বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বহু গ্রুপে বিভক্ত আওয়ামী লীগের রাজশাহী মহানগর ও জেলা শাখা

রাজশাহী অফিস : জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজশাহীতে বহুসংখ্যক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এনিয়ে নিজের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে ঘটছে সংঘাতও। দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের অন্তর্কলহ ও পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণাও অব্যাহত রয়েছে।
এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের ঢাকায় তলব করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় ধানমন্ডির বৈঠকে এমপি, মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে মুখোমুখি বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং তাদের সমর্থকরা। এখানে বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর বিরোধিতা করে মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যডভোকেট মকবুল হোসেন খান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। এ নিয়ে এমপি’র সমর্থকদের সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে। মাঝেমধ্যেই নিজের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও। রাজশাহী-২ (সদর) আসনেরর দিকে সবারই বাড়তি নজর। এই আসনে কোন দল থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, কিংবা কে করবেন, তা জানার আগ্রহ থাকে রাজশাহীবাসীর। কারণ এই আসনটিকে ঘিরে রচিত হয় রাজশাহী অঞ্চলের রাজনীতির হিসাব নিকেশ। জোটবদ্ধ নির্বাচনের কারণে গত নির্বাচনে মহাজোট থেকে এ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সংসদ নির্বাচনে সদর আসনে দলের মধ্য থেকে প্রার্থী করার দাবি তুলেছেন। এই দাবি নিয়ে সোচ্চার নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ফলে এ নিয়ে জোটের সঙ্গে সৃষ্টি হয় আওয়ামী লীগের টানপোড়ন। এছাড়া প্রার্থী হতে চান দলের উপদেষ্টা রাবি’র সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুল খালেক। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন রাজশাহী শহর সংলগ্ন হওয়ায় সবার বাড়তি নজর রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেকটা হুট করেই মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দীন। ওই নির্বাচনে তাকে লড়াই করতে হয় দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী মেরাজ উদ্দীন মোল্লার সঙ্গে। এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ে বর্তমান এসমপি আয়েন উদ্দিন ছাড়াও রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক এমপি মেরাজ মোল্লা, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু, পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন প্রমুখ। এবার তারা বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠে রয়েছেন। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ব্যবসায়ী এনামুল হক। এবার এই আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। তারা এলাকায় এমপি বিরোধী প্রচারও চালাচ্ছেন। তারা প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার দুইবারের মেয়র অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে। ফলে শক্ত অবস্থান নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী। গণসংযোগ করাসহ দলের নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে ভেড়াতেও কাজ করছেন তারা। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে  বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী আব্দল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরদার, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য আবু সায়েম ও ব্যবসায়ী আসিফ ইবনে আলম। তারা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভোটের মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের তৎপরতায় এখনো সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট গ্রুপের। রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনাও। রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে আবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লড়তে চান বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রায়হানুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাস আলী প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ