শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ সুজনের

স্টাফ রিপোর্টার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংস্থার দৃষ্টিতে ভোটের আগের রাতে মহাজোট প্রার্থীদের প্রতীকে ভোট দিয়ে বাক্স ভরা, বাহিরে থেকে ব্যালট ভরা বাক্স ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসা, সকালেই ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সুজন আয়োজিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপনা শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে সুজনের প্রধান সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রার্থীই হলফনামায় নিজেদের তথ্য গোপন করেছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ। বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৮১ দশমিক ৮৭ শতাংশ (২৪৪ জন) প্রার্থী ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। মহাজোট থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতদের ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী ও ধনী।
 তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা/থানা ও জেলা কমিটির দলীয় সদস্যরা নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর প্যানেল তৈরি করবেন এবং কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড ওই প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন। কিন্তু এ বিধানটি কোনো দলকেই অনুসরণ করতে দেখা যায়নি।
সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচিত ২৯৮ জনের মধ্যে ৮০ দশমিক ৮৭ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মহোজোটের নির্বাচিতদের মধ্যে ৮১ দশমিক ৯৪ (২৩৬ জন) এবং ঐক্যফ্রন্টের ৫৭ দশমিক ১৪ (৪জন) এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিতদের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ (১ জন) রয়েছেন।
 নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রবেশ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচিতদের ৬১ দশমিক ৭ (১৮২ জন) শতাংশের পেশা ব্যবসা। এরমধ্যে মহাজোট থেকে নির্বাচিতদের ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতদের ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ রয়েছে। আইন পেশায় রয়েছেন ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সংসদে ব্যবসায়ীদের হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 প্রার্থীদের মামলার চিত্র তুলে ধরে সুজন জানিয়েছে, নির্বাচিত ২৯৮ জনের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে বর্তমনে মামলা আছে। অতীতে ছিল ১২২ জনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে উভয় সময়ে মামলা ছিল এমন প্রার্থী ১৬ জন। ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে এমন প্রার্থী ৪ জন। অতীতে ছিল ৩৩ জনের বিরুদ্ধে। নির্বাচিতদের মধ্যে মাত্র ৪০ জন ঋণগ্রহীতা রয়েছে।
 তিনি বলেন, নির্বাচনের পুরো পরিবেশ যদি আমরা বিবেচনায় নেই তাহলে- সেই সময়ের পরিস্থিতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন তথা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অনুকূল মনে করার কোনো অবকাশ নেই। প্রচার প্রচারণার পুরো সময় জুড়েই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাদান, হামলা, গ্রেফতারি-হয়রানি ইত্যাদি কারণে অনেক প্রার্থীর নির্বিঘেœ প্রচার কাজ চলাতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। বাধার কারণে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচারণা চালাতে না পারা, বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকাসহ অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে ১৭ জন নিহত, বেশিরভাগ কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্ট ও তার নেতাকর্মী এবং পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিত দেখা গেছে। আবার বাধা না থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রার্থীকে প্রচারণায় নামতে না যাওয়ার  অভিযোগ আছে। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়মে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী প্রচারণার চিত্র দেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতটা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়মেরও অনেক অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া, ভোটারদের প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া, কোনো কোনো কেন্দ্রে অস্বাভাবিক বেশি বা কম ভোট পড়া, ইভিএম ও অন্য আসনগুলোর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষণীয় ছিল।
তিনি আরও বলেন, এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, এবারের নির্বাচনে মহাজোটের মহাবিজয় হয়েছে এবং মহাবিপর্যয় হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। এর কারণ অনুসন্ধান করলে দুটি বিষয় বেরিয়ে আসবে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নির্বাচনী অনিয়ম। অনিয়মের অভিযোগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা কোনো নিবাচন পর্যবেক্ষণ করি না। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর কাজ করি। নির্বাচন নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে- ইসির দায়িত্ব হবে সেগুলো তদন্ত করা। অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করারও ক্ষমতা আছে কমিশনের।
আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, আমি যেই কেন্দ্রের ভোটার সেখানে দেখেছি নৌকা ও হাতপাখার পোস্টার ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার নেই। নির্বাচনে ভোটরদের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে এটাকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যায় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ