বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী মহাজোটের উন্মুক্ত নীবর ভোট বিপ্লবের প্রত্যাশা ধানের শীষের

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা, এস.এম. মনিরুজ্জামান: জেলার সদর উপজেলাকে বলা যায় জেলার রাজধানী। সেদিক থেকে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লক্ষ আশি হাজার দুইশত পয়ত্রিশ এবং এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লক্ষ অষ্টাশী হাজার পাঁচশত দুই এবং নারী ভোটার এক লক্ষ একানব্বই হাজার সাতশত তেত্রিশ জন। পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার বেশী হওয়ায় নারী ভোটারদের উপরই নির্বভর করছে এ আসনের বিজয়ী ভাগ্য। এ আসনটি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীনিয়ে দলগুলো মধ্যে তেমন দ্বন্ধ ছিল না। ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর মধ্যে দ্বন্ধ না থাকলেও বি.এন.পি’র মধ্যে কিছুটা দ্বন্ধ ছিল। সে দ্বন্ধ কাটিয়ে উঠে খুব সহজেই মনোনয়ন পান সাবেক এম.পি. ও মন্ত্রী মেজর জেনালের (অঃ) মাহমুদুল হাসান। ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর মধ্যে বিএনপি’র পরেই এখানে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান জেলা আমীর আহসান হাবিব মাসুদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় জিতেই গিয়েছিলেন কিন্তু আওয়ামী নীল নক্শায় তাকে ৪৭ হাজার ভোট দিয়ে তাকে দ্বিতীয় অবস্থান দেখানো হয়। জামায়াত সূত্রে জানাযায়, জেলা আমীর আহছান হাবিব মাসুদকেই তারা এ আসনে প্রার্থী হিসেবে পূর্ব প্রস্তুতি রাখলেও কেন্দ্রের গ্রীন সিগনাল না পাওয়ায় তারা মনোনয়ন পত্র ক্রয়ে করেন নি। মহাজোট অনেক চেষ্টা করেও একক প্রার্থী দিতে ব্যার্থ হওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছানোয়ার হোসেন, জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শফিউল্লাহ আল মুনির, এন.পি.পি’র আবু তাহের, বি.এন.এফ এর শামীম আল মামুন (সাবেক জাতীয় পার্টি), ইসলামী আন্দোলনের খন্দকার ছানোয়ার  হোসেন, খেলাফত মজলিশের সৈয়দ খালেদ মোস্তফা, স্বতন্ত্র মুরাদ সিদ্দিকী ও আবুল কাশেম (জাতীয় পার্টি) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
এ আসনটিতে সাংগঠনিক অবস্থানে একক ভাবে কোন দলই মজবুদ ঘাটি তৈরি করতে পারেনি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন দলীয় ঘাটি না হলেও মাহমুদুল হাসানের ঘাটি বলা যায়। এক সময় টাঙ্গাইলের মানুষ উন্নয়নের জন্য তাকে টাঙ্গাইলের চাঁদ উপাধী দিয়ে ছিল। তিনি এ আসনে ৪ বার-২ বার জাতীয় পার্টি থেকে (১৯৮৮ ও ১৯৯১), দুই বার বিএনপি থেকে (১৯৯৬ ফেব্রুয়ারি ও ২০০১) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এ আসনের সকল প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবিন। সর্বশেষ তিনি ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বিজয়ী আবুল কাশেম কে বিল খেলাপি মামলায় হারিয়ে আদালত থেকে এম.পি ঘোষিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন বর্তমান ১১দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি (নৌকা প্রতিক) মো. ছানোয়ার হোসেন। বর্তমান এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন আওয়ামী দলীয় চরিত্রের যে নেতিবাচক দিক রয়েছে তার বাইরের একজন মানুষ তিনি। নিজ গুণে গুনান্বিত এ মানুষটির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের তেমন কোন অভিযোগ নেই। যতটা রয়েছে আওয়ামী লীগের বা আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে মহাজোটের দলগুলোর মধ্যে আর ২জন প্রার্থী থাকায় ছানোয়ার হোসেনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দারিয়েছে ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী মেজর জেনালের (অঃ) মাহমুদুল হাসান। টাঙ্গাইল সদর- ৫ আসনে ৯জন প্রার্থী হলেও দৃশ্যমান রয়েছে ৪জন প্রার্থী। ঐক্যফ্রন্টের মাহমুদুল হাসান (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন (নৌকা), জাতীয় পাটির শফিউল্লাহ আল মুনির (নাঙ্গল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী (মাথাইল)। এই ৪ প্রার্থীর প্রতিক ধানের শীষ, নৌকা, নাঙ্গল ও মাথাইল প্রতিকেরই নির্বাচনী পোষ্টার, ব্যানার, ফেসটুন, মাইকিং, ভোট প্রার্থনার গ্রুপ ও নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা যায়। তবে ভোটের মাঠে নৌকা প্রতিক ও নাঙ্গল প্রতিকের যতটা রবরব প্রচারনা দেখা যায় ততটা দেখা যাচ্ছে না, ধানের শীষ প্রতিকের। সাউদিয়া শপিং সেন্টারের ভোট প্রার্থনায় আসা মহিলাদের একটি গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মাহমুদুল হাসানের ছেলের বৌ। তার কাছে জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, আমরা প্রচারনা কোথাও তেমন বাধার সম্মুখিন হইনি। তবে বিএনপি-জামায়াতের কর্মিদেরকে গ্রেফতার অব্যহত রেখেছে সরকার। যার ফলে নেতা কর্মীরা একটা আতঙ্গের মধ্যে থেকেই প্রচারনা অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচন নিয়ে কথায় হয় মাহমুদুল হাসানের অন্যতম নির্বাচনী নেতা আজগর আলী ও মাজেদুর রহমানের সঙ্গে, তারা জানান মাহমুদুল হাসান ৪ বার সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির আমলে দীর্ঘদিন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে টাঙ্গাইলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন তিনি। পুরো নির্বাচনী এলাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করছেন বহু শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে দলের মধ্যে যেমন, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। ফলে এ বৃদ্ধ বয়সেও দল তাকেই বেছে নিয়েছে। তবে সাধারণ ভোটাদের প্রত্যাশা সদরে বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত না হলেও প্রার্থীর অবস্থান এবং জামায়াতে ইসলামীর কিছু রিজার্ভ ভোট তার জন্য সুফল বয়ে আনবে।
সে রিজার্ভ ভোটগুলোর সুফল পেতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ভিন্ন কৌশলে তাদের ভোটের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে জামায়াতের শহর আমীর অধ্যাপক মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান। তাছাড়া টাঙ্গাইল সদর আসনে বিশাল একটা ভৌগলিক অংশ চরাঞ্চল আর সে চরেই মাহমুদুল হাসানের বাড়ি হওয়ায় ব্যক্তি মাহমুদুল হাসানের জন্য ঐক্যবদ্ধ চরবাসী।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মহাজোটে নৌকা প্রতিকে একজন, লাঙ্গল প্রতিকে একজন, আপেল প্রতিকে একজন মোট ৩জন স্বতন্ত্র, মাথাইল প্রতিকে একজন হওয়ায় সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছে ধানের শীষ। এ অবস্থান শেষ পর্যন্ত থাকলে ধানের শীষের পক্ষে নিরব ভোট বিপ্লব হতে পারে বলে ধানের শীষ কর্মীদের প্রত্যাশা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ