বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

হারিয়ে গেছে গ্রাম বংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি

নয়ন বাবু, সাপাহার (নওগাঁ): নওগাঁর সাপাহার উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এক কালের কৃষাণ-কৃষানীর ধান ভাঙ্গার প্রধান অস্ত্র ঢেঁকি। অতীতে বাংলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বড়িতে ভাতের চাল তৈরীর জন্য কিংবা চালের আটা ভাঙ্গার জন্য ঢেঁকি পাতানো ছিল। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে ম্লান হয়ে গেছে আগেকার দিনের সেই ঢেঁকি। ৯০ দশকের দিকে সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর মানুষ তাদের সারা বছরের ভাতের চাল বাড়িতে পাতানো ঢেঁকিতে ছেঁটে প্রস্তুত করত এবং ভাদ্র মাসেও প্রতিটি পরবে তালের বড়া, পিঠা খাওয়ার জন্য বাড়িতে বাড়িতে আটা কোটার ধুম পড়ে যেত। আমন ধান কাটা শেষে পৌষ-মাঘে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার শব্দে অনেকের রাতের ঘুম নষ্ট হত। চাল কোটার জন্য মহিলার পাশাপাশি পুরুষরাও ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে থাকত। দুইজন মহিলা ঢেঁকিতে পাড় দিত আর একজন ঢেঁকির আগায় বসে শুকনো ধানগুলিকে ভাঙ্গার গর্তে এগিয়ে দিত। এভাবেই সারা রাত ধরে গ্রামের গৃহবধূরা তাদের সারা বছরের চাল ঢেঁকিতে ছেঁটে মাটির কুঠি কিংবা বাঁশের তৈরী ডোলে ভরে সংরক্ষণ করে রাখত। সে সময় ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত খেয়ে অধিকাংশ মানুষই সুস্থ জীবনযাপন করত। বর্তমানে আধুনিক যুগে চাকচিক্যের আধিক্যে হারিয়ে গেছে সেই ঢেঁকি ছাঁটা চাল। এখন পাড়ায় পাড়ায় ধান ভাঙ্গা হাসকিং মিল এমনকি ভ্রাম্যমাণ মিল প্রতিটি  বাড়ি গিয়ে ধান ভেঙ্গে দেয়ায় ঝকঝকে চাল ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় কোথাও আর চোখে পড়েনা এই ঢেঁকি। চালের আটা তৈরীর জন্য কিছুদিন পূর্বে কয়েকটি পাড়া মিলে দু’একটি ঢেঁকি চোখে পড়লেও এখন শুকনো ভেজা উভয় প্রকার চালের আটা মেশিনে তৈরী হওয়ায় আদিকালের সেই ঢেঁকি উপজেলার কোন গ্রামেই খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে আদিমকালের ঢেঁকি খুঁজতে বের হয়ে সারা উপজেলা খুঁজে অবশেষে উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বকুল হোসেন-এর উঠানে একটি ঢেঁকি পাতানো দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ঢেঁকির মালিক বকুল জানান, মেশিনের তৈরী আটা দিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু খাবার জিনিস তৈরী করা যায় না, তৈরী করতে গেলে নষ্ট হয়ে যায়; তাই সে তাদের উঠানে ঢেঁকিটি পেতে রেখেছেন বছরে দু-এক বার নিজেরা ও পাড়ার অনেকেই এই ঢেঁকিতে এসে আটা তৈরী করে থাকে। তবে আগেকার দিনের মত ঢেঁকির আর আদর কদর নেই কোন দিন হয়ত সেও ঢেঁকিটি তুলে ফেলবেন তার কোন ঠিক নেই। বর্তমান যুগে কালের আবর্তনে গ্রামবাংলা হতে হারিয়ে গেছে সেই পুরনো দিনের গুরুত্বপুর্ণ কাঠের তৈরী ঢেঁকি। আর কিছু দিন পরে নতুন প্রজন্ম হয়ত ঢেঁকির কথা শুনলে বলবে সেটি কি জিনিস তা বুঝানো মুশকিল হয়ে পড়বে তাই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকিকে স্মরণ করাতে হলে জাতীয় জাদু ঘরে ঢেঁকি সংরক্ষণ করে রাখা উচিত বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ