বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি

খুলনা অফিস : খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে । ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও চালু হয় ২০১০ সালে। এরপর ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কখনও দেড়শ’ পূর্ণ হয়নি। এখানকার অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি মাসের পর মাস বিকল হয়ে রয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসক ও জনবল সংকটতো রয়েছেই। এতে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গরীব ও অসহায় মানুষেরা ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা কম খরচে বা বিনামূল্যে পেতে শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবল সংকটসহ অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি ও ইউরোলজি চিকিৎসা কম খরচে নিতে সাধারণ মানুষকে এ হাসপাতালে ধরণা দিতে হয়। ১০টি জটিল ও কঠির রোগের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছেন মাত্র দুই জন। বাকি ১০টি পদ শূন্য। অপর গুরুত্বপূর্ণ ৫টি বিভাগে কনসালটেন্ট হিসেবে পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই নেই। নেই পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র কনসালটেন্ট। চীফ কনসালটেন্ট নেই নিউরোলজি, নেফ্রোলজি ও অর্থোপেডিক্স বিভাগে। এছাড়া নিউরোসার্জারি, পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক এন্ড কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি, আইসিইউ, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, এ্যানেসেথসিওলজি, কার্ডিওথোরাসিক এ্যানেসেথসিয়া এবং প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটে সিনিয়র কনসালটেন্ট নেই। একজন জুনিয়র কনস্যালট্যান্ট এবং একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে বিভাগটি। এছাড়া মেডিকেল অফিসার ৪১টি পদের মধ্যে ২০টিই শূন্য। চিকিৎসক ছাড়া নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য অন্তত ৮৩টি পদ শূন্য। অনুরূপভাবে চিকিৎসা সেবার অত্যাধুনিক যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। আর যে জনবল আর সরঞ্জাম চালু রয়েছে তাও জিম্মি হয়ে পড়েছে অসাধু সিন্ডিকেট এর হাতে।

সরেজমিন দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পদে পদে হয়রানি হচ্ছে এ হাসপাতালে। নড়াইল থেকে আসা মো. ইলিয়াস ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে বেলা ১১টায় এসে পৌঁছেছেন। তিনি হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে গেলে বলা হয় এখন টিকিট হবে না ১১টার আগে আসতে হবে। যদিও সামনের কাঁচের গায়ে লেখা ১২টা পর্যন্ত টিকিট দেয়া হয়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সুপারিশ করলে মেলে তারে টিকিট। টিকিট নিয়ে তিনি লাইনে দাঁড়ান। তবে, দুর্ভাগ্য তার। নেফ্রোলোজি মেডিকেল অফিসার তখন নাস্তা করায় ব্যস্ত। নাস্তা খেয়ে কিছু সময় ৭ থেকে ৮ জন রোগী দেখার পর ডাক্তার জরুরী কাজে চলে যান। ফলে আর ডাক্তার দেখানো হয়নি ইলিয়াসের। তবে এটেন্ডেন্ট দুইটার পরে একই ডাক্তারকে ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখানোর প্রস্তাব দেন। শুধু ইলিয়াস নয়, তার মত অনেকেরই হয়রানি আর ভোগান্তি আবু নাসের হাসপাতালে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

খোঁজ নিয়ে জান যায়, হাসপাতালের স্বাস্থ সেবা জিম্মি করে রেখেছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। বহির্বিভাগ থেকে ভর্তি ওয়ার্ড। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে বাণিজ্যিকরণ হয়েছে। কন্ট্রাক্ট সার্ভিসের কর্মীদের টাকা দিলে সব কিছুই সম্ভব এ হাসপাতালে।

খুলনায় চিকিৎসকদের অভিভাবক বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী একান্ত আগ্রহের একটি প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতাল। এই হাসপাতাল নিয়ে যে কোন ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে। হাসপাতালটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি আশির্বাদ। তিনি হাসপাতালটি দালালমুক্ত করতে স্বাস্থ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ ২৫০ বেড চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান। এ ব্যাপারে বিএমএ খুলনাও সর্বাত্মকভাবে পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের পরিচালক ডা. বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, যে কোন মেশিন যে কোন সময় বিকল বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অচল হতে পারে। যা সাথে সাথে মেরামত করা সম্ভব হয় না। জনবল সংকট নিয়েও হাসপাতালটিতে সাধারণের সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক রয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ