বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অনশনরত ননএমপিও শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রাখার পরামর্শ সচিবের

নন-এমপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন এর উদ্যোগে এমপিওভুক্তির দাবিতে ১৫ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে। ছবিটি গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে তোলা -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতাদের সাক্ষাতের আবেদনপত্র গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরণ অনশনরত শিক্ষকদের আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এমপিওর দাবিতে অনশনরত শিক্ষকদের কাছে যেতে আগ্রহী নন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে প্রয়োজনে শিক্ষক নেতারা তার সঙ্গে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা করতে পারেন। 
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের চার নেতার একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য আবেদন নিয়ে তার কার্যালয়ে গেলে আবেদন গ্রহণ করার সময় তিনি এ পরামর্শ দেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অন্য তিন নেতা হলেন ফেডারেশনের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মো: আব্দুল হামিদ ও প্রচার সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ।
গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অনশনরত শিক্ষকদের এমওিভুক্তির আশ্বাস দেয়া হয়। ওই আশ্বাস পেয়ে অনশন স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। কিন্তু নতুন বাজেটে কোনও অর্থ বরাদ্দ না রাখা এবং নতুন এমপিও নীতিমালা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ফের অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। এমপিওভুক্তির দাবিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনরত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের চার নেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তার টেলিফোন পেয়ে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান।
এমপিওভুক্তির (মানথলি প্যামেন্ট অর্ডার) দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা রাস্তায় নামার টানা এক মাস পেরিয়ে গেছে। গত ১০ জুন থেকে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। প্রতীকী অনশনের পর গত ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষকরা। গতকাল মঙ্গলবার অবস্থান ও আমরণ অনশন কর্মসূচির ১ মাস ১ দিন অতিবাহিত হয়েছে। আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়া এই শিক্ষক-কর্মচারীরা আরও কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছেন।
সংগঠনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার প্রধানমন্ত্রীর ৫ জানুয়ারির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
গতকাল ননএমপিও শিক্ষকদের আমরণ অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম গ্রহণ করে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
এ ছাড়াও এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল) আসনের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। বেলা পৌনে ২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে উপস্থিত হন তিনি। পরে সেখানে সংহতি প্রকাশ ও দাবি বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা রাখার কথাও বলেন। তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি ন্যায্য, তারা বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করছেন যা অমানবিক। সরকারের উচিত দাবি মেনে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।
এমপিওভুক্তির বিষয়ে গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা অনুসরণ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মানথলি প্যামেন্ট অর্ডারের আওতায়) বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, দ্বিতীয় দফায় আন্দোলনের এক মাস পূর্ণ হলো। আমরণ অনশনের ১৫তম দিন হলো। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চলছে। দাবি একটাই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এত দিনেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরণ অনশনের চেয়েও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়। তিনি বলেন, আমরা আর কী করতে পারি? শিক্ষক হয়ে তো আর আন্দোলনের নামে হাঙ্গামা করতে পারি না। অথচ সেই সুযোগটাই বুঝি নেয়া হচ্ছে। আমরা আর কতো সহ্য করবো?
আন্দোলনে গতকাল পর্যন্ত আড়াই শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, গুরুতর অসুস্থ শিক্ষকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ প্রেস ক্লাবের আশপাশের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। টানা অভূক্ত থাকায় অনেক শিক্ষক দূর্বল হয়ে পড়েছেন। দূর্বল হয়ে পড়া শিক্ষকদের শরীরে চলছে স্যালাইন।
অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বলেন, গত ১২ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা হতে পারে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ