বটিয়াঘাটায় পিতাকে পেটালো পুলিশ পুত্র!
খুলনা অফিস : কূটকৌশলে পিতার বসতভিটা লিখে নিয়েছে শ্বশুরের নামে। ছয় বছর আগে একমাত্র কৃষি জমি টুকু বিক্রি করে পুলিশে চাকুরি হয়েছিল এ পুত্রের। মঙ্গলবার সকালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিতাকে বেধড়ক মারপিট করেছেন পুলিশ পুত্র সোহেল শিকদার (কং নং-এসএফ ৬০৯৪)। জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার হাসিমপুর গ্রামের হতদরিদ্র মো. জলিল শিকদার এ হতভাগ্য পিতা। দিনভর থানায় মামলা দায়ের ও কেএমপি সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিলে ব্যর্থ হয়ে সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাবে আসেন তিনি। সেখান থেকে ঠিকানা নিয়ে সময়ের খবর কার্যালয়ে এসে উপরোক্ত অভিযোগ করলেন দিনমজুর জলিল শিকদার।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জুলাই ষড়যন্ত্র করে জলিল শিকদারের বটিয়াঘাটার হাসিমপুর মৌজার প্রায় ১৮ কাঠা জমির বসতভিটা সুকৌশলে আমমোক্তারনামা লিখে নেয় সোহেল শিকদার তার শ্বশুর নূর ইসলাম শেখের নামে। পরে জানতে পেরে ঘটনার প্রতিবাদ করলে এবং ‘পাওয়ার অব এ্যাটর্নি’ ফেরত চাইলে পিতা জলিল শিকদার ও তার ভাইদের জীবনে শেষ করে দেবার হুমকি দেন পুলিশ কনস্টেবল সোহেল শিকদার (২৫)। এ ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানা গত ৩০ আগস্ট সাধারণ ডায়েরি (নং-১৪৪৩) করেন জলিল শিকদার।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিতা জলিল শিকদারকে বেধড়ক মারপিট করে পুলিশ সদস্য সোহেল শিকদার। রক্তাক্ত অবস্থায় বাবাকে উদ্ধার করতে এলে বড় ভাই সোহাগ শিকদার (৩৩) ও ছোট ভাই জুয়েল শিকদারকে (১৭) ব্যাপক মারপিট করেন তিনি। এ ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানায় মামলা করতে গেলেও অভিযোগ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ আহতদের। বটিয়াঘাটা থানা পুলিশের পরামর্শে পুলিশ কনস্টেবল সোহেল শিকদারের কর্মস্থল (খালিশপুর থানায়) কেএমপি সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করতে গেলেও তা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানালেন হতদরিদ্র জলিল শিকদার।
তিনি বললেন, ‘আমার চার ছেলে এক মেয়ে। আমার যেটুকু বসতভিটা আছে তা সব সন্তানদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিতে চাই; কিন্তু পুলিশ হবার পর থেকে আমার ছেলে সোহেল শিকদারের একাই সব চায়। ২০১২ সালে একমাত্র বিলান জমিটুকু বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা খরচে পুলিশে ঢুকিয়েছি ওকে। তার তিন বছর ওর বড় ভাই সোহাগ শিকদারকে চাকুরি দেবার কথা বলে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছে। সে টাকা চাইলে আমাকে ধরে পিটায়। সন্তান জন্ম দিয়ে কি অপরাধ করছি? নাকি জমি বিক্রি করে ছেলেকে পুলিশের চাকুরিতে ঢুকিয়ে পাপ করেছি?’ কথা শেষ না করেই কেঁদে ফেললেন তিনি।
বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সারাদিন কনফারেন্সে ব্যস্ত ছিলাম, তবে খোঁজ নিয়েছি ওই নামে কেউ কোন অভিযোগ দিতে আসেননি। পূর্বের জিডি থাকলে থাকতে পারে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ কনস্টেবল সোহেল শিকদার বলেন, ‘আমি ডিউটিতে ছিলাম। শহরে বাসা ভাড়া নিয়েছি, তাই মালামাল আনতে ট্রাক পাঠিয়েছিলাম বাবা ও ভাইরা সে মালামাল ভেঙে ফেলছে, এমন খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করেছি। তারা এসে ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এর বাইরে কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।’