শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারলে দুর্দিন আসবে -শেখ হাসিনা

গতকাল রোববার প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় গণভবনে বিমসটেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন -পিআইডি

# তাড়াহুড়া করে ইভিএম চাপিয়ে দেয়া যাবে না
# বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না
# ড. কামালরা আদৌ নির্বাচন চান কি না?
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ওপর আস্থা রয়েছে এমন কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আগামীতে নৌকায় ভোট দিয়ে তারা বিজয়ী করবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়। তাদের মোকাবিলা জনগণই করবে।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে প্রকল্পগুলো শুরু করেছি সেগুলো শেষ করতে পারব। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। অনেক জেলা ভিক্ষুক মুক্ত। মা-বাবারা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠায়। যোগাযোগও বিদ্যুৎ উন্নয়নে এখন যে কাজগুলো হাতে নিয়েছি। আবারো সরকারে আসতে পারলে শেষ করতে পারব। না আসতে পারলে আগে তারা যা করেছে তাই করবে। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। কোনো আপসোস নেই।
গতকাল রোববার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। শুক্রবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাত দেশের জোট বিমসটেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাড়াহুড়া করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এটা নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হোক। কারণ একটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার আছে।
তিনি বলেন, ইভিএম ডিজিটাল বাংলাদেশেরই একটা পার্ট। আমরা এখন টাকা পাঠাচ্ছি অনলাইনে, গাড়ি কিনছি অনলাইনে, সবজি কিনছি অনলাইনে। এটা ঠিক যে প্রযুক্তি আমাদের সবসময়ই সুবিধা করে দেয় তা কিন্তু নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইভিএম নিয়ে তারা অভিযোগ করবেই, কারণ কারচুপির একটা টেকনিক তাদের জানা আছে। বহু টেকনিক তারা ইলেকশন কারচুপিতে জানে। ইভিএম চালু হলে ব্যালট পেপার একটার বদলে দুটো নিতে পারবে না। সে জন্যে তারা আপত্তি জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশে এই ইভিএমের ব্যবহার আছে। তবে আমরা পুরোপুরি ইভিএম দিয়ে নির্বাচন করতে চাই না। কিছু কিছু জায়গায় ইভিএম দিয়ে শুরু করতে পারি। আমরা সীমিত আকারে শুরু করতে পারি।
ইভিএম বিশ্বব্যাপী চলমান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ইভিএমের ব্যবহার হয়। তাড়াহুড়া করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এটা নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হোক।
আগামী নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি কারো নেই বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ সঙ্গে থাকলে নির্বাচন হবে। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। সে কারণে এ দেশের মানুষের জন্য কাজ এবং উন্নয়ন করা দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যদি এ দেশের উন্নয়ন চায় তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। যদি আবার আমরা ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে এ দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখব এবং ২০২১ সালে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে। আর আমরা যদি ক্ষমতায় না আসতে পারি তাহলে যারা এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন তারা আবার ক্ষমতায় আসবে। তারা আবার দেশের সম্পদ লুটপাট করবে এটাই বোধ হয় ভালো।
আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার আত্মমর্যাদা বলে কিছু আছে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকি বা না থাকি কিছুই যায় আসে না। তিনি বলেন, বিএনপির কোনো আলোচনা হবে না। তারা নির্বাচনে আসবে কি আসবে না তা তাদের ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর বিএনপি নেত্রীকে সান্তনা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মুখের ওপর সেদিন দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আমি ওই দিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিএনপির সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে আমি গ্রেফতার করিনি, রাজনৈতিকভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তার মুক্তির জন্য বিএনপি আন্দোলন করুক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি কোর্টের মাধ্যমেই হতে হবে, দ্রুত মুক্তি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
 শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির সৌভাগ্য মিডিয়া তাদের পক্ষে। আর আমি (শেখ হাসিনা) টেলিভিশনে তিন, চার অথবা পাঁচ নম্বরে সুযোগ পাই। এখনো মিডিয়ার কাছে তারাই (বিএনপি) ফেভারিট, তারাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
‘নির্বাচন নাও হতে পারে’ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের এমন শঙ্কার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের কাছে আমার প্রশ্ন তারা আদৌও নির্বাচন চান কি না? বাংলাদেশের একটা শ্রেণি বসে থাকে অন্যরা ক্ষমতা পেলে তারা একটা পতাকা পায়, তাদের কদর বাড়ে।’
গত নির্বাচনে অর্ধেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্ন থাকে এতগুলো এমপি আনকনটেস্টেড। একটা বড় দল নির্বাচনে এলো না। তাহলে তো এমন হবেই। খুলনায় সালাম মূর্শিদীকে নোমিনেশন দিলাম প্রার্থী পাওয়া গেল না। সে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছে। তাকে কী বলবেন অবৈধ? বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিও তো সংবিধানেও আছে।’
ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ড. কামালও তো একইভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার সিট ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশে তো দল দুইটা। আওয়ামী লীগ এবং অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। এটা ভালো যে তারা জোট করেছে, সেটা থাক। ড. কামালের পকেটে সবসময় টিকেট থাকে। যাতে কিছু একটা হলেই বিমানে উঠে বিদেশ পাড়ি দিতে পারে।’
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়াও তাকে সম্মান দেননি। বঙ্গভবন থেকে বের করে রেল লাইন দিয়ে দৌড় দেওয়ালেন। কাদের সিদ্দিকীও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু কে যেন বুদ্ধি দিলো, রিজাইন করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ালেন। ভাবলেন ভোট পেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন। পরে নৌকা ছেড়ে দিয়ে তিনি হেরে গেলেন।’
‘মান্না আমাদের পার্টি করতে এসেছিলেন। স্বস্তি বোধ করেননি। সারাজীবন আওয়ামী লীগের বিপক্ষে লিখেছেন। আমি বললাম এত ভালো লেখেন, আপনার লেখার হাত ভালো। এতদিন বিপক্ষে লিখেছেন এবার পক্ষে লেখেন। তিনি লিখতেই পারেন না। লিখতে বললেই মান্না জুড়ে দেন কান্না।’
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ১০০ বছরে কোন পর্যায়ে যাবে সেই পরিকল্পনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল থেকে কী করবো, তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘দিনবদলের সনদ চলছে। কাজ চলছে। তা অব্যাহত থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১০০ সালে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, বদ্বীপকে বাঁচিয়ে রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য অভিঘাত থেকে বাঁচাতে এই প্ল্যান। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন হাতে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কাজ চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিমসটেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু এসেছে। তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে আমরা কখনোই চাই নি একটি সংঘাতপূর্ণ অবস্থান। তিনি বলেন, এছাড়া বিমসটেকে আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভুয়া ছবি দিয়ে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর প্রোপাগান্ডামূলক একটি বই প্রকাশের বিষয়টিও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এভাবে ভুয়া ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে জঘন্য কাজ করেছে। কিন্তু এটা তারা কার কাছ থেকে শিখল? আমাদের দেশেও তো হয়েছে। কাবা ঘরের সামনে ব্যানার ধরার ছবির মিথ্যাচারও আমরা দেখেছি। সুতরাং এসব মানুষের কাছে ধরা পড়ে যায়। মিয়ানমার সরকারও ধরা পড়ে গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ