জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫
# প্রাথমিক ও ইবতেদায়ীতে বেড়েছে পাসের হার
সামছুল আরেফীন : একই দিনে প্রকাশিত হলো চারটি পাবলিক পরীক্ষা। পরীক্ষাগুলো হলো জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার বাড়লেও জিপিএ-৫ কমেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৩ জন। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বেড়েছে পাসের হার।
গতকাল সোমবার সকালে চারটি পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পরীক্ষার ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এর পর পৃথক পৃথক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। এ সময় সকল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার বেড়েছে, কমেছে জিপিএ-৫: এবার জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার বেড়েছে। তবে কমেছে জিপি-৫ সংখ্যা। এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৪২ জন। এবার পরীক্ষায় এক লাখ ১৬ হাজার ৮২৭ জন পরীক্ষার্থী বেশি অংশ নিয়েছে। পাস করেছে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন। গত বছর পাস করেছিল ২০ লাখ ১৮ হাজার ২৭১ জন শিক্ষার্থী। এবার ২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থী বেশি পাস করেছে।
এ বছর পাসের হার ৮৫.৮৩ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩.৬৫ শতাংশ। পাসের হার বেড়েছে ২.১৮ শতাংশ।
জেএসসিতে পাসের হার ৮৫.২৮ এবং জেডিসিতে ৮৯.০৪ শতাংশ। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পেয়েছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন, কমেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৩ জন। এছাড়া এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৬৯ জন। গত বছর ছিল ৫ হাজার ২৭৯টি, কমেছে ৫১০টি প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৪০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭৯০ জন, ছাত্রী ৩ লাখ ৮২ হাজার ৭৫০ জন। পাস করেছে ৬ লাখ ৪ হাজার ৪১৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৭ জন, ছাত্রী ৩ লাখ ২২ হাজার ৩৫২ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৮১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
রাজশাহী বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ২১ হাজার ১৭২ জন, ছাত্রী ১ লাখ ২৫ হাজার ৮২১ জন। পাস করেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৫ জন, ছাত্রী ১ লাখ ১৯ হাজার ৬০৪ জন। পাসের হার ৯৪.৫৭ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৯৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ২ লাখ ৯২ হাজার ৮১১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৫ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৭৪ হাজার ১২৬ জন। পাস করেছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭২৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৩ হাজার ৮১৪ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৫০ হাজার ৯১১ জন। পাসের হার ৮৬ শতাংশ ৯৯ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
যশোর বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮২২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৭ জন, ছাত্রী ১ লাখ ২২ হাজার ৭৩৫ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৪ হাজার ১৯২ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৫ হাজার ৩৪৪ জন। পাসের হার ৮৫.৮৩ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ২ লাখ ২ হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৮৯ হাজার ৭৩৫ জন, ছাত্রী ১ লাখ ১২ হাজার ৭২০ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭৩ হাজার ৮২৫ জন, ছাত্রী ৯১ হাজার ২১৩ জন। পাসের হার ৮১.৫২ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বরিশাল বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৫৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫৩ হাজার ৫৫৭ জন, ছাত্রী ৬১ হাজার ৩০০ জন। পাস করেছে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৪৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫১ হাজার ৫৬৬ জন, ছাত্রী ৫৯ হাজার ৯০৩। পাসের হার ৯৭.০৫ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৯৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
সিলেট বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬৩ হাজার ৮৩৬ জন, ছাত্রী ৮৫ হাজার ২৫৮ জন। পাস করেছে ১ লাখ ১৯ হাজার ০০৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫০ হাজার ৭৩৩ জন, ছাত্রী ৬৮ হাজার ২৭৩ জন। পাসের হার ৮০.০৮ শতাংশ, যা গতবার ৮৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে অংশগ্রহণ করে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৫৮ জন, ছাত্রী ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৩১ জন। পাস করেছে ২ লাখ ২ হাজার ৭৫৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৫ হাজার ৯৩৩ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৬ হাজার ৮২৩ জন। পাসের হার ৮১.৬৩ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৮৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
জেডিসিতেও বেড়েছে পাসের হার: মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে অংশগ্রহণ করে ৩ লাখ ৮২ হাজার ২০৮ জন। পাস করেছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩১১ জন। পাসের হার ৮৯.০৪ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
পিইসিতে পাসের হার ৯৭.৫৯ শতাংশ: প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯৭.৫৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৩ জন। এ বছর ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে সব বিষয়ে পাস করেছে ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৪ জন।
গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমার ফিজার সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ লাখ ৮১ হাজার ১৯ জন ছাত্র এবং ১৪ লাখ ৭ হাজার ৮৮৫ জন ছাত্রী। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪১১ জন ছাত্র এবং ২ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ ছাত্রী।
এ বছর ছাত্রদের পাসের হাজার ৯৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৯৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। প্রাথমিক সমাপনীতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
সমাপনীতে সাত বিভাগের মধ্যে ঢাকা শীর্ষে। এ বিভাগে পাসের হার ৯৮.২৫ শতাংশ। ফলাফল ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা সারাদেশে ইংরেজি ভার্সনে ১২ হাজার ২২৬ জন ডিআরভুক্ত হয়ে ১১ হাজার ৮৫০ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৮০৪ জন পাস করে। পাসের হার ৯৯.৬০ শতাংশ। উত্তীর্ণ এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ২২১ জন ছাত্র আর ১ হাজার ৭৩৯ জন ছাত্রী।
ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৭ জন পরীক্ষার মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৭ জন। পাসের ৯৭.৬৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ২৬৪ জন।
পাসের হারের দিক দিয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। মেয়েদের পাসের হার ৯৭.৯১ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯৭.৪৮ শতাংশ।
সর্বোচ্চ পাসের হার বিবেচনায় রাজশাহী শীর্ষে। এ বিভাগে পাসের হার ৯৮.৮৮ শতাংশ। জেলার মধ্যে গোপালগঞ্জ, মেহেরপুর ও নওগাঁ জেলায় শতভাগ পাস করেছে। এছাড়া ১৭৩ টি উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ১৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৬৭ জন। পাসের হার ৯২.৮২ শতাংশ।