক্তির উন্নয়নে বদলে গেছে অনেক কিছুই। ইলেকট্রিক গাড়ি তো সম্পূর্ণই বিনা তেলে চলে। এতে সাধারণ গাড়ির মতো অত বড় ইঞ্জিনও থাকে না। চলে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক চার্জ থেকে। হাইব্রিড গাড়িও নির্দিষ্ট গতির পর তেল ছেড়ে শক্তি নেয় ব্যাটারি থেকে। সাধারণ একটি গাড়ি এক লিটার তেলে ৫ কিলোমিটার চলে। কিন্তু হাইব্রিড গাড়িপ্রতি লিটারে অন্তত ১৫ কিলোমিটার চলতে পারে। এতে জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশও রক্ষা হয়।
সময় হাইব্রিড গাড়ির : দেশে প্রথম হাইব্রিড গাড়ি আমদানি হয় ২০০৪ সালে। তখন ব্র্যান্ড নিউ ‘টয়োটা প্রিয়াস হাইব্রিড’ নিয়ে আসে নাভানা লিমিটেড। এরপর দীর্ঘদিন থমকে ছিল এ গাড়ির বাজার। একাধিক প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিলেও শুল্কহার বেশি থাকায় সুবিধা করতে পারেনি। দৃশ্যপট পাল্টে যায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। শুল্কহার কমানোর পর রিকন্ডিশনন্ড বাজারে দ্রুত দখল নিতে থাকে হাইব্রিড গাড়ি। কিছু প্লাগইন হাইব্রিড গাড়িও শোভা পাচ্ছে শোরুমগুলোতে। বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) চেয়ারম্যান এবং এ এম গ্রুপের সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, দেশে এখন হাইব্রিড এবং প্লাগইন হাইব্রিড গাড়ির চাহিদা তুঙ্গে। আমদানি করা গাড়ির ৩০ ভাগই এখন হাইব্রিড বা প্লাগইন হাইব্রিড।
দেশে যেসব হাইব্রিড গাড়ি আসছে : টয়োটা অ্যাকুয়া, হ্যারিয়ার, এক্সিও, প্রিয়াস, নোয়াহ, আলফার্ড, ভেলফায়ার, এসকোয়ার, কেমরি, সিএইচআর, হোন্ডা ভেজেল, গ্রেস, নিশান এক্সট্রেইল, বিএমডাব্লিউ, রেঞ্জ রোভাব, মার্সিডিস বেঞ্জসহ বেশ কয়েকটি মডেলের হাইব্রিড গাড়ি দেশের বাজারে দেখা যায়। সম্প্রতি বিএমডাব্লিউ বাজারে এনেছে তাদের চতুর্থ প্রজন্মের প্লাগইন হাইব্রিড দুটি গাড়ি।
নীতিমালায় আটকে ইলেকট্রিক গাড়ি : দেশে প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি আসে বছর দুয়েক আগে। পেশায় ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কোটি টাকা খরচায় অনেক শখ করে গাড়িটা আনলেও চালাতে পারেননি দেশের রাস্তায়। রেজিস্ট্রেশনই করাতে পারেননি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) থেকে। কারণ ইলেকট্রিক গাড়ির কোনো ইঞ্জিন নম্বর নেই। ফলে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া কেমন হবে সেটা জানা নেই বিআরটিএর।
বিআরটিএর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, দেশের রাস্তায় এখনো ইলেকট্রিক গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই। সরকার নীতিমালা না করা পর্যন্ত বিআরটিএ এ ধরনের গাড়িকে রাস্তায় চলার অনুমতি দেবে না।
নীতিমালা হলেই আমদানি শুরু : অনেক প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির পুরো প্রস্তুতি শেষ করে রাখলেও নীতিমালার অভাবে করা যাচ্ছে না। গত কয়েক বছর থেকে অনেক দেশে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার বেড়ে গেলেও বাংলাদেশে নীতিমালা না করায় তা আমদানি ও ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে চলতি বছরই এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে-এমনটাই আশা করছে গাড়ি ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির জন্য বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) গত দুই বছর থেকেই বিআরটিএ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি করে আসছে। সংগঠনটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরে দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন করতে অনুরোধ করে। চলতি বছরে সেই দাবি পূরণ হবে এমন আশা নিয়ে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘আমরা বারবার বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি নীতিমালা প্রণয়ণের জন্য। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে নিয়ে বসে আছে।’
কারা আনছে?: দেশে বিএমডাব্লিউ গাড়ির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এক্সিকিউটিভ মোটরসের আফটার সেলস সার্ভিস পরিচালক বজলুল করিম বলেন, ‘আমরা গত দুই বছর থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানি করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইলেকট্রিক গাড়ি সার্ভিসিংয়ে দক্ষ করতে অনেক কর্মীকে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। নাভানা মোটরসও ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। নীতিমালা হলে তারাও দেশে গাড়িগুলো আমদানি করতে চায়। র‌্যাংগস মোটরসসহ অন্যরাও ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শিখতে হবে সার্ভিসিংও : ইলেকট্রিক গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ কিছুটা কঠিন। এ ধরনের গাড়ি অন্য গাড়ির তুলনায় কিছুটা হালকা-পাতলা। ফলে রাস্তায় খানাখন্দ বেশি হলে এর জন্য ঝুঁকি থাকবে। এই বাধাটিও শিগগির কাটিয়ে ওঠে গাড়ি আমদানি শুরু হবে বলে জানান কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে হাইব্রিড এবং ইলেকট্রিক গাড়ির আফটার সেলস সার্ভিসের জন্য তাদের অনেক কর্মী বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
দরদাম : দেশে পুরোপুরি ইলেকট্রিক গাড়ি পাওয়া না গেলেও এখন অনেকটা বাজার ধরেছে হাইব্রিড এবং প্লাগইন হাইব্রিড গাড়ি। দেশে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া হাইব্রিড গাড়ির তালিকায় রয়েছে টয়োটা অ্যাকুয়া হোন্ডা ভেজেল মডেলের গাড়ি। অ্যাকুয়ার দাম শুরু হয়েছে ১১ লাখ টাকা থেকে। আর ভেজেলে ২০১৪ মডেলের দাম ২৯ লাখ ৫০ হাজার থেকে শুরু। নিশান এক্সট্রেইল ২০১৫ মডেলের দাম ৪৩ লাখ থেকে শুরু। টয়োটা হ্যারিয়ার ২০১৫ মডেল ৬৮ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলো রিকন্ডিশন। এ ছাড়া একেবারে ব্র্যান্ড নিউ প্লাগ ইন হাইব্রিড বিএমডাব্লিউ এক্স৫ ২০১৯ মডেল এক কোটি ৬৫ লাখ থেকে, বিএমডাব্লিউ৭৪০ই ২০১৯ মডেলর দুই কোটি ২০ লাখ টাকায়। রেঞ্জ রোভার স্পোর্টস ২০০০ সিসি হাইব্রিড দুই কোটি ২০ লাখ টাকা। মার্সিডিস বেঞ্জ ই৩৫০ই ২০১৯ এক কোটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ