শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নবেম্বরে ২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

স্টাফ রিপোর্টার : সনাক্ত হওয়া পাঁচ হাজারের মধ্যে প্রথম দফায় দুই হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে ফেরত নেবে মিয়ানমার। নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হবে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।  মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গা সদস্যদের বৈঠকমিয়ানমারে ফেরত যেতে দেশটির প্রতিনিধি দলকে ৬টি শর্ত দিয়েছে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।
গতকাল বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ শেষে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থো জানান, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দুই হাজার প্রথম দফায় মিয়ানমারে ফিরবেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে মিয়ানমারের নাগরিক এইসব রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
প্রত্যাবাসন বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মাঠ পর্যায়ের অবস্থা জানতে সকালে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ-মিয়ানমার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রায় ৩০ সদস্যর প্রতিনিধি দল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বে গতকাল বেলা সাড়ে ১১ দিকে তারা কুতুপালং ডি-৫ ক্যাম্পে পৌঁছেন। সেখানে দুই দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। দুই জায়গাতেই দুই শতাধিক রোহিঙ্গা প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। নিজ দেশে ফেরত নিতে মিয়ানমারে যেসব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে সেসব বিষয়েও তাদের অবহিত করা হয়।
এসময় রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মো. আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মো. মাসুদ হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত সোমবার ঢাকায় পৌঁছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকে অংশ নেন তারা। এতে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক।
এ দিকে কুতুপালংয়ে ডি-৫ রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল ডি-৫ ক্যাম্প এলাকায় ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন (আইএসসিজি) এর সম্মেলন কক্ষে প্রায় ৫০জন রোহিঙ্গা সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে ৬টি শর্ত তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এসব দাবির বিষয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব কোনও জবাব দেননি। এর ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
বৈঠকে শর্তগুলো উপস্থাপন করেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম, ছেনুয়ারা বেগমসহ বেশ কয়েকজন। তারা বলেন, ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্তগুলো মেনে নিলে তারা ফিরে যেতে ইচ্ছুক।

রোহিঙ্গাদের ৬টি শর্তের মধ্যে রয়েছে-
জমিজমা ফেরত : মিয়ানমারে তাদের সমস্ত সম্পত্তি ও বসতভিটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সেই সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে। মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগেই এই ব্যবস্থা করতে হবে।
মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদান: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এরফলে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। তাই নাগরিকত্ব ফেরত দিতে হবে।
 রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার: রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।
ক্যাম্পে থাকবেন না রোহিঙ্গারা: বিভিন্ন মাধ্যমে রোহিঙ্গারা খবর পেয়েছেন সেখানে (মিয়ানমারে) তাদেরকে রাখার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তারা ক্যাম্পে থাকতে চান না। তারা চান, মিয়ানমারে তাদের ফেলে আসা বসতভিটায় আবারও নতুন করে বসতি গড়ে তুলতে।
নিরাপত্তা জোরদার: রাখাইন রাজ্যে যেসব জায়গায় রোহিঙ্গাদের বসতি ছিল সেখানে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। যাতে রোহিঙ্গাদের ওপর আর কোনও নির্যাতন চালানো না হয়।
গণমাধ্যমের সামনে সব শর্ত মেনে নেওয়া: রোহিঙ্গারা যেসব শর্তে মিয়ানমারে ফেরত যাবে, সেগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে এসে মেনে নিতে হবে। যাতে পরবর্তীতে দেশটির কর্তৃপক্ষ এসব ওয়াদা ভঙ্গ করতে না পারে।
এ বিষয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ফয়েজু বলেন, বন্দী শিবিরে রোহিঙ্গারা আর থাকতে চায় না। জাতি হিসেবে রোহিঙ্গা স্বীকৃতি, সেফ জোন এবং সকল রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার না পেয়ে কীভাবে আমারা সেদেশে ফেরত যাই?
 রোহিঙ্গাদের দাবিগুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও উত্তর দেননি মিয়ানমরের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় মিন্ট থোয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের দেওয়া দাবিগুলো মিয়ানমার সরকারের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি বাকি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ