খুলনা টেক্সটাইল পল্লী বাস্তবায়নে ধীরগতি
খুলনা অফিস : ধীরে চলো নীতিতেই এগিয়ে চলছে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। প্রথম দফায় সাড়া না মেলায় দ্বিতীয় দফা টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে প্রকল্পটি। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পুন:টেন্ডার হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ কর্পোরেশন বা বিটিএমসি কর্তৃপক্ষ। তবে মামলা জটসহ অন্যান্য ঠুনকো অজুহাতে শুধু প্লট বিক্রি করতেই নয় বছর অতিবাহিত হওয়ায় আদৌ এটি বাস্তবায়ন হবে কি না সেটি নিয়েও সংশয়ে রয়েছে খুলনাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নগরীর বয়রা এলাকায় ১৯৩১ সালে ২৫ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর স্থাপিত আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র কটন মিলটি ১৯৬০ সালে খুলনা টেক্সটাইল মিলস লি. নামে যাত্রা শুরু করে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে এটি জাতীয়করণ হয়। দীর্ঘদিন পর ১৯৯৩ সালে লে-অফ ঘোষণার মধ্যদিয়ে মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তী সরকার ১৯৯৯ সালে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু ২০০১ সাল পরবর্তী সরকার আমলে ওই প্রকল্প স্থবির হয়ে যায়। ২০০৯ পরবর্তী সরকার আবারও প্রকল্পটি চালু করে। তবে এটি বাধাগ্রস্ত হয় মামলার কারনে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে রূপালী ব্যাংক মামলাটি দায়ের করে। মিলের সাথে রূপালী ব্যাংকের সোলেনামা মূলে বিরোধ নিষ্পত্তির পর পুনরায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার আলোকে পরিশোধও করা হয় ব্যাংকের দু’কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পর ১৮ ধশমিক ০২ একর জমিতে ২৪টি শিল্প প্লটে বিভক্ত করে কার্যক্রম শুরু হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত ৪ দশমিক ৬১ একর জমি রাস্তা, মসজিদ, বিদ্যালয়, কবরস্থান, পার্ক এবং ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য রাখা হয়। এ কার্যক্রমের মধ্যে এ পর্যন্ত বিক্রি করা হয় মিল এলাকার যন্ত্রপাতি, ভবন ও গাছপালা। অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে নেয়া হয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। ঠিক এমনই সময় ২০১০ সালে জনৈক মাহমুদ আলী মৃধা হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার নম্বর ৯৮৮০/২০১০। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয় ওই মামলার কারণে। কিন্তু বিটিএমসির ধীরে চলো নীতির ফলেই মামলাটি দীর্ঘদিন চলমান থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ খুলনার জনসাধারনের সাথে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডি.ও লেটার দিয়েও টেক্সটাইল পল্লী বাস্তবায়ন আন্দোলনের সাথে শামিল হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি থমকেই থাকে। সর্বশেষ মামলা নিষ্পত্তির পর প্লট বিক্রির টেন্ডার আহবান করা হলেও কোন প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেনি। এজন্য সম্প্রতি তড়িঘড়ি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্বিতীয় দফার টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
খুলনা টেক্সটাইল পল্লী বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি সত্বেও প্রস্তাবিত টেক্সটাইল পল্লীর সামনের বয়রা মেইন রোড সম্প্রসারণ প্রস্তাব না রেখেই প্লটিং করায় হয়ত প্লট গ্রহীতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। কেননা যেখানে টেক্সটাইল পল্লীর অভ্যন্তরে ৩৫ ফুটের রাস্তার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেখানে সামনের মূল রাস্তা যদি থাকে ২৩ ফুট তাহলে জানযট লেগেই থাকবে এমন আশংকাও করছেন সংশ্লিষ্টরা। সুতরাং বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র, নবনির্বাচিত মেয়র এবং খুলনা-২ ও ৩ আসনের এমপির দেয়া ডি.ও লেটারের ভিত্তিতে রাস্তা সম্প্রসারণ করেই প্লট করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, গত বছর খুলনা সফরকালে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর কাছে দেয়া আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি রাস্তা সম্প্রসারণ করেই প্লট তৈরির নির্দেশ দেন। কিন্তু বিটিএমসির সার্ভে টিমের দ্বিতীয় দফা সার্ভের সময় টিমকে বিষয়টি অবহিত না করায় মেইন রোড সম্প্রসারণের প্রস্তাব না রেখেই সার্ভে সম্পন্ন করা হয়।
পক্ষান্তরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বয়রা মেইন রোড সম্প্রসারণের কাজও সম্প্রতি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বয়রা মেইন রোড সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়ে পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছে। এ রাস্তাটি পুরোপুরি সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে টেক্সটাইল পল্লী এলাকাই মূল বাধা হতে পারে বলেও আশংকা সংশ্লিষ্টদের।
খুলনা টেক্সটাইল মিলের ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, সর্বমোট ২৪টি প্লট করে গত বছর ২৬ নবেম্বর টেন্ডার আহবান করা হলেও কোন প্রতিষ্ঠানই তাতে অংশ নেয়নি। এজন্য নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন করে সার্ভে করেছে বিটিএমসির একটি টিম। তবে নতুন প্রস্তাবনায় প্রতিটি প্লটের মধ্যে কতটি গাছ রয়েছে এবং এর মূল্য কত সেটিও নির্ধারণ করা হয়েছে। হয়ত এবার এর আলোকে আগ্রহী প্লট গ্রহীতারা টেন্ডারে অংশগ্রহণ করবেন।
এ ব্যাপারে বিটিএমসির মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দফার টেন্ডারে আগ্রহী প্লট গ্রহীতারা অংশগ্রহণ না করায় নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই নতুন টেন্ডার আহবান করা হবে বলেও তিনি জানান।