বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ধার্য হতে পারে আজ

স্টাফ রিপোর্টার : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ধার্য হতে পারে আজ মঙ্গলবার । গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুনানির পর আসামীপক্ষ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুরু করে। আজ মঙ্গলবার আসামীপক্ষেরও যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এরপরই এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। এদিকে, রায়ের আগে জামিনে থাকা আট আসামীর জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়েও আজ মঙ্গলবার আদেশ দেবেন বিচারক।
রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের পাশে গণপূর্তের একটি পুরনো ভবনে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর কার্যক্রম চলছে। গতকাল সোমবার দুপুর সোয়া ১২টায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা সোয়া ২টার দিকে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত  ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি করেন।
গতকাল দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার কার্যক্রমের শুরুতে মামলার প্রধান প্রসিকিউটর (পিপি) সৈয়দ রেজাউর রহমান তার অসমাপ্ত আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দিন এ মামলার কার্যক্রম চলছে। এখন এ মামলার কার্যক্রম একেবারেই শেষ প্রান্তে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছে ২২৫ জন সাক্ষীর মাধ্যমে এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন। তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও বিভিন্ন আলামত আদালতে উপস্থাপন ও আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে।
উচ্চ আদালতের বিভিন্ন মামলার উদাহরণ টেনে আইনি ব্যাখ্যা দেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান পিপি সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আদালতের অনুমতি না নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা অবিস্ফোরিত গ্রেনেড ও আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। তারপরও রাষ্ট্রপক্ষ অনেক আলামত আদালতে উপস্থাপন করেছে। ন্যায়-বিচারের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ অনেক তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে আদালতকে।’ তারপরও মামলা চলার দীর্ঘ সময়ে ভুল-ত্রুটির জন্য আদালতসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় পরে জামিনে থাকা আট আসামীর জামিন বাতিলের আবেদন করেন পিপি।
রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এএসএম শাহজাহান ও মাওলানা আবদুস সালামসহ কয়েকজনের পক্ষে চূড়ান্ত আইনি ব্যাখ্যা দেন অ্যাডভোকেট মাইন উদ্দিন মিয়া। আজ মঙ্গলবার বাবরের আইনজীবী এএসএম শাহজাহান তার অসমাপ্ত আইনি ব্যাখ্যা দেবেন আদালতে। তারপরই এ আদালতের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন জামিনে থাকা আসামীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। একইসঙ্গে রায়ের দিনও ধার্য করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষে সৈয়দ রেজাউর রহমানকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজলসহ বেশ ক’জন আইনজীবী। অন্যদিকে, আসামীপক্ষের আইনজীবী এএসএম শাহজাহানকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ও মো. জিয়াউদ্দিন জিয়া প্রমুখ।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী এএসএম শাহজাহান আদালতকে বলেন, ‘এ মামলার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তদন্ত। আবদুল কাহার আকন্দ দীর্ঘদিন পর আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের কাহিনি রচনা করেছেন। কারণ, ফজলুল কবির ২০০৮ সালে যখন এ মামলার তদন্ত রিপোর্ট দেন, তখন বিএনপি বা লুৎফুজ্জামান বাবর ক্ষমতায় ছিলেন না। ওই তদন্ত প্রতিবেদনেও বাবরের নাম ছিল না।’
আদালত সূত্র জানায়, মামলার ৪৯ আসামীর মধ্যে জামিনে রয়েছেন ৮ জন। তারা হচ্ছেন, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, সাবেক তিন আইজিপি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.) রুহুল আমিন, এএসপি (অব.) আবদুর রশিদ ও এএসপি (অব.) মুন্সি আতিকুর রহমান। 
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট মতিঝিল থানার এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-৯৭) দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দু’টি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। ওই বছরই মামলা দু’টির কার্যক্রম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ স্থানান্তর করা হয়। এ ট্রাইব্যুনালে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা),ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর ২০০৯ সালের ২৫ জুন এ মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। ওই বছরের ৩ আগস্ট আদালত অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩০জনকে অভিযুক্ত করে ২০১১ সালের ২ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন আবদুল কাহার আকন্দ। অধিকতর তদন্তে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) পাশাপাশি হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ