শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফলন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত চাষিরা

কাউখালী : কাউখালী লঞ্চ টার্মিনালে আমড়া চালান দেয়ার উদ্দেশ্যে বস্তাজাত করা হচ্ছে

 

 

মোঃ তারিকুল ইসলাম পান্নু, কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা : পুষ্টিকর ফল আমড়ার চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। মৌসুমে বাজার ছাড়াও পথে পথে প্রচুর বিক্রি হয় এই আমড়া। এটি একটি অর্থকরী ফল হিসেবেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে আমড়ার চাষ ও উৎপাদন।

পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলায় চলতি মৌসুমে গত দুই বছরের তুলনায় আমড়ার ফলন ভালো। কিন্তু আমড়া চাষিদের মুখে সেই হাসির রেখাটি নেই। কারণ আমড়ার দাম তুলনামূলকভাবে কম। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় এর ফলন বেশি বিধায় বরিশালের আমড়া বলেই পরিচিতি বেশি। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলাসহ স্বরূপকাঠী ও নাজিরপুরে আমড়া আবাদ হয় বেশি। ওই এলাকায় এমন কোনো বাড়ি পাওয়া যাবে না যে বাড়িতে কম করে হলেও একটি আমড়া গাছ নেই। রাস্তার পাশে বাড়ির উঠানে একটি আমড়া গাছ লাগানো যেন প্রতিটি মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ পতিত জমি কেটে আইল তৈরি করে, আবার কেউ কেউ ফসলি জমিতে আমড়ার বড় বড় বাগান সৃষ্টি করেছেন। কোনো কোনো চাষির বাগান থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় হয়। শ্রাবণ ভাদ্র মাসে পরিপক্ব আমড়া পাওয়া যায়। গ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় আমড়া কেনা-বেচার বেপারী রয়েছে। তারা ফাল্গুন চৈত্র মাসে কুড়ি দেখেই আগাম টাকা দিয়ে বাগান কিনে ফেলেন। 

আবার অনেক চাষি ভরা মৌসুমে নিজেরাই বাজারে আমড়া বিক্রি করেন। আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত গাছ থেকে আমড়া পেড়ে বাজারে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হয়। কাউখালী উপজেলার প্রধান বন্দর লঞ্চঘাট, দক্ষিণ বাজার, পাঙ্গাশিয়াসহ বিভিন্ন বড় বাজারে রয়েছে আমড়ার আড়ৎ। ওইসব আড়তে বেপারীদের কাছ থেকে আমড়া কিনে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মেঘনাঘাট এলাকায় চালান করা হয়। সেখানে আড়তদাররা বিভিন্ন মোকামের খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারদের কাছে আমড়া বিক্রি করে।

পিরোজপুরে বিভিন্ন উপজেলায় বেপারীরা মাসে গৃহস্থদের অগ্রিম টাকা দিয়ে আমড়া গাছ কেনার পর শ্রাবণ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গাছ থেকে আমড়া সংগ্রহ করেন। পরে বস্তায় ভরে আমড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বড় মোকাম কাউখালীতে বিক্রি করেন। সেখান থেকে লঞ্চে ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আমড়ার চালান পাঠিয়ে দেয়া হয়। পিরোজপুর জেলার আমড়া আকারে বড় এবং সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। কাউখালী এলাকার আমড়া চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মধ্যস্বত্ব ভোগীদের অধিক মুনাফার কারণে আমড়া উৎপাদনকারী গৃহস্থরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেও আমড়া বেচাকেনার মুনাফার পুরোটা ঢোকে না চাষিদের পকেটে। সে কারণেই আমড়া চাষিরা বাম্পার ফলনে খুশি হয়েও যেন খুশি নন।

বেপারীরা গৃহস্থদের কাছ থেকে এক বস্তা আমড়া আট/৯শ’ টাকায় কিনে কাউখালী মোকামে বিক্রি করে থাকেন ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকায়। কাউখালীর ব্যবসায়ী সেকান্দার আলী জানান, একটি আড়ৎ থেকে ঢাকা বা মুন্সিগঞ্জ এক বস্তা আমড়া পৌঁছাতে খরচ হয় ২১০ থেকে ২১৫ টাকা। এরপর আড়তে বিক্রয় মূল্যের শতকরা ১০ ভাগ আড়তদারী দিতে হয়। প্রতিটি বস্তায় বর্তমানে এক হাজার আমড়া বোঝাই করা হয়। বর্তমানে কাউখালীতে এক বস্তা আমড়ার দাম ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। ঢাকায় বিক্রি হয় ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায়।

কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী আজিম শরীফ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর আমড়ার ফলন শতকরা ১০-১৫ ভাগ বেশি হওয়ায় দামও কিছুটা কম।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ