শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ওজন হারালেও সুস্থ আছে উদ্ধার হওয়া থাই কিশোররা

১১ জুলাই, এএফপি, রয়টার্স : থাইল্যান্ডের বন্যা কবলিত পাহাড়ি গুহায় ১৭ দিন আটকা থেকে গড়ে দুই কেজি করে ওজন হারিয়েছে ১২ কিশোর ও তাদের ফুটবল কোচ। 

ওজন হারালেও তারা ভাল আছে এবং তাদের মধ্যে চাপের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বলে বুধবার জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের এক জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার রাতে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী থাম লুয়াং গুহা থেকে ‘ওয়াইল্ড বোয়ার’ ফুটবল দলের অবশিষ্টদের বের করে আনার পর থাইল্যান্ডজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকা লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

গুহা থেকে শেষ দলটিকে উদ্ধারের পর তাদের হেলিকপ্টারে উড়িয়ে ৭০ কিলোমিটার দূরের চিয়াং রাই প্রাচানুকরহ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দলটির আগে উদ্ধার পাওয়া বাকি কিশোররাও ওই হাসপাতালেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক থংচাই লের্টউইলাইরতনাপং বলেছেন, “আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, তারা ভাল অবস্থায় আছে এবং চাপের মধ্যে নেই। গুহার মধ্যেও ওই শিশুদের ভাল যতœ নেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ বালকই গড়ে ২ কেজির মত ওজন হারিয়েছে।”

এদের মধ্যে রোববার প্রথম যে চার কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের বাবা-মা তাদের দেখার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু পূর্ব সতর্কতা হিসেবে তাদের সুরক্ষামূলক পোশাক পরতে হয়েছে এবং সাত ফুট দূর থেকে সন্তানদের দেখতে হয়েছে।

মঙ্গলবার শেষ যে দলটিকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের একজনের ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং পুরো দলের সবাইকে জলাতঙ্ক ও টিটেনাসের টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন থংচাই।

গত ২৩ জুন নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে এক কিশোরের জন্মদিন উদযাপন করতে ১২ সদস্যের ওই কিশোর ফুটবল দল এবং তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচ থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই প্রদেশের ‘থাম লুয়াং’ গুহায় প্রবেশ করেছিল। কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে গুহার ভেতর পানি ঢুকে পড়লে দলটি আটকা পড়ে যায়।

তাদের উদ্ধারের খবর থাইল্যান্ডের খবরের কাগজগুলোর প্রথম পাতার শিরোনাম হয়েছে। ১৭ দিনের রুদ্ধশ্বাস এ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া দেশি-বিদেশি ডুবুরিদের প্রশংসা করে অনেকে তাদের ‘জাতীয় বীর’ আখ্যা দিয়েছেন।

বিস্তৃত এ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া সবাইকে তাদের সাফল্যের আনন্দ উদযাপনে আমন্ত্রণ জানানোর ঘোষণা সোমবারই দিয়েছেন থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা।

বলেছেন,“সব পক্ষের জন্য আমরা ভোজের আয়োজন করব।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভেচ্ছা বিনিময় ও অভিনন্দনের ঢল নেমেছে।

থাইল্যান্ডের এই নাটকীয় উদ্ধার অভিযানের সফলতার উল্লাস রাশিয়ার বিশ্বকাপেও অনুরণন তুলেছে। টুইটারে ‘ওয়াইল্ড বোয়ার’দের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়রা।

সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানো ফ্রান্স দলের মিডফিল্ডার পল পগবার টুইট, “আমাদের জয় আজকের দিনটির হিরোদের জন্য, ভালো করেছ বালকেরা, তোমরা খুব শক্তিশালী।”

যুক্তরাজ্যের ক্লাব ফুটবল দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থাই কিশোর ফুটবল দল ও তাদেরকে উদ্ধারে কাজ করা সবাইকে ‘ওল্ড ট্রাফোর্ডে’ স্টেডিয়ামে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

একটু দেরি হলেই বড় বিপদের আশঙ্কা ছিল

কেউ কউ বলছেন, এটি ছিল ‘মিশন ইম্পসিবল’ ধারার এক অভিযান। সফলভাবে ১২ কিশোর আর তাদের কোচকে বের করে আনার পর আনন্দের বন্যায় ভাসছে থাইল্যান্ড। তবে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, তাদের বের করে আনতে একটু দেরি হলেই বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা ছিল। উদ্ধার তৎপরতায় জড়িতদের উদ্ধৃত করে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, সবশেষ কিশোর বের হয়ে আসার পরপরই গুহার নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পানি বাড়তে শুরু করেছিল। উল্লেখ্য, ওই কিশোরদের অনেকেই সাঁতার জানত না। 

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গুহাটির প্রায় এক মাইল দীর্ঘ অংশে পানি জমে ছিল। আটকে পড়াদের অনেকেই সাঁতার না জানার কারণে তাদের ডুবুরিরা প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্ধারের জন্য তৈরি করেন। উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে পাম্প করে পানি কমানোর ফলে উঁচুনিচু গুহার কিছু জায়গায় হাঁটার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। বুধবারের (১১ জুলাই) উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণকারী তিন অস্ট্রেলীয় ডুবুরিকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সর্বশেষ শিশুটি উদ্ধার হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মূল পাম্পটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আর তাতে দ্রুত পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করে। আর তখনও পবেশপথ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে স্থাপিত ‘তৃতীয় চেম্বারে’ কয়েকজন ডুবুরি ও উদ্ধারকারী সরঞ্জামাদি গুছানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গুহার প্রবেশপথ থেকে ‘তৃতীয় চেম্বার’ বা অভিযান পরিচালনার অঞ্চলে যেতে হলে দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। ‘তৃতীয় চেম্বার’ থেকে শিশুদের কাছে পৌঁছাতে যেতে হয়েছে আরও ১.৭ কিলোমিটার। গত কয়েক দিন ধরে আটকে পড়া শিশুদের গুহার ভেতরে সঙ্গ দিচ্ছিলেন তিন থাই নেভি সিল সদস্য ও এক চিকিৎসক। মঙ্গলবার (১০ জুলাই) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ার সময় তখনও দেড় কিলোমিটারের মধ্যে (তৃতীয় চেম্বারে) পৌঁছাতে পারেননি তারা। দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, তৃতীয় চেম্বারে থাকা কয়েকজন ডুবুরি হঠাৎ চিৎকার শুনতে পান এবং গুহার গভীর থেকে হেড টর্চের আলো দেখেন। দেখতে পান, কয়েকজন উদ্ধারকারী ধীরে ধীরে শুকনা জায়গায় জড়ো হচ্ছেন। এরপর একে একে তারা গুহা থেকে বের হয়ে আসেন। অপেক্ষমাণ উদ্ধারকারীরা তাদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।

অভিযানের প্রথম দিন ৮ জুলাই রবিবার চার শিশুকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর তাদের দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ জুলাই উদ্ধার হয় ওয়াইর্ল্ড বোয়ার্স নামের ওই ফুটবল দলের আরও চার শিশু। তাদের সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গুহায় আটকে পড়ার ১৮ দিনের মাথায় ১০ জুলাই মঙ্গলবার শেষ হয় তিন দিনের উদ্ধার অভিযান। আগের দিন রাতে ভারী বর্ষণ সত্ত্বেও এদিন চার খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে সাতদিন পর্যন্ত তাদের আলাদা করে রাখা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ