বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দেশের মানুষ ১০ বছর পর ভোটধিকার প্রয়োগ করতে উদগ্রীব হয়ে আছে

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে গত বৃহস্পতিবার জরুরি সাংবাদিক  সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমার জীবদ্দশায় এই রকম ঘটনাবহুল নির্বাচন আমি কখনো দেখিনি। নির্বাচনটা এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, মনে হচ্ছে নির্বাচন হচ্ছে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে। এখানে দু’টি রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে তা আমাদের মনে হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে সরকারের সাথে বিরোধী দলের নির্বাচন হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলো যেভাবে নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে তাতে মনে হচ্ছে সরকারি প্রার্থীর সাথে বিরোধী দলের প্রার্থীর নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে সরকারি প্রত্যেক সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুলিশ বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। এতো বেশি লোক গ্রেফতার হচ্ছে। গ্রেফতারের তালিকায় প্রথমে বিএনপির নেতাকর্মী ছিলো তারপর যারা আগামী নির্বাচনে এজেন্ট হবে তাদের এবং সমর্থকদের গ্রেফতার করছে। তারপর এখন প্রার্থীর উপর হামলা করছে। আপনারা দেখেছেন অনেক প্রার্থী সরাসরি আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি, অনেকে বাড়িতে বন্দী অবস্থায় আছেন। আবার অনেক প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে গাড়িতে পেট্রোল বোমা, পাইপগান রেখে নাটক সাজাচ্ছে। অনেকে প্রার্থীর ড্রাইভারকে জাল নোট দিয়ে মামলা সাজাচ্ছে। এসব পেট্রোল বামা, পাইপগান ও জাল নোট সরকারের কাছেই রয়েছে। এখন আবার টাকা ছাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে টাকাতো সরকারের কাছেই রয়েছে। সরকারি লোকজনের টাকা সুইসব্যাংকে রয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংকে তাদের টাকা রয়েছে। বিরোধী দলের কাছে টাকা কোথা থেকে থাকবে। টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে। এই টাকাগুলো কাদের তা সকলেই জানে। আবার বলা হচ্ছে বিরোধী দল ব্যালট পেপার ছাপাচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যালট পেপারতো সরকারি প্রেসে ছাপানো হয়। এটা বিরোধী দলের ছাপানোর কোন সুযোগ নেই। সরকারের এই সব কথায় মনে সন্দেহ জাগে তাদের কোনো পরিকল্পনা আছে। তাদের পরিকল্পনায় আছে ব্যালট পেপার, পেট্রোল বোমা নিয়ে গল্প বানাবে। আমাদের একজন প্রার্থীর বাড়ীতে পেট্রোল বোমা ও পুরাতন পাইপগান রেখে নাটক সাজিয়েছে প্রশাসন। তারা প্রতিদিন গ্রেফতার করছে তাণ্ডব চালাচ্ছে। নির্বাচনের আগে প্রার্থী জেলে গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার পরও প্রার্থী আবার জেলে গেছে, এখনো যাচ্ছে। আদালতের রায় দিয়ে আরো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হচ্ছে। কে কোন প্রার্থী অনেক আসনে আমরা তাও শিউর হতে পারছিনা। এ ধরনের খেলাধুলার মাধ্যমে সরকার যে একটা নির্বাচনকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তা বুঝা যাচ্ছে। আমি এ ধরনের কাজকে নির্বাচনী প্রকল্প বলছি।
তিনি বলেন, গতকাল রাতে আমাদের ২৭ নং ওয়ার্ডের কর্মী সাদ্দামের বাড়িতে গিয়ে এমন তাণ্ডব চালিয়েছে যে তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার কয়েকদিন আগে জেলে যাওয়ার সময় আরেকজনের মা মারা গেছে। আমাদের আরেকজন কর্মী পুলিশের তাড়া খেয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। গতকাল আমাদের ৩/৪ জন থানা সভাপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। তাদের গেইট ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা আজ সুরক্ষা দেয়ার কথা তারাই এখন এসব কাজে ব্যবহার হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নাগরিক সুরক্ষার, আজ নাগরিকরা তাদের শিকার হয়ে যাচ্ছে। তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রতিপক্ষ যদি রাজনৈতিক দল হয় তাহলে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা যায়। প্রতিপক্ষ যখন রাষ্ট্র হয়ে যায় রাষ্ট্র যখন প্রার্থী হয়ে যায় রাষ্ট্র যখন ভোটে জিততে চায় রাষ্ট্র যখন জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনে জিততে চায় তাহলে এই দেশের নাগরিকদের কি করার আছে।  রাষ্ট্রকে মোকাবিলার করার সেই ক্ষমতা কি জনগণের আছে? বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতাকমী, মুক্তিকামী মানুষ। সমস্ত বাংলাদেশের মানুষ ১০ বছর পর তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করতে উদগ্রীব হয়ে আছে।
 তিনি বলেন, প্রায় আড়াই কোটি তরুণ সমাজ ভোট প্রয়োগ করার জন্য অধিক আগ্রহে বসে আছে। যারা ভোটার আছে তারা কি সরকারের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করতে পারবে? আজ যদি আমাদের প্রতিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দল হতো তাহলে আমরা খুশি হতাম, আনন্দিত হতাম। প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা পাচ্ছি রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো যখন প্রতিপক্ষ হয়ে যায় তখন সাধারণ নাগরিকদের কি করার আছে? এটাকে কোনো রাজনৈতিক নির্বাচন বলা যায়না। রাজনৈতিক নির্বাচন হচ্ছে দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়। এটিতো রাজনৈতিক নির্বাচনের মধ্যে নাই। তবে আমি আশাবাদী এই দেশের ১০ কোটি ভোটার তাদের ভোটধিকার প্রয়োগ করবে। তারা তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চাচ্ছে। তারা একটি নির্বাচিত সংসদ ও সরকার চাচ্ছে। তারা সব কিছুকে উপেক্ষা ভোট কেন্দ্রে যাবে। আমি বিশ^াস করি তরুণ সমাজ উদ্যোমী হয়ে ভোট দিবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তারা তাদের গণতন্ত্রের দাবিতে, মানবাধিকারের দাবিতে, আইনের শাসনের দাবিতে, মৌলিক অধিকারের দাবিতে যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই জয়ী হয়েছে। আমি বিশ^াস করি ৩০ তারিখও বাংলাদেশের জনগণ জয়ী হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ