বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বির্তকে ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড’

# নির্বাচন কমিশন টোটালি ফেইলর -হাফিজ উদ্দিন
# সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসি দায়িত্ব পালন করছে না -এম সাখাওয়াত
মিয়া হোসেন : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাচ্ছে কি না? তা নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনেই চলছে বির্তক। যে কোনো খেলার সময় মাঠে সকল দলের জন্য যেমন সমান সুযোগ থাকে, তেমনি নির্বাচনেও সকল দলের সমান সুযোগ সৃষ্টিকে ‘লেভেলপ্লেইং ফিল্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে কি হচ্ছে না এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু এখন এ বিষয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনই বির্তকে জড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, নির্বাচনে লেভেলপ্লেইং ফিল্ড বলে কিছু আছে। এ কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত।’ মাহবুব তালুকদারের এ বক্তব্যকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কে এম নূরুল হুদা অসত্য বক্তব্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর সিইসির এ বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ করেছেন মাহবুব তালুকদার। তবে বিশেষজ্ঞগণের পর্যবেক্ষণ ও বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিরোধী প্রার্থীরা মাঠে ক্ষমতাসীন দলের ন্যায় প্রচারণায় সমান সুযোগ পাচ্ছে না। উল্টো তারা মারধরের শিকার হচ্ছেন। ইসিতে নানা অভিযোগ দিচ্ছেন। বিএনপির প্রার্থীদের কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন। একজন গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। আরো বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চলছেই। আর ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা নির্বিঘেœ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতেই প্রমাণিত হয় লেভেলপ্লেইং ফিল্ড নেই।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেলপ্লেইং ফিল্ড নেই। আমি মনে করি না, নির্বাচনে লেভেলপ্লেইং ফিল্ড বলে কিছু আছে। এ কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড আছে আপনি কী তার বিরোধিতা করছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি কখনও তার বক্তব্যের বিরোধিতা করি না। তিনি তার কথা বলেন। আমি প্রয়োজনে আমার ভিন্নমত প্রকাশ করি। আপনারা তো সাংবাদিক আপনারা দেশের সব খবর রাখেন, সবকিছু দেখেন। আপনারা নিজেদের বিবেক কে জিজ্ঞাসা করুন, নির্বাচনে এখন লেভেলপ্লেইং ফিল্ড আছে কিনা, তাহলে উত্তর পেয়ে যাবেন।
গত মঙ্গলবার রাঙামাটিতে এক অনুষ্ঠানে সিইসি কে এম নূরুল হুদা মাহবুব তালুকদারের এ বক্তব্যকে অসত্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, মাহবুব তালুকদার সত্য বলেননি। নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ডের সংজ্ঞা কী? এ কথা বারবার বলা হয় কেন, লেভেল প্লেয়িং ঠিক নেই? কোথায় লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নাই, কিসের ফিল্ড ঠিক নাই?’
সিইসি’র এ বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, সিইসি বলেছেন, নির্বাচনে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে আমি মিথ্যা কথা বলেছি। আমি তাঁর এই বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ, এ কথা বলে তিনি একজন নির্বাচন কমিশনারের অস্তিত্বে আঘাত করেছেন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সিইসিসহ সব নির্বাচন কমিশনার সমান। ইতিপূর্বে সিইসি মহোদয় আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানারূপ বিরূপ উক্তি করেছেন। আমি কখনো তাঁর কথার প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু নির্বাচনে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে আমি মিথ্যা কথা বলেছি, এ কথার প্রতিবাদ না করে পারছি না।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রার্থীদের নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিতে কমিশন ‘ব্যর্থ’ হয়েছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাবচন আয়োজন আমরা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে। তবে এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন সময়ে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে যে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে এটা রাষ্ট্রের অপচয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এম হাফিজউদ্দিন খান আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যে কার্যক্রম দেখিয়েছে, এখনই বলা যায় এই নির্বাচন কমিশন টোটালি ফেইলর। এটা নির্বাচন হওয়ার আগেই বলা যায়। তারা নাকি কিছু দেখে না, তারা ব্লাইন্ড। মাঠে-ঘাটে কী হচ্ছে তা তারা কিছুই দেখেন না।’
হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের ডেকেছিলেন। আমি সেখানে বলেছিলাম-প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তিনি নির্বাচনী বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং ভোট দেয়ার কথা বলে আসছেন। অন্যান্য দলতো রাস্তায় বের হতেই পারে না। তাহলে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে। তখন নির্বাচন কমিশন বলল- শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদের বলার কোনও ক্ষমতা নেই।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশন দায়িত্ব পালন করছেন না উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই যে মারামারি, একজন প্রার্থী গুলীবিদ্ধ, এটা বিবেচ্য না তিনি কোন দলের। তবে নির্বাচন কমিশনের যে দায়িত্ব, সেটি তারা প্রয়োগ করেননি, করবেন বলেও মনে হয় না। নির্বাচন কমিশন একচুয়ালি ডোন্ট নো, হাউ টু হ্যান্ডেল অ্যান্ড হাউ টু গো। মোদ্দা কথা আমরা কী দেখছি, যেটা দেখছি তা ভালো দেখছি না।’
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মুহাম্মদ জমির বলেন, যে দলই জিতুক, নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল। নির্বাচন কমিশনের কিছু দায়িত্ব আছে, তাদের উচিত ছিল সেগুলো পালন করা। কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে পালন করেননি। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল আরও সক্রিয়ভাবে সব কিছু করা। শুধু বললেই হবে না, যেখানেই ঘটনা ঘটুক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ