শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কালো আইন করে বাকস্বাধীনতা সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর খড়গ চাপিয়ে শেষ রক্ষা হবে না

 

* সরকারের মহালুটের খবর প্রকাশ হওয়ার ভয়ে ডিজিটাল আইন করেছে --- গাজী

* বিনা ভোটের সরকার কালো আইন ছাড়া চলতে পারে না --- শওকত মাহমুদ

স্টাফ রিপোর্টার: সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে আয়ুব খান টিকতে পারে নাই। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের ওপর ১৯৭৪ সালের বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত এদেশের মানুষ মেনে নেইনি। স্বৈরশাসক এরশাদের সময়ের বিধিনিষেধ জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ স্বৈরচারী সরকার অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে একটি নিয়ন্ত্রণমূলক কালো আইন কার্যকর করেছে। দেশী-বিদেশী সকল মহল এ আইন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশী-বিদেশী বুদ্ধিজীবী মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষও মনে করে সরকারের মহালুটের খবর প্রকাশ হওয়ার ভয়ে এ ধরনের কালো আইন করেছে। কেননা বিনা ভোটের সরকার কালো আইন ছাড়া চলতে পারে না। কালো আইন করে বাকস্বাধীনতা, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর খড়গ চাপিয়ে শেষ রক্ষা হবে না।  দেশের সংবিধান বিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করলে ১নবেম্বর তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় অভিমুখে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। 

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত ‘গণতন্ত্র, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ অবস্থান কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত, সাংবাদিক নেতা নুরুল আমিন রোকন, আহমেদ মতিউর রহমান, মোদাব্বের হোসেন, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবুল কালাম মানিক, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম মহসিন, সাজাহান সাজু প্রমুখ। কর্মসূচিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি আমরা অনেকদিন থেকেই করছি। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করছে না। কর্ণপাত করবে কিভাবে? এই সরকার যে বিনাভোটের সরকার। হামলা, খুন, গুম, মামলা এ সরকারের নেশা। তাই তারা ডিজিটাল আইন  তৈরি করেছে। যাতে তাদের খুন, গুম, হামলা প্রকাশ না পায় তার ব্যবস্থা করেছে। সরকার তাদের আমলে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করেনি। সরকারের মহালুটের খবর প্রকাশ হওয়ার ভয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে ভয়ংকর আইন করেছে।

তিনি বলেন, সরকার প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে দেশের সম্মানিত নাগরিকদের গ্রেফতার করে অসম্মান করছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মতো সম্মানিত মানুষকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কোনো নিয়োম-নীতির তোয়াক্কা না করে অন্যায়ভাবে  গ্রেফতার করে হয়রানি করতে জেলে পাঠানো হয়েছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তাকে হেনস্তা করতেও সরকার দ্বিধা করছে না। বর্তমান সরকারের হাত থেকে সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ দেশের সাধারণ মানুষও নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। 

শওকত মাহমুদ বলেন, বিনা ভোটের সরকার কালো আইন ছাড়া চলতে পারে না। তাদের গুম, খুন, হামলা যাতে মিডিয়ায় প্রকাশ না হয় তার জন্য এই ডিজিটাল আইন করেছে। এই ডিজিটাল আইন রেখে দেশে নির্বাচন করলে দেশের জনগণ সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কারণ ডিজিটাল আইন রেখে নির্বাচন করলে তারা ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি সহজে করতে পারবে। আর এটা দেশের জনগণ চায় না। কেননা মত প্রকাশের অধিকার ভূলুন্ঠিত করে কখনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। 

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সিলেটের সমাবেশ অনেক টিভি চ্যানেল লাইভ প্রচার করার প্রস্তুতি নিয়েও করতে পারেনি। এতে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে। সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের মর্যাদা রক্ষায় এখনই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কেননা ইতোপূর্বেও মিডিয়া বিরোধী আইন করে শেষ রক্ষা কোনো জুলুমবাজ সরকারের হয়নি। কালো আইন করে বাকস্বাধীনতা, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর খড়গ চাপিয়ে বর্তমান সরকারেরও শেষ রক্ষা হবে না। 

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাই। সম্প্রতি বিভিন্ন আইন পাস করা হচ্ছে সর্বশেষ পাসকৃত আইনে পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের মূল্য আছে। এ ছাড়া দেশের আর কোনো নাগরিকের মূল্য নেই।

এম আব্দুল্লাহ বলেন, সরকার শেষ সময়ে এসে জনগণের সকল মানবাধিকার হরণ করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে। এ জন্য সরকার সকল পর্যায়ে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে একের পর এক নিয়ন্ত্রণমূলক আইন পাস করছে। জুলুমবাজরা বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। এ স্বৈরাচারী সরকারের সময়ও শেষ হয়ে গেছে। কোনো কিছুতেই আর শেষ রক্ষা হবে না। 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, এই সরকারের গুম, খুন, দুর্নীতি যাতে প্রকাশ না পায় তার জন্য এই আইন তৈরি করেছে। তারা আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের মতপ্রকাশের ক্ষমতা হরণ করেছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলার কারণে একটি টকশো’তে সাধারণ একটি বক্তব্যের জন্য তার নামে মামলা করে তাকে গ্রেফতার করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে, দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, সমাজসেবকদের মান বাঁচাতে, সম্মানিত মানুষদের সম্মান দিতে এবং ভবিষ্যতের সন্তানদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে হলে এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলে তাদের বিদায় করতে হবে।

শহিদুল ইসলাম বলেন, অতীত ইতিহাস বলে সাংবাদিকরা যতবার রাস্তায় নেমে তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছে সব আন্দোলনেই সাংবাদিক সমাজসহ এদেশেরে সাধারণ জনগণ বিজয়ী হয়েছে। আয়ুব খানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের অন্দোলন বিজয় হয়েছে। ’৯০-এ সাংবাদিকদের আন্দোলন বিজয়ী হয়েছে। আজও সাংবাদিকরা তাদের অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমেছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই বিজয় আমাদের হবেই। বিজয় নিয়েই আমরা রাজপথ ছাড়বো। 

কর্মসূচি: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সাংবাদিকরা আগামী ১ নবেম্বর তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাবেন। অবস্থান কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ