শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ম্যাচ শেষে লিটনের আউট নিয়ে যা বললেন মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার : এশিয়া কাপে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জয় করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতিবারই শেষ পর্যন্ত লড়াই করে হেরেছে টাইগাররা। প্রথমবার পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হারার পর গতআসরে ভারতের কাছে হারে ৮ উইকেটে। এই আসরে ফাইনালে ভারতের কাছে হারাটা আরো করুন। শেষ বলে এক রানের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বাংলাদেশ। আর জিততে জিততে হেরে যাওয়ার পর আপসোসটা আরো বেরে যায় ১২১ রানে ওপেনার লিটন দাসের বিতর্কিত আউটটি নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লিটনের আউট নিয়ে ঝড় উঠে। এছাড়া শেষ ওভারে একজন পেসার না রেখে স্পিনার দিয়ে বলা করা নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কবে কথা বলতে হয়েছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি কথা বলেন লিটনের আউট নিয়ে। কথা বলেন শেষ ওভারে রিয়াদকে দিয়ে বল করানো নিয়েও । মাশরাফি বলেন, ‘লিটনের স্টাম্পিং আউট নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে এটা তো আসলে ঠিক করে বলা কঠিন। আমাদের কাছে একসময় মনে হচ্ছিল আউট না। কিন্তু থার্ড আম্পায়ারই ভালো বলতে পারবেন, কারণ সিদ্ধান্তটা তো উনারই ছিল। এটা নিয়ে হয়তো পরে আলোচনা হবে।’ ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে  দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ লিটন দাসের ব্যাটে। কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার দিনে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ফিরতে হয় এই ব্যাটসম্যানকে। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে দুর্দান্ত শুরুর পর হঠাৎ ধস নামা বাংলাদেশের ইনিংসকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু কুলদীপ যাদবের বলে ১২১ রানে বিতর্কিত স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ফিরতে হয় তাকে। থার্ড আম্পায়ারের কাছে যাওয়া সিদ্ধান্তে অনেকবার রিপ্লে  দেখে আউট দেওয়া হয় লিটনকে। কুলদীপের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে লাইন মিস করে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন লিটন। সুযোগটা বেশ ভালো করেই কাজে লাগান উইকেটের পেছনে থাকা মহেন্দ্র সিং ধোনি। তিনি দ্রুত স্টাম্প ভেঙে দিলে আউটের আবেদন করে ভারত। স্বাভাবিকভাবে রিপ্লে দেখলে মনে হবে লাইনের ওপর ছিল তার পায়ের একটা অংশ। তবে সামান্য কোনও অংশ লাইনের ভেতরে ছিল কিনা, বিভিন্নে অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে টিভি আম্পায়ার রড টাকার লিটনের বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। লিটন বেনিফিট অব দ্য ডাউট পেতেই পারতেন। যদিও ভারতের পক্ষে রায় দিয়েও ভুল করেননি আম্পায়ার। তবে তিনি চাইলে লিটনের পক্ষে রায় দিতে পারতেন, তাতে আম্পায়ারের ভুল কিছু হতো না। লিটনের উইকেটটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার ১২১ রানের ইনিংসে ভর দিয়ে ২২২ রান করেও লড়াই করেছে বাংলাদেশ। তবে লিটন আউট না হলে দলীয় স্কোরটা আরও বড় হতেই পারতো।  সংবাদ সম্মেলনে শেষ ওভার নিয়েও কথা বলেন মাশরাফি। শেষ ওভারে জিততে ভারতের দরকার ৬ রান। তিন  পেসারের কারও ওভারই বাকি ছিলনা। মাহমুদউল্লাহ, মিরাজ নাকি সৌম্যর হাতে বল তুলে দেবেন। শুরুতে সৌম্যকে ডাকলেও বিপিএলের অভিজ্ঞতার কারণে মাহমুদউল্লাহর ওপরই আস্থা রাখলেন অধিনায়ক। শেষ ওভারে স্পিন আক্রমণ দেখে বিস্ময় ছড়ালেও অভিজ্ঞতাই মাহমুদউল্লাহকে এগিয়ে রেখেছে। বিপিএলে বেশ কয়েকটি ম্যাচ শেষ ওভারের বোলিংয়ে জিতিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সেই সুখস্মৃতিতেই তার ওপর আস্থা রাখেন মাশরাফি। ফাইনাল হারের পর শেষ ওভারে বোলিং নিয়ে  মাশরাফি বলেন, ‘আমিই বদল করেছি (বোলিং)। কারণ মাহমুদউল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কতটা আত্মবিশ্বাসী আছে। সে বিপিএলে শেষ ওভার বল করে ম্যাচ জিতিয়েছে, এটাই আমার মাথায় কাজ করেছে। সৌম্যর পেস থেকে হয়তো সহজে রান হয়ে  যেত। মাহমুদউল্লাাহর বলে মারতে গিয়ে আউট হওয়ার একটা চান্স থাকতো। এই কারণেই মাহমুদউল্লাহকে এনেছি।’ মাঝে স্পিনারদের দিয়ে বল করিয়ে শেষে একজন পেসারকে দিয়ে বোলিং করানোর সুযোগ তো ছিল। তবে মাশরাফি বলেন,‘স্পিনাররা যেভাবে বোলিং করেছে, তাতে করে প্রত্যেক ওভারে ৭, ৬, ৮ করে হচ্ছিল। অবশ্যই ভালো হতো রুবেল কিংবা মোস্তাফিজকে  শেষ ওভারের জন্য রাখা গেলে। কিন্তু ওই পরিস্থিতি ছিল না। কারণ ৩০ বলে ২৫। এমনকি এক পর্যায়ে ১৭ বলে ১১ দরকার ছিল ওদের। এখান থেকে কিন্তু ওরাই  মোস্তাফিজ-রুবেল) টেনে শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।’ মাহমুদউল্লাহর শেষ বলটি উইকেটে থাকলে হয়তো সুপার ওভারে ম্যাচ যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু শেষ বলটি ইয়র্কার মারতে গিয়ে বলের লাইন হয়ে যায় লেগ স্টাম্পে। আর তাতেই লেগ বাই হয়ে ম্যাচ জেতে ভারত। শেষ ওভারের ব্যাখ্যায় মাশরাফি বলেন,‘ আমাদের পরিকল্পনা ছিল, মারতে গিয়ে যদি উইকেট পড়ে তাহলে সুযোগ থাকবে। বিশেষ করে কুলদীপ মারতে গিয়ে মিস হিট করে, কেদার যাদব যেহেতু ভালো ব্যাটসম্যান, ওর ক্যালকুলেশনও ভালো। পাঁচ নম্বর বলটা সাইড এজ না হয়ে যদি উইকেটে থাকতো, তাহলে অন্যরকম কিছু হতে পারতো। আসলে এসব সময়ে ভাগ্যের সহায়তা দরকার হয়। ফাইনালে সুপার ওভার ছিল। শেষ বলে ডট বা আউট হলেই হতো। রিয়াদ চেষ্টা করেছে, ইয়র্কারই করেছিল। প্যাডে লেগে ১ রান হয়ে গেছে। রিয়াদ দারুণ বল করেছে। ৬ বলই লেগেছে ওদের ৬ রান করতে।’ তামিম-সাকিবকে ছাড়াই এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। হারলেও শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছে। তাই দলকে নিয়ে গর্বিত বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘ছেলেরা যেভাবে খেলছে, গর্ব করাই যায়। তবে আমাদের অনেক কিছু শিখতে হবে। এই ধরনের টুর্নামেন্টে আমরা সংগ্রাম করি।) এত ভালো শুরুর পর ৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সাকিব ও তামিমকে ছাড়া সবাই যেভাবে খেলেছে, সবাই বাহবা পেতেই পারে।’ লো স্কোরিং ম্যাচে বোলারদের নিয়ে কঠিণ ফাইট করেছে বাংলাদেশ। 

ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা জানালেন হৃদয়ের পুরোটা নিংড়েই ফাইনালে খেলতে নেমেছিল তার দল। তিনি জানান, ‘হৃদয়ের পুরোটা দিয়েই খেলেছিলাম। তাই শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছি।’ বোলারদের প্রশংসা করে মাশরাফি বলেন, ‘আগের ম্যাচগুলোতে ২৪০ প্লাস করে জিতলেও এই ম্যাচে ২২২ রান করে বোলাররা ভারতকে ভুগিয়েছে। আর ব্যাটসম্যানদের কাছেও চাওয়া ছিলো স্কোরটা যেন ২৬০ হয়। তবে ছেলেরা এক কথায় ভালো বল করেছে।’ ফাইনালে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ভুল চোখে পড়েছে মাশরাফির। তার মতে, ‘আসলে ব্যাটিংয়ে কিছু ভুল ছিলো।  বোলিংয়েও আমাদের কিছু ভুল ছিলো।’ শেষ ওভারে একবার সৌম্যকে আনতে চেয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু মত পাল্টে পুনরায় আনেন মাহমুদুল্লাহকে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ