শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বৃহত্তম বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সিরাজগঞ্জে

শাহজাহান তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু বহুমুখী যমুনা সেতু পার হয়েই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এক হাজার ৪১ একর জমিতে গড়ে উঠছে এ শিল্পাঞ্চল। শিল্পাঞ্চলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও শ্রমঘন কারখানা গড়ে উঠবে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি কাজের সুযোগ পাবে ৫ লাখের বেশি মানুষ। আর পরোক্ষভাবে আরও বেশি মানুষের কাজের সুযোগ হবে।
 বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে  চূড়ান্ত লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বেজা সূত্রে জানা গেছে, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় কাজ সমাপ্ত করেছে। তারা জমি উন্নয়ন কাজ করছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এরমধ্যে ৮৯টির অনুমোদন দিয়েছে বেজা। যার ২৮ অঞ্চল বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িত হবে। সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজের সুযোগ পাবে ৫ লাখ মানুষ। 
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা এ অর্থনৈতিক অঞ্চল  বিষয়ে বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন এ অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ জেলা প্রশাসনের হাতে ছিল, সেটি সফলভাবে করা হয়েছে। যাদের জমি ছিল সরকারিভাবে তাদের পাওনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আয় বাড়বে, জীবনযাত্রার মান বাড়বে। সূত্র জানায়, শুরুতে এটি সরকারি অঞ্চল হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটি হয়নি। পরবর্তীতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহে বেসরকারিভাবেই এটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বেজা। ১১ শিল্পোদ্যোক্তার সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকে অঞ্চল গড়ে তুলতে গত বছরের জুনে প্রাক-লাইসেন্স দেয় বেজা। যৌথ উদ্যোক্তারা হলেন- নিট এশিয়া, রাইজিং হোল্ডিংস, এসএম ইন্ডাস্ট্রিয়াল হোল্ডিংস, টেক্স টাউন, এহসানুল হাবীব, চেইঞ্জ বাংলাদেশ, মাহমুদ ফ্যাশন, রাতুল নিটওয়ার্স, মো. কামরুজ্জামান, মানামি ফ্যাশনস ও প্যারাগন ফিড।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগকারীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। সেবা পাওয়ার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার থাকবে। গ্যাস, বিদ্যুত্ অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা কারখানা গড়ে তোলার আগেই নিশ্চিত করা হবে।
উদ্যোক্তারা জানান, উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে বলা হয় সিরাজগঞ্জকে। ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় সেখানে গড়ে উঠেছিল নৌ বন্দর ও রেল সংযোগ। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা যে হারে উন্নতির আশা করা হয়েছিল, সেভাবে হয়ে ওঠেনি। উদ্যোক্তারা আশা করছে, প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। এখানে নদীপথ আছে। সড়ক ও রেল সংযোগ রয়েছে। পাশেই রয়েছে রেলস্টেশন। এখানে গ্যাস-বিদ্যুতের সুবিধা আছে। বিনিয়োগ করার জন্য সিরাজগঞ্জ আদর্শ জায়গা।
অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে নিজেদের প্রত্যাশা সম্পর্কে স্থানীয় সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম বলেন, এখানে শিল্পাঞ্চল হলে কারখানায় কাজের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-বাড়ি ভাড়া দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে এ এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, উত্তরবঙ্গের দরিদ্র মানুষের কাজের জন্য ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামে ছুটে চলেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যে অর্থ অর্জন করে তার অধিকাংশ ব্যয় হয়ে যায় বাসা ভাড়া দেওয়া, খাওয়া দাওয়া ও যাতায়াতের জন্য। কঠোর পরিশ্রম করেও জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের সুযোগ পাচ্ছেন না। তাদের কথা চিন্তা করেই শ্রমঘন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে ৫ লাখ মানুষ কাজ করবে। মোট জমির ৬০ শতাংশে কারখানা হবে। অন্যজমিতে পার্ক, বনায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে। শ্রমিকদের জন্য থাকবে অত্যানুধিক ডরমেটরি। এছাড়া মানুষ যাতে বাড়ি থেকে কারখানায় কাজ করতে পারেন এজন্য চালু হবে শাটল ট্রেন, বাস ও নদীতে ট্রলার সার্ভিস।
 বেজা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যোগাযোগের সব মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবেন এ অঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা। এটি পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিকভাবে পরিণত হবে।
এখানকার আনুমানিক ৫০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। এখানকার কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ