শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পরের ধনে পোদ্দারি

বর্তমান ভারত সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে গুজরাটের বড়োদায় বল্লভভাই সরদার প্যাটেলের ৬০০ ফুট উঁচু মূর্তি নির্মিত হয়েছে। এটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ৪ বছর ৮ মাস। ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি ভারতীয় রুপি। কে দিয়েছে এ বিপুল অর্থ? উল্লেখ্য, এ অর্থ ভারতের নয়। গত কয়েক বছরে হাজার হাজার কোটি রুপি মোদি বাবু বৃটেন থেকে উন্নয়নের নামে অনুদান নিয়েছেন। বৃটিশ নাগরিকদের করের অর্থ থেকে ভারতীয়দের গরিবি হটানোর জন্য এ অর্থ অনুদান বা ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে দেয়া হয়। এ থেকেই সরাতে হয়েছে মূর্তিনির্মাণের উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ। প্রথমে বৃটেনের পত্রপত্রিকায় খবরটি চাউর হয়। পরে সেখানকার পার্লামেন্টেও এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে। খোদ ভারতেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাধ্য হয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, কোন্্ অর্থ কোথায় এবং কীভাবে ব্যয় হবে তা ভারত কৈফিয়ত দেবে না। তবে প্রশ্ন উঠেছে এভাবে পরের ধনে পোদ্দারি কেন?
ভারতের কোনও কোনও রাজ্যে গরিবি এখনও তীব্রভাবে বিরাজমান। তিনবেলা পেটপুরে খেতে পায় না বহু মানুষ। না খেয়ে ঘুমোতে হয় অগণিত শিশুকে। খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় মায়েদের ৩/৪ কিলোমিটার দূর থেকে। ঘুমোবার জন্য উপযুক্ত বাসস্থানের অভাব। রয়েছে ল্যাট্রিনের শঙ্কট। কোলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে যাতায়াতের সময় সকালবেলা বিহার, উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ের দু’পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে এখনও খোলামাঠে অথবা ঝোপের আড়ালে লাইন ধরে মলত্যাগ করতে দেখা যায়। এমন দৃশ্য সভ্য ভারতের জন্য সুখকর নিশ্চয় নয়। আর এমন লজ্জাকর দৃশ্য যাতে দেখতে না হয় সেজন্যই বৃটিশদের করের অর্থ থেকে ভারত সরকারকে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া হয়েছে হাজার হাজার কোটি পাউন্ড। আর সে ঋণের অর্থের একটা বড় অংশ থেকেই নির্মিত হলো প্যাটেলের দানবীয় মূর্তি। বলা হয়েছে, সরদার প্যাটেলের মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় হয়েছে গুজরাট রাজ্যবাজেটের প্রায় অর্ধেক।
বৃটিশদের দেয়া ক্ষুদ্রঋণের যে অর্থে গুজরাটের বড়োদায় প্যাটেলের মূর্তি নির্মাণ হলো তা দিয়ে গরিবদের কয়েক হাজার ঘর নির্মাণ করা যেতে পারতো। তাদের লাখ লাখ ল্যাট্রিন করে দেয়া সম্ভব হতো। হাজার হাজার দলিত শিশুর পড়ালেখার জন্য স্কুলঘর করে দেয়া যেতো। তুলে দেয়া যেতো তাদের হাতে নতুন বইসহ পড়ালেখার প্রয়োজনীয় উপকরণ। তাদের স্বাস্থ্যসেবারও ব্যবস্থা করা যেতে পারতো। কিন্তু মূর্তিপ্রেমিক গুজরাট সরকার তা না করে প্যাটেলের বিরাটাকার ভাস্কর্য নির্মাণ করে দেশেবিদেশে কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন। আমরাও মোদি সরকারের এহেন পশ্চাৎপদতার প্রশংসা করতে পারছি না। এতে ভারতীয়দের পিছুটান প্রকট হয়েছে। নিন্দিতও হতে হয়েছে যথেষ্ট। ভারতীয়দের বিবেক জাগ্রত হোক। সম্বিত ফিরুক। এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের নিরন্তর।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ