বনবিভাগের বিরুদ্ধে বিএলসি ও পাস-পারমিটের আড়ালে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
খুলনা অফিস : বনবিভাগের বিরুদ্ধে বিএলসি ও পাস-পারমিটের আড়ালে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে যেন অনিয়ম নিয়মেই পরিণত হয়েছে। দেখারও কেউ নেই।
সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট একাধিক জেলে ও এলাকাবাসী জানান, বৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশের প্রথম ধাপ বোট লাইসেন্স বা বিএলসি নবায়নে জেলেদের অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় ৮শ’ থেকে হাজার টাকা। একটি বিএলসি নবায়নের জন্য সরকারি রাজস্ব ১১ টাকা ৫০ পয়সা। সেখানে বনবিভাগকে দিতে হয় ৮ শ’ থেকে এক হাজার টাকা। নতুন বিএলসির জন্য নেয়া হয় দেড় হাজার টাকা। প্রতি বছর দু’টি বিভাগের ১৮টি স্টেশন থেকে ১লা জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নবায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ মেয়াদ পরবর্তী সময় থেকে শুরু হয় নতুন বিএলসি বিতরণ। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করেও কোন ফল হয়নি বলে জেলেরা জানান। এ বছরও বিএলসি নবায়নের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু থেমে নেই অবৈধ অর্থ হাতানোর অপকৌশল। একটি পাশ পার-মিটের জন্য সরকারি রাজস্ব ভ্যাটসহ ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। সেখানে নেয়া হয় ৪ শত থেকে ৬ শ’ টাকা পর্যন্ত। কোন সিটিপাশও দেয়া হয় না বলে জেলেদের অভিযোগ।
এছাড়া বিষ দিয়ে মাছ নিধন, অবৈধ ডুবোজাল পেতে মাছ আহরণ, মৎস্য প্রজনন খাল গুলো এলাকাভিত্তিক ডিপো মালিকদের নিকট বিক্রি করে দেয়া, নেট জালের ব্যবহারের জন্য কাঁকড়া কাঠের ছড় ব্যবহার অবৈধ। এসব অবৈধ আয়ের টাকা সংগ্রহের জন্য তাদের নির্দিষ্ট কিছু দালাল রয়েছে। তাদের মাধ্যমে গোন (১ সপ্তাহ) শেষে এসব টাকা প্রত্যেকটি স্টেশনের স্বঘোষিত ক্যাশিয়ারের কাছে জমা হয়। অবৈধ ডুবোজালের ব্যবহারে ছোট-বড় সকল ধরণের মৎস সম্পদ বিলুপ্ত হচ্ছে। নিষিদ্ধ নেট জালের ব্যবহার চলছে সুন্দরবন বিভাগের স্টেশন কর্মকর্তাদের নিজস্ব তদারকির মাধ্যমে। গত বছর কালাবগী স্টেশন ৪২টি অবৈধ ডুবোজাল আটক করে ৩/৪টি জাল নামমাত্র পুড়িয়ে ভষ্মিভূত করে। বাকি জালগুলো জনৈক দুই ব্যক্তির নিকট মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে। এ ঘটনায় কালাবগী স্টেশনের জনৈক বাগান মালী নামের বনরক্ষীকে কিছু টাকা দেয়া হয় বলে সূত্র জানায়। এ ধরণের ঘটনা কমবেশী সব স্টেশনই।
নলিয়ান গ্রামের নজরুল ইসলাম গাজী জানান, আমি নলিয়ান ফরেস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই বারের সাবেক সভাপতি। আমি জীবনে জংগলে যায়নি। অথচ আমার নামে বন মামলা দেয়া হয়েছে।
একই অভিযোগ নলিয়ান গ্রামের ফারুক গাজীর। তিনি বলেন, বনবিভাগের অনিয়ম ও নানা অসংগতির ব্যাপারে কথা বললে তাদের নামে বন মামলা দেয়া হয়।
সুতারখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত মিলন বলেন, বনবিভাগের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায়, আমার নামে বনমামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার ব্যক্তিদের কার কোথায় বাড়ি তার কোন হদিস নেই। মামলা গুলো যে মিথ্যা তা’ এর দ্বারাই প্রমাণিত হয়। কয়েকদিন আগে এক জেলেকে সম্প্রতি বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অবৈধভাবে মারধর ও নির্যাতন চালায়।
এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। একই অভিযোগ আব্দুর রউফ শেখের। তিনি বলেন, আমাকে উলংগ করে আধা ঘন্টা ধরে নির্যাতন চালানো হয়। কালাবগীর মুজিবর মল্লিক, জামাল শেখ জানান, সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিকাংশ মানুষের নামে মিথ্যা বন মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় বছরের পর বছর কোর্ট ঘোরাফেরা করে নিঃশ্ব হয়ে যাচ্ছে। তবে, এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে না পাওয়ায় বক্তব্য দেয়া সম্ভব হলো না।