কক্সবাজারের গোমাতলীতে বেড়িবাঁধ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা ॥ প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
শাহনেওয়াজ জিল্লু, কক্সবাজার : কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্লিপ্ত ভূমিকায় সদরের ইদগাঁও গোমাতলীস্থ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। একারণে, গোমাতলীর উত্তর গোমাতলী, রাজঘাটসহ আরোও বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চলের চিংড়িঘের, লবণমাঠ, বসতভিটা, স্কুলঘরসহ আরোও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবেশকৃত সাধারণ এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই কতিপয় চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও স্বার্থান্বেষী মহল এধরণের ঘৃণিত অপকর্মটি করেছে। যার ফলে গোমাতলীর সড়ক ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা ও সার্বিক অবকাঠামো সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন, গুরুত্বপূর্ণ এই বেড়িবাঁধটির ৬নং স্লুইস গেইটস্থ পূর্বের একটি ভাঙ্গা অংশ সংস্কার করতে প্রায় ২কোটি ৭০লক্ষ টাকা খরচ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ভাঙ্গা এই অংশটির সংস্কার কাজ শেষ হতে না হতেই পুনরায় নতুন করে ৭নং স্লুইস গেইট সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল শুক্কুরের পুত্র সাজ্জাদ জানান, বেড়িবাঁধের এই ধ্বংসাবস্থার জন্য কতিপয় চিহ্নিত ব্যাক্তি দায়ী। তারা এখানকার প্রজেক্টগুলো গত ২বৎসর ধরে ভোগ করে আসছে। স্থানীয় গোমাতলী মোহাজের উপনিবেশ সমিতি এসব প্রজেক্ট নিলাম দিয়ে থাকে। আর সমিতিতে রয়েছে ১৪৯ জন সদস্য। সদস্যদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিতেই মূলত বেড়িবাধ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
অপর এক ভুক্তভোগী জালাল আহমদ জানান, গোমাতলী মোহাজের উপনিবেশ সমবায় সমিতির হর্তাকর্তাদের সাথে আঁতাত করে নিলামদাররা বাঁধটি কেটে দিয়েছে। মৌসুমের শেষ দিকে এসে বর্ষার শুরুতে এভাবে বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়ায় সমগ্র গোমাতলীবাসী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে স্কুলঘর থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সবকিছু পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
কারা এই কাজটি করেছে জানতে চাইলে প্রত্যক্ষদর্শী ও চিংড়ি চাষী জামাল উদ্দিনসহ আরোও অন্যান্যরা জানান, উত্তর গোমাতলীর ফিরোজ আহমদের পুত্র সাইফুদ্দিন, আব্দুল্লাহ, রাজঘাটের মৃত মীর আহমেদ ফকিরের পুত্র নুরুল হুদা। এই ৩জন এখানে ৩৪৯ একর প্রজেক্টের নিলাম গোমাতলী মোহাজের উপনিবেশ সমিতির নিকট হতে। আর সমিতিতে সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ১৪৯ জন। সমিতির অন্যান্য সদস্যদের যেনো প্রজেক্টে ব্যবসার লভ্যাংশ দিতে না হয় এজন্যে উক্ত সমিতির কতিপয় নেতাদের সাথে আঁতার করে বেড়িবাঁধটি কেটে দিয়েছে। যেনো তারা বলতে পারে, এই মৌসুমেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনো লাভজনক অবস্থান তৈরী হয়নি। এভাবে তারা বছরের পর বছর লুটেপুটে খাচ্ছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে স্থানীয় পুরো গোমাতলীবাসী বিপদে পড়ে যাচ্ছে তারা সেটা মোটেও তোয়াক্কা করছেনা। এভাবে নিরবচ্ছিন্ন পানি প্রবেশ করায় পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে।
বাঁধ কেটে ফেলায় সংশ্লিষ্ট এলাকা পানিতে মিশে একাকার হয়ে একসময় মহেশখালী চ্যানেলের সাথে মিশে যেতে পারে বলেও আশক্সকা করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীমহল। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড কেনইবা এবিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছেন তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠার কথা জানালেন তারা।
এদিকে কেটে ফেলা বেড়িবাঁধের বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়ার দাপ্তরিক মুঠোফোন নাম্বারে (০১৯১৭০৪৩০৫৯) একাধিকবার সংযুক্ত হতে চেয়েও পাওয়া যায়নি।