শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এ কেমন ভাই আর স্ত্রী দেবরকে দিয়ে স্বামীকে খুন!

স্টাফ রিপোর্টার : ফেনী যাওয়ার পথে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকায় আসেন মনিরুজ্জামান মনির (৩৫)। ঢাকায় ছোট ভাই আজমল হক ওরফে মিন্টুর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। রাত ১০টার দিকে স্ত্রী কাজল রেখার (৩০) সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাও বলেন তিনি। এরপর থেকে মনিরের খোঁজ মিলছিল না। ভাইয়ের সন্ধানে থানায় যোগাযোগও করেন আজমল। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে মনিরের গলাকাটা লাশ খুঁজে পান আজমল।
৮ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের মেরুল হিন্দুপাড়া শ্রীরাম মঙ্গলের বাড়ির পাশের খেলার মাঠ থেকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে মনিরের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দিনাজপুরে গ্রামের বাড়িতে আহাজারি শুরু করেন মনিরের স্ত্রী কাজল রেখা। অন্যদিকে, ঢাকায় বড় ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যুতে আজমল নিজেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
রহস্যজনক মৃত্যুর পর কাজল রেখা আর আজমলের আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমে আসে মনিরের পরিবারে। কিন্তু ভাবি ও দেবরের আহাজারি ছিল ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল। এই কৌশলের আসল কারণ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ঘাটন করে বাড্ডা থানার পুলিশ। কারণ জানার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাজল রেখাকে ঢাকায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বামীকে হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন কাজল। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেন তিনি।
রংমিস্ত্রির কাজ করতেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার মনিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির। স্ত্রী কাজল রেখার সঙ্গে সংসারে রয়েছে দুই ছেলে। সংসারে সচ্ছলতার জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে কাজ করতেন ফেনীর খয়রা এলাকায়। কিন্তু গ্রাম থেকে দূরে থাকাটাই কাল হয়ে এল মনিরের জীবনে।
জবানবন্দীতে কাজল বলেন, বিয়ের পর মনিরের ভাই আজমল দিনাজপুরে তাঁদের বাসায় ছিলেন। সেখানে আজমল অসুস্থ হয়ে যান। এটা আট-নয় বছর আগের ঘটনা। সেবা করার সময় দেবর আজমলের সঙ্গে কাজলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। এই ঘনিষ্ঠতা থেকে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর আজমল চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। মনিরও চাকরি করতে ফেনী চলে যান। এর মধ্যে আজমলের সঙ্গে কাজলের প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। কিছুদিন পর কাজলকে বিয়ে করতে চান আজমল। মনির বেঁচে থাকলে এই বিয়ে সম্ভব নয় বলে জানান কাজল। তবু কাজলকে কয়েকবার বিয়ে করার কথা বলেন আজমল। মনির বেঁচে থাকলে এই বিয়ে সম্ভব নয়-আবারও জানান কাজল। এরপর আপন ভাই মনিরকে কীভাবে হত্যা করা যায়, সে কথা ভাবিকে বলেন আজমল।
কোরবানি ঈদের আগে এই হত্যার পরিকল্পনার কথা জানালে কাজল রাজি হন। তখন থেকেই মনিরকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেন তাঁরা। এ কথা জানিয়ে জবানবন্দীতে কাজল বলেন, আজমল তাঁর ভাইকে হত্যার জন্য এক লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ঠিক করেন। অগ্রিম ৩০ হাজার টাকাও দেন। পরিকল্পনা ছিল, ঈদের সময় দিনাজপুরে আসার পথে ঢাকায় মনিরকে হত্যা করা হবে। তখন কাজটি করা সম্ভব হয়নি। ঈদের সময় আজমল ফোন করেন মনিরকে। ঢাকায় নিজের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার কথা বলেন আজমল। ঢাকায় আজমলের বাসায় যাওয়ার কথা বলে দিনাজপুরে থেকে ৭ সেপ্টেম্বর রওনা দেন মনির। রাত ১০টার দিকে গ্রামীণফোনের সিমে স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন। অন্যদিকে, আরেকটি সিম দিয়ে দেবরের সঙ্গে কথা বলেন কাজল। আজমল ফোন করে তাঁর ভাইকে মেরে ফেলার কথা জানান কাজলকে। এরপর কাজল গ্রামীণফোনের সিমটি ফেলে দেন। কান্নাকাটি করে কাজল বাড়ির সবাইকে বলেন, ২০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন মনির। ছিনতাইকারীদের হাতে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে জানান কাজল। যদিও মনির মোটা অঙ্কের টাকা সঙ্গে নেননি।
এ ঘটনায় আজমল ও কাজল ছাড়াও মনির হত্যার ভাড়াটে খুনি আবদুল মান্নান, সোহাগ ওরফে শাওন ও ফাহিম নামের আরও তিনজনকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশের বাড্ডা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আশরাফুল করিম। তিনি বলেন, মনিরকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত দুটি ছুরি ও মনিরের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন সেটটি উদ্ধার করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ