বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই কুরবানিকে সামনে রেখে মসলার বাজার চড়া

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত প্রায় মাসখানেক ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বেড়েই চলছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়ে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। এদিকে মসলার বাজারও রয়েছে চড়া। বেশকিছু দিন আগে থেকেই মসলার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই। ঈদের পর পেয়াঁজের দাম কমে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। তার পরও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। মূলত আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিচ্ছে পেঁয়াজের দাম, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তাসাধারণ। তবে সিন্ডিকেটের বিষয় স্বীকার করতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবেও দাম বাড়ার এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের এ সংস্থাটির হিসেবেই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানিকৃত পেঁয়াজে বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এছাড়া ভারতে বৃষ্টির জন্য পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান তারা।
এছাড়াও আমদানিতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় যেসব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায় তার প্রভাব এসে পড়ে খুচরা বাজারে। এক্ষেত্রে স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করার পরামর্শ দেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ১৯ লাখ টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে,  দেশে বছরে ১৮-১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এছাড়া ভারত থেকে ৭-৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এ হিসেবে দেশের পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই।
এদিকে মসলার বাজারে দেখা গেছে প্রায় সব ধরনের মসলার দামই বাড়তি। গত একমাসে এসব মসলার দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদুল আজহার সময় প্রতি বছর মসলার দাম কিছুটা বেড়ে থাকে। সেই প্রভাবই এখন পড়েছে। তবে মসলার বাজারে এখনো ভিড় শুর” হয়নি। এবার কেজিপ্রতি (মান ভেদে) এলাচের দাম এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকা। যা ১৫ দিন আগেও ছিল এক হাজার ৭৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা।
একইভাবে বাজারে ভারত থেকে আসা জিরার দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৮৩ থেকে ২৯৭ টাকা। বর্তমানে এটা ৩৩৫ টাকা। সিরিয়া থেকে আমদানি করা জিরার কেজি ছিল ৩৯০ টাকা, বর্তমানে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা দরে চীন থেকে আমদানি করা জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৯৫ টাকায়। আর ১১০ টাকা কেজির মিষ্টি জিরা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা।
বাজারে ঈদের আগে দারুচিনির দাম কেজিপ্রতি ছিল ২৬৮ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। দারুচিনি আমদানি হয় চীন ও ভিয়েতনাম থেকে। বাজারে প্রতি কেজি জয়ফলের দাম ছিল ৫৫০ টাকা, বর্তমানে এই দাম দাঁড়িয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। এটি আমদানি হয় শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে।
লবঙ্গ আমদানি হয় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার ও ব্রাজিল থেকে। বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ মান ভেদে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছিল ১,২০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত। লবঙ্গ দামই কেবল স্বস্তির মধ্যে আছে। বাজারে গোলমরিচ (কালো) কেজিপ্রতি ৯৫০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা) এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে কেজি প্রতি হাজার টাকার বেশি ছিল না।
এ ছাড়া বাজারে বাড়তি দামে জয়ত্রী দুই হাজার ১০০, ধনিয়া ১০০ থেকে ১২০, ভারতীয় হলুদ ২১৫, ভারতীয় মরিচ ১৫০, দেশি শুকনা মরিচ ১৩০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর দেশীয় জিরা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, কাঠবাদাম, পোস্তদানা, ধনিয়া, আদা, রসুন, পেঁয়াজসহ সব মসলার দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, দেশি রসুনের কেজি মানভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, শুকনা মরিচ ও হলুদ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২১০ টাকা।
মসলা বিক্রেতা মোহাম্মদ চুন্নু বলেন, ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় কিছুটা দাম বেড়েছে। তবে বেশিরভাগ মসলার দামই সহনশীল আছে। তবে ঠিকমতো আমদানি থাকলে দাম আরো কম থাকত।
তবে দোকানিরা যাই বলুক ক্রেতা বলছে ভিন্ন কথা। শামসুদ্দিন নামের সোনালি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ দিন আগেও এলাচ ছিল এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৭৬০ টাকা এখন সেটি কিনতে হচ্ছে ১৯০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।
এদিকে সবজির বাজারে দেখা গেছে, দু’একটি সবজির দাম বাড়লেও অধিকাংশ সবজির দামই রয়েছে স্বাভাবিক। কাচামরিচ বাজারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা, করলা ৪৫-৫০ টাকা এবং প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়।
গত সপ্তাহের মতোই খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে  ১১০-১২০ টাকায়। আর পাইকারি বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়। খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি হালি ডিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে স্থিতিশীল রয়েছে মাছ ও মুরগির দাম। বাজারে গত সপ্তাহের মতো বয়লার মুরগি ১৫০-১৫৫ টাকা এবং লাল লেয়ার মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি জোড়া কর্ক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা। আর গরুর গোশত ৫২০ টাকা ও খাসি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মাছের বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি রুই ৩৬০-৪০০ টাকা, কাতলা ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-২০০, আইড় ৪০০-৬০০ টাকা, বাইলা ৩৬০-৫০০ টাকা, বাইন ৪০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৪৫০-৬০০ টাকা, পুঁটি ১৮০-২০০ টাকা, পোয়া ৪০০-৬০০ টাকা, মলা ৩২০-৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-৫০০ টাকা, শিং ৪০০-৭০০, দেশি মাগুর ৫০০-৭০০ টাকা, শোল ৫০০-৭০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৪০-১৬০ টাকা, চাষের কৈ ২০০-২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
চালের বাজারে মোটা স্বর্ণা চালের দাম কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৮ টাকা। পাইজাম ৫০ থেকে ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬২ টাকা এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা দরে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ