শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আত্রাইয়ের ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ তিন বছরেও সংস্কার হয়নি

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ): নওগাঁর আত্রাইয়ে গত ২০১৫ সালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর প্রবল বর্ষণের ফলে উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ও আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে যায়। আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক মেরামত করা হলেও বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়ার র্দীঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ আজও মেরামত করা হয়নি।
এদিকে বাঁধ মেরামত না করার ফলে আগামী বন্যা মওসুমে আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক আবারও হুঁমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে ফুলবাড়ী ও পূর্বমিরাপুরের শত শত পরিবার। যাতায়াতের জন্য নৌকাই হচ্ছে তাদের এক মাত্র অবলম্বন। বর্তমানে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ তাদের আবাদি ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৫ সালের ২৩ অগাস্ট ভোর রাতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আত্রাইয়ের ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভাঙার পর মির্জাপুর এলাকার আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক ভেঙে আশেপাশের এলাকার ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেইসঙ্গে এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। এতে আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রায় দুই মাস পরে বন্যার পানি নেমে যায়। এদিকে বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার তিন বছর অতিবাহিত হলেও আজও ভাঙ্গা স্থান মেরামত করা হয়নি। এ ভাঙন মেরামত না করায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডাঙ্গাপাড়া, ফুলবাড়ি, পশ্চিম-মিরাপুর, উদনপৈয়, মিরাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কোমলমতি শিশুদের এ পথেই স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় যাতায়াত করতে হয়। এ এলাকার লোকজনকে সপ্তায় দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার ভবানীপুর-মির্জাপুর হাটে যাবার জন্য এ পথ ব্যবহার করতে হয়। তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ পথ দিয়েই হাটে বাজারজাত করতে হয়। বন্যায় বাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে তারা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারছে না।
এদিকে এ বাঁধ মেরামত না করার ফলে আগামী বন্যা মৌসুমে আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে এলাকার হাজার হাজার কৃষক তাদের আবাদি ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী গ্রামের খন্দকার জিতু আহম্মেদ জানান, আমরা এ ভাঙন মেরামতের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ অনেকের কাছেই ধর্ণা দিয়েছি। সকলেই আশ্বস্ত করেন। কিন্তু আজও মেরামত না হওয়ায় বর্ষা মওসুমের আগেই আমরা শত শত পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছি। আসন্ন বন্যা মওসুমের আগে বাঁধটি মেরামত না করার ফলে আমাদের মাঠে কোনো আবাদ করতে পারিনি। বর্তমানে বাঁধটি মেরামত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে ভবানীপুর জিএস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, গত ২০১৫ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভাঙার ফলে এ সড়কের উপর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পারাপারের জন্য নৌকায় একমাত্র অবলম্বন । বাঁধটি সংস্কার না করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনার বিঘœ ঘটছে বলেও জানান তিনি। তাই দ্রুত বাঁধটি নির্মাণের জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মো: শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ একটি জনগুরুত্বপূর্ণ। বাঁধটি সংস্কার না করা হলে আবারও আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক হুমকির মুখে পড়বে। এ বাঁধটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনেক বার জানানো হয়েছে। কিন্তু তিন বছর অতিবাহিত হলেও আজও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি তারা। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধটি আমাদের কি না জানা নেই। বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের হলে অবশ্যই সংস্কার করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ