ঢাকা, শুক্রবার 29 March 2024, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

‘সন্তানকে যেন সারা জীবনের সঞ্চয় না দেন কোনও বাবা-মা’, আক্ষেপ প্রাক্তন রেমন্ডকর্তার

এক সময় দেশের ধনীতম ব্যক্তি ছিলেন বিজয়পত সিংহানিয়া। ছবি: এএফপি।

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক:

ছেলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পথে নামছেন রেমন্ড গোষ্ঠীর প্রাক্তন মালিক বিজয়পত সিংহানিয়া।

তিল তিল করে গড়ে তোলা ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন একমাত্র ছেলে গৌতম সিংহানিয়ার হাতে। কিন্তু, সেই ছেলেই যেন বাবা বিজয়পত সিংহানিয়ার দুরবস্থার কারণ হয়ে উঠেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর বাবার কাছ থেকে এক এক করে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিতে শুরু করেন গৌতম। এমনকি, এক সময় দেশের ধনীতম ব্যক্তি বিজয়পতকে উঠতে হয় ভাড়াবাড়িতে। ছেলের হাতে ব্যবসায়িক মালিকানা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে এখন নিজের ‘চূড়ান্ত বোকামি’ বলেই কপাল চাপড়াচ্ছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ বিজয়পত।

বিজয়পতের দাবি, ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল’ করেই তাঁর কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছেন গৌতম। আক্ষেপ করে বিজয়পত এখন বলছেন, “সব বাবা-মাকেই পরামর্শই দেব, জীবিত অবস্থায় সন্তানকে যেন নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় তুলে দেওয়ার মতো বোকামি করবেন না!”

পারিবারের মালিকানাধীন ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির মধ্যে রেমন্ডগোষ্ঠীর নাম একেবারে সামনের সারিতে থাকবে। মূলত পশমের  বস্ত্র ব্যবসায় নাম করলেও সিমেন্ট, ডেয়ারি বা প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ব্যবসা বাড়িয়েছে তারা। আর এ সব গড়ে তোলার শুরুটা করেছিলেন বিজয়পত। বস্ত্র ব্যবসার ছোট সংস্থা থেকে বিশ্বের অন্যতম নামী ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন রেমন্ড-কে। তবে এই নামের পিছনে কালির ছিটে লেগেছে বাবা-ছেলের আইনি লড়াইয়ে।

রেমন্ড গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌতম সিংহানিয়া। ছবি: সংগৃহীত।

বিজয়পতের মতে, তাঁর দুর্দশার শুরুটা হয়েছিল ২০১৫-তে। সে সময় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের ৩৭ শতাংশ মালিকানা ছেলে গৌতমের হাতে তুলে দেন তিনি। কিন্তু, এর পর থেকেই ছেলের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকা মালাবার হিলে সিংহানিয়া পরিবারের ৩৬তলা বহুতলে  ৫,১৮৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ডুপ্লে অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। বিজয়পত সিংহানিয়ার অভিযোগ, অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে তাঁকেও ওই কোটি কোটি টাকার ডুপ্লের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করে গৌতম। এক সময় তাঁর কাছ থেকে ড্রাইভার-সহ গাড়ির সুবিধাও কেড়ে নেওয়া হয়। বিজয়পতকে ভাড়াবাড়িতে গিয়ে উঠতে হয়। এমনকি, গৌতমের পরামর্শেই নাকি বিজয়পতের ‘চেয়ারম্যান এমিরেটাস’ পদ কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁকে রেমন্ডের বোর্ড থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিজয়পতের দাবি, তাঁকে জোর করে অফিস থেকেও বার করে দেওয়া হয়েছিল। এর পর বাবা-ছেলের সম্পর্কে তিক্ততা তুঙ্গে ওঠে। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: বেওয়ারিশ গরু রক্ষায় এ বার ‘গো-কল্যাণ সেস’ চাপালেন যোগী

বিজয়পত জানিয়েছেন, একমাত্র ছেলের সঙ্গে বছর দুয়েক কথা বন্ধ। ছেলের বিরুদ্ধে ফের এক বার নতুন করে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি আদালতের একটি রায়ে আশার আলোর দেখতে পাচ্ছেন। ওই রায়ে বলা হয়েছে, সন্তান যদি বাবা-মায়ের দেখাশোনা না করতে পারেন, তবে সন্তানকে দেওয়া উপহার ফিরিয়ে নিতে পারবেন বাবা-মা।

শুধুমাত্র একটি ডুপ্লে-র জন্য আইনি লড়াই নয়, ৯৩ বছরের পুরনো ব্যবসার সর্বেসর্বার গদি থেকেও ছেলেকে সরাতে রীতিমতো প্রচার শুরু করতে চান বিজয়পত।

তবে বাবার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গৌতম। রেমন্ডের বোর্ড থেকে বাবাকে সরানোকে ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলেছেন তিনি। উল্টে বিজয়পতের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, “বোর্ড সদস্য হিসাবে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে রেমন্ডের সম্পত্তি নিয়ে নিচ্ছিলেন বিজয়পত।” তাঁর কথায়, “ছেলে হিসাবে আমার দায়িত্ব রেমন্ডের চেয়ারম্যানের থেকে আলাদা।”

বাবার বিরুদ্ধে গৌতমের পাল্টা অভিযোগ, “আমি নিজেই তো নির্যাতনের শিকার। আমি আবার কী ভুল করেছি?”

সূত্র:আনন্দবাজার পত্রিকা

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ