শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মাঝারি লাইসেন্সধারী চালকদের বাস-ট্রাক-লরি চালানোর অনুমতি

# পরিবহণ খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
স্টাফ রিপোর্টার : সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অন্তত ২০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহণ উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে পরিষদটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় বলা হয়, জাতীয় সড়কে জিরো গতির গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। সড়ক ও মহাসড়কে ইজিবাইক, লেগুনা, নছিমন-করিমন জাতীয় ছোট যানগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আর ঢাকায় আধুনিক গণপরিবহণ ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটা বাস্তবায়নের জন্য এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র সাঈদ খোকনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে এসব তথ্য জানান সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সভায় পরিষদের সদস্য নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব। এছাড়াও বৈঠকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, সব বিভাগীয় কমিশনার ও সব মহানগর পুলিশ কমিশনাররা অংশ নেন।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিবহন খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে তারা যে সুবিধা পাবে তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যান, নসিমন, করিমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাই বিআরটিএ’তে নতুন করে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব জেলায় রোড-ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) নেই, সেসব জেলায় আরটিসি গঠন করা হবে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, বাস, ট্রাকসহ সব গাড়ির বাম্পার অপসারণ করা হয়েছে। যানবাহনের ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণে বুয়েটের সহযোগিতায় যে কাজ চলছে, তা দ্রুত শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হবে।
দেশে চলমান পরিবহণ চালক সংকট দূর করতে হালকা পরিবহণের (মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি) জন্য লাইসেন্সধারী চালকদের মাঝারি ও মাঝারি পরিবহণের (মাইক্রোবাস-পিকআপ) জন্য লাইসেন্সধারী চালকদের ভারী যানবাহন (বাস-ট্রাক-লরি) চালানোর অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন সংশ্লিষ্টদের জ্ঞাতার্থে গতকালসোমবার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশে ভারী ও মধ্যম শ্রেণির মোটরযানের তুলনায় ভারী ও মধ্যম মানের ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা অপ্রতুলতার কারণে যাত্রী ও পণ্যবাহী মোটরযানের স্বাভাবিক চলাচল অব্যাহত রাখার স্বার্থে সরকারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের হালকা মোটরযান চালনার বৈধ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে এবং ওই লাইসেন্সের মেয়াদ ন্যূনতম একবছর পার হয়েছে, তারা মধ্যম শ্রেণির মোটরযান সংযোজনের জন্য সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন। একইভাবে মধ্যম শ্রেণির মোটরযান চালনায় বৈধ পেশাদার ড্রাইভং লাইসেন্সধারীরা ভারী মোটরযান সংযোজনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সে মধ্যম বা ভারী মোটরযান সংযোজনের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করা হবে। এই নির্দেশনা এই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত সময়ে সর্বনিম্ন একবছরে মেয়াদি হালকা মোটরযান চালনার পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা মধ্যম শ্রেণির মোটরযান এবং সর্বনিম্ন একবছর মেয়াদি মধ্যম মোটরযান চালনার পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা ভারী শ্রেণির মোটরযান চালাতে পারবেন। ওই সময়সীমার পর এর কার্যকারিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। মোটরযান চালনানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন, সাইন-সিগন্যাল, বিধি-বিধান ও প্রচলিত সরকারি নিয়ম-নীতি ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার কথাও বলা হয়েছে।
সভা শেষ সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোতে কোনও অযান্ত্রিক যানবাহন চলবে না সাংবাদিকদের জানান, এছাড়া দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, লেগুনা, নসিমন, করিমন, অটোরিকশাসহ সমস্ত ছোট যানবাহন চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে রোড ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি)। যে সমস্ত জেলায় আরটিসি নেই, সে সমস্ত জেলায় অতিসত্ত্বর আরটিসি গঠন ও নিয়মিত সভা করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে চলমান বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহনের বাম্পার, হুক ও অ্যাঙ্গেল অপসারণ করতে হবে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ অপসারণ করা হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশও অপসারণ করা হবে। জাতীয় মহাসড়কগুলোতে ইজিবাইকসহ ছোট-ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরি করতে সড়ক পরিহণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বররের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিআরটিএর চলমান সেবা কার্যক্রম সকাল ৯-রাত ৯টা (শুক্রবার ব্যতীত)অব্যাহত থাকবে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন আট জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে ঢাকায় বিআরটেএতে ম্যাজিস্ট্রেট তিন জনের স্থলে ১১ জন করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন ১১টি মোবাইলকোর্ট চালানো হবে। ইজিবাইক, লেগুনা, নসিমন, করিমন, অটোরিকশার খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি না দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র পাঠানো হবে। দেশের মহাসড়কগুলোর কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধাসহ পাঁচটি স্থানে চালক ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাঘার করা হবে। কোনও গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, হুটার, স্টিাকার ও মনোগ্রাম লাগানো চলবে না। হাইওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ৮০ কিলোমিটার। এর বেশি থাকবে না। এই কাজের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি ও হাইওয়ে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। রাজধানীতে গরিব চেহারার গাড়িগুলোর বডির রং আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের ২২টি মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন ও অটোরিকশা দেখাতে পারবেন না। সেখানে এসব মুক্ত করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বছর ঈদের সময় যে তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনটিই হাইওয়েতে এবং প্রত্যেকটি হাইওয়েতেই ডিভাইডার ছিল। কাজেই সড়কগুলোতে ডিভাইডার দিলেই দুর্ঘটনা কমে যাবে, তা সত্য নয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ