শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পহেলা অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী সমাবেশের ঘোষণা

গতকাল শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন শীর্ষক নাগরিক সমাবেশে ঐক্যবদ্ধ হলেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ -সংগ্রাম

# আমরা চাই জাতীয় ঐক্য, চাই অপশাসন দূর হয়ে যাক --বি চৌধুরী
# জনগণের বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারবে না ইনশাল্লাহ  --ড. কামাল হোসেন
# যে কোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে সরকারকে সরাতে হবে --মির্জা ফখরুল
# দেশটা গুম খুন ও বেওয়ারিশ লাশের বাগানে পরিণত হয়েছে --আ স ম রব

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গতকাল শনিবার বিকেলে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ শহীদুল্লাহ এই ঘোষণা দেন।
ঘোষণাপত্রে তিনি বলেন, আমরা এই নাগরিক সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি যে, সরকার আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সরকার সংসদ ভেঙে দেবেন।
এই ঘোষণাপত্রে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে যে, এই গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, শ্রেণী-পেশা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ এর কমিটি গঠন করুন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ গণজাগরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখুন। আগামী ১ অক্টোবর থেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ দেশব্যাপী সভা-সমাবেশে যোগ দেবেন বলেও সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয়।
নাগরিক ঐক্যের ঘোষণা পত্রে বলা হয় যে, ন্যায় বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকায্র্কর করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য দাবি আদায় করা হবে। বক্তারা বলেন, এখন আর পালিয়ে বেড়ানোর সময় নেই। সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর। সময় এসে গেছে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। তারা বলেন, দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সকল রাজনৈতিক দল এখন ঐক্যবদ্ধ। আর এই ঐক্যের মাধ্যমেই ফ্যাস্টি ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের স্বাধীনতায় বলা হয়েছে জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। কিন্তু আজ দেশের মানুষ ভোটাধিকার, মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এসব পুনরুদ্ধার করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিকেল তিনটায় মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশিরউদ্দিন মিলনায়তনে ‘কার্যকর গণতন্ত্র আইনের শাসনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন’ এই শীর্ষক এই নাগরিক সমাবেশ হয়। এই নাগরিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে মহানগর নাট্যমঞ্চের পাশ-পাশে ব্যাপক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিকাল তিনটায় নাগরিক সমাবেশ শুরুর আগেই গোটা মিলনায়তনসহ বাইরের এলাকাটি নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে পুরো নাগরিক সমাবেশে একটি জনসভায় রূপ নেয়। মিলনায়তনে বাইরে লোকজন যাতে বক্তব্য শুনতে পারে সেজন্য পুরো প্রাঙ্গনে মাইক টাঙ্গানো হয়েছে।
‘এক দাবি এক লক্ষ্য দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য’ ‘নবীন-প্রবীণ আয়রে ভাই, দেশ বাঁচাতে ঐক্য চাই’, ‘একাত্তরের চেতনার, জাতীয় ঐক্য আরেক বার’, ‘নব্বইয়ের আকাংখার জাতীয় ঐক্য আরেকবার’ ইত্যাদি শ্লোগানে মুহুর্মুহু করতালিতে মিলনায়তন ছিলো সরব। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে নেতা-কর্মীরা আসে। সমাবেশে পূর্বাহ্নে উদিচীর শিল্পী সুরাইয়া পারভিন ও মায়শা সুলতানার কন্ঠে ‘আমাদের ন্যায্য অধিকার যত, আমাদের ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক গণসঙ্গীত পরিবেশ করেন। ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের ঘোষণা দেন।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা.একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যান্যের মধ্যে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহে চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের সভাপতি জুনায়েদ সাকী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর, শিক্ষাবিদ মোমেনা খাতুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আরো উপস্থিত ছিলেন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রহমান, বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী, ওমর ফারুক, ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মজিবুর রহমান, আহমেদ আবদুল কাদের, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খোন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসেইন কাশেমী, আবদুর রব ইউসুফী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং বিএনপির সাথে আলোচনা করছি। সবাই ইতিবাচক স্বপ্নে জেগে উঠতে চাই। স্বপ্নভঙ্গের অধ্যায় রচনা করতে নয়। তবে যারা দেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেনা, দেশের মানচিত্রকে মানেনা তাদের সাথে আমাদের ঐক্য হবেনা। এসময় তিনি সরকারের বেশ কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, এই সরকারের কাছে জনগণের প্রশ্ন, যে স্বাধীনতা আনতে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে, লক্ষ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে, এর মূল্যবোধ কেনো পদদলিত? দিন-রাত প্রতিটি ঘন্টা নিয়ে কেন মা- বোনেরা আতংকে থাকবে? কেনো পুলিশ, র‌্যাবব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের ছাড় দিবে? কেনো ঘুষ দুর্নীতিকে ‘স্পিড মানি’ বলে সরকারিকরণ করা হলো? সমস্ত জাতির নৈতিকতাবোধকে পদদলিত করা হলো? এই অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? নিরাপদ সড়কের দাবিতে কচি-কিশোরদের রাস্তায় নামতে হবে কেনো? কোটা সংস্কারের পক্ষে মেধাবী ছাত্রদের কেনো আন্দোলন করতে হবে? মেধাবী ছাত্রদের কী অপরাধ? কেনো তাদের গু-া দিয়ে, হাতুড়ি-চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করা হবে? এজন্যই কি স্বাধীনতা? আপনাদের অপরাধের প্রতিবাদে কথা বলার জন্য সভা-সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি কেন নিতে হবে? অথচ আপনারা যখন-তখন, যত্রতত্র সভা সমাবেশ করতে পারেন। কেনো আমার ভোট আমি দিতে পারবো না? ভোটের অধিকারকে কেনো দলীয়করণ করা হলো? সারা পৃথিবীতে ইভিএম পরিত্যক্ত, ইভিএম কেউ চায় না। কেনো আপনাদের সুবিধার জন্য ইভিএম গ্রহণ করতে হবে? কেনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয়করণ করা হলো? কেনো তাদের সবসময় ভয়-ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে কেনো? স্বাধীন দেশের মা-বোনদের ও শিশুদের উপর কেন নির্যাতন হচ্ছে? আমাদের রাষ্ট্র তুমি কোথায়? আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গী আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কোথায়? কেনো গঙ্গার পানি পাবো না? কেনো বন্ধু রাষ্ট্র তিস্তার পানি দিবে না?
সরকারের প্রতি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান। বদরুদ্দোজা বলেন, একটি স্বেচ্ছাচারী, গণতন্ত্রবিরোধী সরকার গত ১০ বছরে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, একই রকম সরকারের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি কি? সংসদ, মন্ত্রিসভা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতেই হবে। না হলে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করা যাবে না। তিনি বলেন, এখন থেকে আমরা সভা-সমাবেশের অনুমতি নেবো না।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো নাগরিকের স্বাধীনভাবে চিকিৎসা করানোর অধিকার আমাদের সংবিধানই দিয়েছে। কিন্তু সরকার গঠিত এই মেডিকেল বোর্ডে কেন চিকিৎসা করাতে হবে। নাগরিকের অনুমতি ছাড়াই কেউই কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে পারে না। এসময় তিনি সকল রাজবন্দীরও মুক্তির দাবি জানান।
নিজের সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আর কয়েকদিন পরেই আমার ৮৮ বছর পূর্ণ হবে। আমি নিজে প্রায়শ অসুস্থ থাকি। কিন্তু এ নিয়ে অনেকে কথা বলেন। তাদেরকে বলতে চাই, যারা আমার বিষয়ে মিথ্যাচার করেন তাদের উপর আল্লাহর গজব পড়বে।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা চাই, যুক্তফ্রন্ট চায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ঐক্য চাই। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করবে না, মানচিত্রে বিশ্বাস করবে না, তাদেরকে কেমন করে বিশ্বাস করবো? যারা আমাদের পতাকাকে শ্রদ্ধা করতে জানবে না অন্তর থেকে, তারা কখনো স্বীকার করবে না আমাদের এই বাংলাদেশকে তাদের সাথে কেমন করে আমি কথা বলব। আমি বলতে চাই, আমরা দেশ চাই, স্বাধীন চাই, মুক্ত গণতন্ত্র চাই। এই সরকারের পতন চাই। আমি সকল রাজবন্দীর মুক্তি চাই। তিনি বলেন, একটি স্বেচ্ছাচারি গণতন্ত্র বিরোধী আরো একটি অনুরূপ সরকার আসবে ভবিষ্যতে তা বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের কোনো সরকার না আসে সেজন্য রক্ষাকবজ তৈরি করতে হবে। সেজন্য রক্ষাকবজ অর্থাৎ ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছি। পিছু হটা যাবে না। আমরা চাই, জাতীয় ঐক্য, আমরা চাই অপশাসন দূর হয়ে যাক। আমরা চাই, গণতন্ত্র ফিরে আসুক।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। জনগণ এতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। মৌলিক বিষয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এখন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে ইনশাল্লাহ।
দেশের সংবিধান প্রণেতা আরো বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলুন, মুক্তির বার্তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করুন। আমি বলতে চাই দৃঢ়তার সাথে অতীতের জনগণের বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাল্লাহ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে এখন যে দুঃশাসন চলছে এই দুঃশাসন আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এর স্বপ্নকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। আমাদের আশা-আকাংখাগুলোকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। জেলখানা থেকে আমাদের কাছে আমাদের নেত্রী খবর পাঠিয়েছেন যেকোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে এই দুঃশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আমার কী হবে না হবে সেটা ভাবার দরকার নেই। এ সময়ে নেতা-কর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ বলে শ্লোগান দেয়।
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আজকে স্যাঁতস্যাঁতে কারাগারে আটক আছেন। তিনি কারাগারে থেকে আমাদের খবর পাঠিয়েছেন- যে কোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে এই সরকারকে সারাতে হবে। আমার কি হবে না হবে জানি না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে যে দুঃশাসন চলছে, তা মানুষের আশা খান খান করে দিয়েছে। একদলীয় শাসনে নির্যাতিত হচ্ছে জনগণ। আর গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে আজকে খালেদা জিয়া কারাগারে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন- দেশকে বাঁচাতে হলে, স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এই সরকারকে সরাতে হলে ঐক্যই হলো একমাত্র বিকল্প।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে যদি সরিয়ে দিতে না পারি এদেশে স্বাধীনতা থাকবে না। আসুন, ন্যূনতম দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করি। তাহলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া আজকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে। আশা করি, আগামী দিনে তাদের নেতৃত্বে (জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নেতারা) এগিয়ে যেতে পারবো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, দেশটা গুম, খুন ও বেওয়ারিশ লাশের বাগানে পরিণত হয়েছে। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। ব্যাংকের টাকা নেই। দেশটা লুটের মালে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্রকে নৈতিকভাবে ধবংস করা হচ্ছে। এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এথেকে উত্তরণে এখন জাতীয় ঐক্য দরকার, নির্দলীয় সরকার দরকার। সরকারকে বলছি কোনো রাজবন্দীকে কারাগারে রাখতে পারবেন না। সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। এই মুহূর্তে দরকার জাতীয় ঐক্যের সরকার। অবশ্যই আপনাদের পদত্যাগ করতে হবে।
তত্ত্বাধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, দুর্নীতি দু:শাসন থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যেও কোনো বিকল্প নেই। এই সরকার সমগ্র জাতিকে অসহায় করে রেখেছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে অর্থবহ করতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তবে সরকার যেভাবে এগুচ্ছে তাতে জনগণকে ভোট দিতেও হবেনা আবার ভোট চুরিও করতে হবেনা। ভোট গণনারও প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন সাক্ষী গোপালে পরিণত হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার দেশের তিনটি স্তম্ভ ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। এই সংসদ অবৈধ। এদেও বিুরদ্ধে শুধু কথা বলে লাভ হবেনা। আন্দোলনের মাধ্যমে এদেও পতন ঘটাতে হবে। তিনি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হ্বার আহ্বান জানান।
সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যে বা যারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের প্রতি অভিনন্দন। বিএনপির তরফ থেকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, এই স্বৈরচারী সরকারকে বিদায় করা যাবে না জাতীয় ঐক্য ছাড়া। তাই আজকের এই দিন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য মাইলফলক, নতুন যাত্রা। আশা করি, এই ঐক্য আরও সুসংঘটিত হবে, দেশের মানুষকে এই স্বৈরচারী সরকারকে বিদায় করতে ঐক্যবদ্ধ করবে। তবে জাতীয় ঐক্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা বলছি ওই লুটেরা ভোট চোরদের বাদ দিয়ে বাকী যত মানুষ আছেন সকলে এক বাক্যের আওয়াজ তুলছি- আমরা স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচন দিতে হবে। এজন্য আমাদের যুক্তফ্রন্ট কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা এবং ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া মিলে ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছি। যার মধ্যে আপনাদের দাবি আছে। এখানে বিএনপির নেতারা আছে। আমি দেখেছি শেষ পর্যন্ত তারা ১৫ দফা দাবির কথা বলেছেন যেটা আমাদের দাবির সাথে প্রায় মিলে যায়। তাই এই ঐক্য তো হয়েই গেছে। লাখো কোটি জনতা এই ঐক্য চায়। কারো ক্ষমতা নাই এই ঐক্য, এই ঐক্যের শক্তি, এই বিজয়কে রুখতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলছি ধান্ধাবাজী ছাড়েন। বলছেন আমরা একটা নির্বাচনকালীন সরকার করবো যাতে কেবলমাত্র সংসদে যারা প্রতিনিধি তারা থাকবেন। আমরা পরিষ্কার ঘোষণা করতে চাই, ওই শন মার্কা সংসদ দিয়ে কোনো সরকার গঠিত হবে না। যারা সরকারে আসবেন আমাদের দাবি তারা কোনো নির্বাচন করতে পারবেন না। একসাথে দুইটা সংসদ চলবে না, এটা বাতিল করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনের সময়ে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়ের করতে হবে। না দিলে তার জন্য ঢাকাসহ সারা দেশ সয়লাব করে দিতে হবে। আমি সকলতে জানাতে চাই, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মানুষ ঘরে ছিলো। আমরা যাই কিছু চেষ্টা করেছি মানুষ রাস্তায় নামেনি। আর এবার যখন নির্বাচন হবে তখন ঘরের মানুষ রাস্তায় আসবে। দুর্বৃত্তরা ঘরের ঢুকে যাবে- সেই কাজ করতে হবে। সেজন্য এই বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান।
মান্না বলেন, আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। উনাদের(বিএনপি) কর্মসূচি আমরা দেখিছি। এই কর্মসূচি মিলে আমরা যৌথভাবে সারাদেশের মানুষের সামনে আসবো। দেশের মানুষের কাছে আমাদের একটাই বক্তব্য ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আমরা এক হয়েছি।
একাত্তরের পর থেকে সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামো কাজে লাগিয়ে স্বৈরতন্ত্র কার্যকর ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতা ও গণসংহতি আন্দোলেনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, দেশে ব্যক্তির নয়, ব্যবস্থাগত স্বৈরতন্ত্র চলছে। জোনায়েদ সাকি বলেন, ড. কামালের আমন্ত্রণে সমাবেশে দেখতে ও বুঝতে এসেছি। জোটের পক্ষ থেকে নয়, দলের পক্ষ থেকে সমাবেশে অংশ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যেভাবে কথা বলছে, এই ভাষা সংঘাতের ভাষা। সরকার যদি সমঝোতা না করে বুঝতে হবে তারা জনগণকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাহলে জনগণই আন্দোলনের মাধ্যমে সমাধান করবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, এই সরকার আবার ক্ষমতায় বসলে দেশে বিরোধী রাজনীতি নিঃশেষ হয়ে যাবে। এই সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা দরকার। সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো দরকার।’ তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হতে পারবে না। জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের বাদ দিয়ে সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য করতে হবে। নাগরিক সমাবেশে আসা বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জোনায়েদ সাকিই অংশ নেন। প্রায় মিনিট খানেক বক্তব্য দিয়ে তিনি সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ