শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দর্শনা হল্টস্টেশনে সরকার প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব পেলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

 

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা: দেশের প্রথম স্টেশন ১৮৬২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় চুয়াডাঙ্গার দর্শনায়। সে সময় ঢাকা-কোলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল চালু ছিলো। তৎকালীন বৃটিশ শাসনামলে এ এলাকার মানুষকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রেলপথে যাতায়াতের জন্য ভারতের ভেতর দিয়ে বেনাপোল-যশোর হয়ে খুলনায় প্রবেশ করতে হতো। ওই সময় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো রেলপথ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এ অঞ্চলের মানুষের সাথে খুলনার যোগাযোগ একেবারেই ভেঙে পড়ে। খুলনার সাথে যোগোযোগের লক্ষ্যেই ১৯৫২ সালে নির্মাণ করা হয় দর্শনা হল্ট। দর্শনা হল্ট স্টেশন প্রতিষ্ঠার পর এক সময়ের দর্শনা গোয়ালাচাঁদপুর পরিচিতি পেতে থাকে হল্টচাঁদপুরে। 

দর্শনা হল্টস্টেশনের বয়স এখন ৬৬ বছর পেরিয়ে গেছে। সরকার এ স্টেশন থেকে প্রতিবছর যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে থাকে তা অতিক্রম করে সরকারের খাতায় জমা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব। প্রতিষ্ঠালগ্নে স্টেশনে ২-১টি ট্রেন চলাচল করতো। প্রতিষ্ঠাকালে টিনের ছাপড়ায় স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ১৯৬৯ সালের দিকে করা হয় পাকাকরণ। কালের আবর্তে পরির্বুন হয়েছে অনেক কিছুই। বেড়েছে জনসংখ্যা। সেই সাথে বেড়েছে ট্রেনযাত্রী। কিন্তু দর্শনা হল্টস্টেশন রয়ে গেছে সেকেলের অবস্থায়। উন্নয়ন করা হয়নি কোনো অবকাঠামো। পাকাকরণকালে এ স্টেশনে ২শ যাত্রীর জন্য নির্মাণ করা হয় একটি শেড। র্বুমানে এ রুটে চলছে প্রচুর ট্রেন। এর মধ্যে এ স্টেশনে হল্ট করে থাকে ১৬ টি ট্রেন। দুটি দুরপাল¬¬ার ঢাকা-খুলনার ট্রেনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১০টি আন্তঃনগর ও ৬টি লোকাল ট্রেন চলাচল করছে। যে কারণে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার ট্রেনযাত্রীর সমাগম ঘটে এ স্টেশনে। অথচ স্টেশনের সমস্যার যেনো অন্তঃ নেই। মাত্র ২শ ধারণ ক্ষমতা টিন শেডে হাজার হাজার অপেক্ষামান যাত্রীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, বাতির ব্যবস্থা না থাকায় রাতে ঘুটঘুটে আধারে নিরাপত্তাহীনতায় ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে হয় যাত্রীদের। স্টেশনে ভিআইপি যাত্রীদের জন্য শৌচাগার থাকলেও এখানে ভিআইপি টিকিট বিক্রির অনুমোদন নেই। যে কারণে শৌচাগার তালাবদ্ধ থাকে। সাধারণ যাত্রীদের জন্য কোনো প্রকার শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। তবে সম্প্রতি দর্শনা পৌর কর্তৃপক্ষ একটি শৌচাগার নির্মাণ করেছে। যা পৌর কর্তৃপক্ষ বাৎসরিক ইজারার মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকে। স্টেশনের প্লাটফর্ম বৃদ্ধি করা হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়নি। স্টেশনে জিআরপি ফাঁড়ি থাকলেও নিরস্ত্র জিআরপি সদস্য সংখ্যা অপ্রতুল্য। 

সন্ধ্যার পরপরই জিআরপি সদস্যরা যার যার মতো ঘুমিয়ে পড়ায় নিরাপত্তায় বিঘœ ঘটে। রাতে স্টেশন চত্বরে কোনো টহল জিআরপি দেখা যায় না। স্টেশন এলাকায় ট্রেনের অপেক্ষামান যাত্রীসাধারণকে রাতে স্টেশনে নিরাপত্তাহীনতায় দাঁড়িয়ে কিংবা বসে সময় কাটাতে হয়। স্টেশনে কোনো প্রকার বাউন্ডারী প্রাচীর, বিদ্যুত বাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে অবস্থার। প্রায়ই ঘটে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রধান সড়ক বয়ে গেলেও এখানে নেই ওভারব্রিজ। হুইল গেটের ব্যবস্থা থাকলেও বেশীর ভাগ সময় থাকে অকোজো। এ কারণে প্রায় সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়তে হয় পথ চলাচলকারীদের। খুলনা থেকে দর্শনায় প্রবেশের সময় কোনপ্রকার নাম ফলক না থাকায় যাত্রীদের স্থান চিনতে চরম দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয়। দর্শনা হল্টস্টেশনের কোনো স্থানেই নেই স্টেশনের নামের সাইনবোর্ড। সিংগেল লাইনের স্টেশনটি ডাবল করণের দাবী বহুদিনের। স্টেশনে লোকবল সঙ্কট, বিশুদ্ধ পানিসহ সমস্যার যেন অন্তঃনেই। অথচ দর্শনা হল্টস্টেশন থেকে সরকার প্রতিবছর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব পাচ্ছে। 

সরকারের খাতায় প্রতিবছর প্রচুর রাজস্ব জমা পড়লেও উন্নয়নের দিকে যেনো কোন প্রকার খেয়াল নেই সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের। ট্রেনযাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের। স্টেশনের অবকাঠামো প্রসারিত করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী দাবী করে বলেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম স্টেশন দর্শনা হল্ট। এ স্টেশনটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিকতা প্রয়োজন।

যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করা হলেও হয়তো সরকার এখনকার তুলনায় আরও বেশী রাজস্ব পেতে পারে। তাই জনসাধারণের সুবিধা ও সরকারের রাজস্বের কথা ভেবে এখনই সকল সমস্যা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে রেলওয়ে বিভাগের।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ