শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পর্যায়ক্রমে গ্যাসে চলবে খুলনার কলকারখানা পাইপলাইনে গ্যাস যাবে খালিশপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্রে

খুলনা অফিস : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত গ্যাস নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের নবেম্বর মাসে। কিন্তু প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরীর ভেতরের শিল্প কলকারখানায় গ্যাস সংযোগ প্রদানের উদ্যোগ থমকে যায়। দীর্ঘ দুই বছর পর নতুন করে শুরু হয়েছে সেই উদ্যোগ। শুরুতেই নগরীর খালিশপুরে অবস্থিত নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিসিএল) ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস যাবে।

ইতোমধ্যে পাইপলাইন বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইলাইনকে (সিপিপি) কাজ শুরুর অনুমতি দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের তারা গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু করবে। এই কাজ তদারকি করবে পদ্মার এপারের ২১ জেলায় গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা পেট্রোবাংলার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি’। কোম্পানি থেকে জানা গেছে, বর্ষার দুই মাস বাদ দিয়ে পাইপলাইন বসাতে সময় লাগবে কমপক্ষে ১০ মাস। সবার আন্তরিকতা এবং কাজে গতি থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস যাবে খালিশপুরে। সেই সঙ্গে অবসান হবে কয়েক যুগের দীর্ঘ প্রতীক্ষার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পাইপলাইনে গ্যাসের জন্য কয়েক যুগ ধরে আন্দোলন করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর পেট্রোবাংলার অধীনে ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস বিতরণ সেল’ গঠন করা হয়। কাজ শুরু হয় এই অঞ্চলে গ্যাস পৌঁছানোর। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে দু’টি প্রকল্পের আওতায় এক দশক কাজ করার পর ২০১৬ সালের মধ্যে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন লাইন পৌঁছে যায়। এরপরই ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ২০১৬ সালের ৩০ জুন সরকার গ্যাস বিতরণ প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। ফলে কলকারখানাসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপন কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি থেকে জানা গেছে, মূল প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত লাইন বসানোর জন্য পৃথক আরেকটি ছোট প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়নি। তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ এনডব্লিউপিসিএলের কাছ থেকে আগে টাকা নিয়ে (ডিপোজিট ওয়ার্কে) কাজ করার পরামর্শ দেয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়। পরবর্তীতে তারা প্রাক সম্ভাব্যতা জরিপ চালিয়ে আড়ংঘাটা জিটিসিএলের সিটি গেট স্টেশন (সিজিএস) থেকে নিউজপ্রিন্ট মিল ও ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পাইপলাইন বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।

সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নিজাম উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। নগরীর আড়ংঘাটা থেকে গোয়ালখালী সড়কের পাশ দিয়ে কবরখানা অতিক্রম করে মহসীন কলেজের পাশ দিয়ে বিআইডিসি সড়ক হয়ে নিউজপ্রিন্ট মিলে পাইপলাইন যাবে। এই ১১ কিলোমিটার অংশে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন রাস্তা খুঁড়ে বসানো হবে। আর খালিশপুরের মহসীন কলেজের মোড় থেকে বিআইডিসি রোড হয়ে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাবে আরেকটি লাইন। এই আড়াই কিলোমিটার এলাকায় বসবে ২০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন। এজন্যও সড়ক খোঁড়া হবে। এনডব্লিউপিসিএলের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, নিজস্ব খরচে আমরা গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে এবং একবছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম জানান, এলএনজি সরবরাহের ওপর নির্ভর করছে গ্যাসের বিষয়। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে আড়ংঘাটার সিটি গেট স্টেশনে গ্যাসের চাপ ৫০০ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি) ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হলে গ্যাসের চাপ ১০০ তে নেমে আসে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে গ্যাসের স্বাভাবিক চাপ ৩০০ পিএসআই থাকা আবশ্যক। তিনি বলেন, যদি এলএনজি স্বাভাবিক থাকে তাহলে প্রথমে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস যাবে। ২০২০ সালের শুরুতেই গ্যাসে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলবে। পর্যায়ক্রমে এ অঞ্চলের এলএনজি আসলে নিউজপ্রিন্ট মিলের ভেতরে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস দেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ