বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

তেরখাদার হাড়িখালি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা নানা সমস্যায় জর্জরিত ॥ দেখার কেউ নেই

খুলনা অফিস : বর্ষা মওসুমে পানিতে ডুবে যায় বসত বাড়ি। অনেক সময় ঘরের মধ্যেও পানি উঠে যায়। রান্না-বান্না করা যায় না। খাটের ওপরে বসে পরিবার পরিজন নিয়ে রাত কাটাতে হয়। আর শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস ব্যাগে করে নিয়ে যেতে হয়। কথা গুলো বলছিলেন তেরখাদার হাড়িখালি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা হাজেরা বেগম, শেফালী বিশ্বাস, রিক্তা খাতুন, রত্না বেগম ও মাছুমা বেগমসহ বেশ কয়েকজন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বসত ঘর সারাবছর স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। চালের টিন ভেঙ্গে পড়েছে। পিলার খসে পড়ছে। আর বেড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত বাতাস ঢোকে। ফলে ঘর গুলো বসবাসের একদম অনু-উপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু জলাবদ্ধা আর জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি নয়। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে প্রকল্প ছাড়ছে বেশিরভাগ পরিবার। সরেজমিনে গিয়ে এবং ওই প্রকল্পে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হতদরিদ্র ভূমিহীন-ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের জন্য ২০০২ সালে আশ্রয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে সরকার। ওই প্রকল্পের আওতায় তেরখাদার হাড়িখালিতে একটি প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। ওই প্রকল্পে ২৪টি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। এসব ঘরে ২৪০টি ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন বসবাসের সুবিধায় আছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় টিনের ঘরগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। টিনের বেড়া এবং উপরের চালের অবস্থা জরাজীর্ণ। প্রকল্পটি বর্তমান বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ফলে এসব ইউনিটের বাসিন্দারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বেশিরভাগ ইউনিট খালি হয়ে পড়েছে। আর যারা বসবাস করছেন তারা অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীদের পয়নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয় ২৪টি বাথরুম। এদের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য প্রকল্পের সুবিধা মত স্থানে স্থাপন করা হয় ১১টি টিউবয়েল এবং গোসল, থালা বাসন, কাপড় চোপড় ধোয়া মোছার জন্য ১১টি পুকুর খনন করা হয়। ভূমিহীন পরিবারের সন্তানদের বিকেলে খেলাধুলা চলাফেরা ও চিত্ত বিনোদনের জন্য কয়েকটি মাঠ ও রাখা হয়। অযতœ অবহেলায় এ আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আঠারোবাকী নদী খনন করে প্রকল্পের দক্ষিণ পাশে নির্মিত ঘরের সাথে মিশেই নদীর মাটি ফেলে স্তুপ করা হয়। ফলে ঐসব ঘরে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাটি স্তুপ করে রাখার কারণে ঘরে প্রবেশ এবং বসবাসে দারুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু তাই নয় বৃষ্টির সময় এসব ঘরে হাঁটু পানি জমে যায়। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় দক্ষিণ পাশের ঘরগুলোতে বসবাকারী পরিবারের সদস্যদের। সব মিলিয়ে এখানে বসবাস করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকল্পের বাসিন্দারা আরো জানান, প্রকল্পে ইউনিট গুলো বসবাসের উপযোগী না। প্রকল্প এলাকার আশপাশে কোন হাট-বাজার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। আবার নিরাপত্তার অভাব থাকায় অনেকেই চলে গেছেন। আবার যাদের বাড়ি-ঘর ও জমি থাকতে অনিয়ম করে বরাদ্দ পেয়েছিলেন; তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে এমন ভয়ে পালিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী বলেন, বসবাসের অনুপযোগী ও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকাসহ নানা অসুবিধার কারণে কিছু পরিবার প্রকল্প ছাড়ছে। আবার অনেক পরিবার বাড়ি নির্মাণ করেছে। তবে বর্তমানে বেহাল ইউনিটগুলো মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। জলাবদ্ধা নিসরনে পার্শ্ববর্তী নদী ও খাল খনন করা হচ্ছে। এছাড়া, আশ্রয়ন প্রকল্পের যে সব ইউনিট খালি হয়ে পড়েছে। সেগুলোতে হত-দরিদ্র ভূমিহীন-ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ