শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দক্ষিণাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ আতঙ্কে উপকূলবাসী

খুলনা অফিস : দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা-দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর-আশাশুনি ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়া এসব এলাকার সাধারণ মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। মাঝে মাঝে বেড়িবাঁধে দেখা দিচ্ছে বড় ফাটল। প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে বাড়িঘর, ফসল, মাছের ঘের। এর মধ্যে খুলনার দাকোপ ও কয়রা উপজেলার ৫টি পোল্ডার ঘিরে ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অর্ধেকই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু নদীর পানি ঠেকাতে নয়, এ বাঁধ দিয়ে চলাচল করে এলাকার সাধারণ মানুষ। প্রবল জোয়ারের সময় কোথাও বাঁধ উপচে আবার কোথাও বাঁধের ফাটল দিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে সেসব স্থানে ফাটল মেরামতের চেষ্টাও করা হচ্ছে। তবে বাঁধের নাজুক অবস্থার কারণে আতঙ্কে দিন কাটছে উপকূলবাসীর।

খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া এলাকার পাউবোর বেড়িবাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। মঙ্গলবার স্বেচ্ছাশ্রমে কোন রকম পানি আটকানো সম্ভব হলেও এলাকাবাসী রয়েছে ভাঙন আতঙ্কে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার না হলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। একই সাথে পাউবো কর্তৃপক্ষ ভাঙন এলাকায় ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাউবোর ১৩/১৪-১ পোল্ডরের কপোতাক্ষ নদের গাজীপাড়া বেড়িবাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্থানীয়ারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেশ কয়েকদিন ভাঙনরোধে কাজ করলেও মঙ্গলবার দুপুরে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ে। 

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এই ভাঙন কবলিত এলাকায় চলাচলের জন্য সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বেশ কিছু এলাকার বেড়িবাঁধ জোয়ারের সময় হঠাৎ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য গনেশ মন্ডল বলেন, মূল বাঁধের ১/২ হাত বাদে অন্যসব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাতের জোয়ারে কি হবে তা নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী। তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক বস্তায় মাটি ভরাট করে পানি আটকানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষা না হলে এই এলাকার ৪/৫টি গ্রাম যে কোন মুহূর্তে প্লাবিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে করে মৎস্যসম্পদ ক্ষতির পাশাপাশি চলতি মওসুমে আমন ধানের মারাত্মক ক্ষতি হবে।  পাউবোর আমাদী সেকশন কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, গাজীপাড়া বেড়িবাঁধের বিষয়টি পাউবো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে কাজ করা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাকনা, হরিষখালী, কোলা, শ্রীপুর, মণিপুর, খাজরা বাজার ও গদাইপুর পয়েন্টে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভাঙন ধরেছে খোলপেটুয়া নদীর কাঁকড়াবুনিয়া, থানাঘাটা, নছিমাবাদ, জেলেখালী দয়ারঘাট, বলাবাড়িয়া, বিছট ও কাকবাসিয়া পয়েন্টে। শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা’র বেশি নাজুক নাপিতখালী, গাগড়ামারি, লেবুবুনিয়া, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা, কামালকাটি, চাউলখোলা, চন্দ্রদ্বীপ ও পাতাখালী পয়েন্টে খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে রমজানগর ইউনিয়নের মাদার নদীর শেখবাড়ি মসজিদ ও চৌকিদারপাড়া এবং কালিন্দি নদীর পশ্চিম কৈ’খালীর মানুষ। দুর্গাবাটি ও পোড়াকাটলায় খোলপেটুয়া নদীর এবং দাতিনাখালীতে চুনা নদীর বেড়িবাঁধে মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে।

বাঁধের নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা প্রকল্প গ্রহণ করে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করবো।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ