শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সিংড়ায় আওয়ামীলীগে স্বস্তি স্থানীয় প্রার্থী চায় বিএনপি

আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া (নাটোর) : নাটোর-৩ সিংড়া সংসদীয় আসন। চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের বৃহৎ উপজেলা এটি। লোকসংখা প্রায় ৫ লাখ। ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা বেশি। এ আসনে উভয় জোটের প্রায় দেড় ডজন প্রার্থী রয়েছে, যারা ইতিমধ্যে উপজেলা ব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
এ আসনটি দীর্ঘ ৩৭ বছর আওয়ামীলীগের বেদখলে ছিলো। ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো নবম সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি জুনাইদ আহমেদ পলক বিজয়ের মাধ্যমে আসনটি বিএনপি জোটের হাতছাড়া হয়।
গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে এলাকার সন্তান হিসেবে সবার মনিকোঠায় জায়গা করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হোন সাবেক ভিপি, চৌকস বক্তা  এবং তৎকালিন সময়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুনাইদ আহমেদ পলক। নবম সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ নির্বাচিত হোন তিনি। তিনি সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমুলক কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামীলীগের সংক্ষিপ্ত  পরিসংখ্যান মোতাবেক ৩৭ বছরের তুলনায় বিগত সাড়ে ৮বছরে সিংড়ায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজের  ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ হয়েছে। তাছাড়া এ আসনে স্বাধীনতার পর প্রথম মন্ত্রী পেয়েছে চলনবিলের মানুষ।
জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়াও এখানে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন সিংড়া পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক। শফিক ১৯৯৬ সালে গোল-ই আফরোজ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৯৮ সালে একই কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০০৯ সালে তিনি সিংড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পর পর তিনবার ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিত্ব করার পরেও তার মাঝে কোনো দম্ভ লক্ষ্য করেনি কেউ। এলাকায় ন¤্র ও ভদ্র নেতা হিসেবে পরিচিত শফিক। সাধারণভাবে জীবন-যাপন করতেই নিজেকে স¦াচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছে প্রায় ১ডজন। সবাই ছুটছেন হাইকমান্ড এর কাছে। নির্বাচনে সবাই দলীয় মনোনয়নে আশাবাদী। তিনবারের সাবেক সাংসদ অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ এ আসনে বিএনপি থেকে  মনোনয়ন চাইবেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদে তিনবার এই আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। খুবই বিনয়ী, ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত কাজী গোলাম মোর্শেদ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য তিনি।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডঃ মজিবর রহমান মন্টুও এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এছাড়া এ আসনে সিংড়া গোল-ই আফরোজ সরকারী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে পৌর বিএনপির সভাপতি দাউদার মাহমুদও বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। তিনি উপজেলা ২০দলীয় জোটের সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। দাউদার মাহমুদ অধিকাংশ সময় সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তরুণ প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তার সমাদরও ব্যাপক। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সাংসদ প্রয়াত আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র প্রয়াত শামীম আল-রাজী’র মৃত্যুর পরে দাউদার মাহমুদ এখন নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখের প্রতিচ্ছবি।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। শামীম ২০০৩ সালে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়। ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের আগে যৌথবাহিনীর হাতে আটক ও ২০১৫ সালের ২৩শে আগষ্ট নাশকতার ২ মামলায় কারা বরণ করেন।
উপজেলা সেচ্ছাসেবকদলের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও রাবি শাখা ছাত্রদলের অর্থ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। কাফি একাধিক মামলায় একাধিবার কারাবরণ করেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন নাটোর জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন। ২০১৫ সালে সিংড়া উপজেলা উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করার সময় সিংড়া থেকে গ্রেফতার হয়।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিশ বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট এম ইউসুফ আলী।
এছাড়াও এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সিংড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডা: নজরুল ইসলাম।  এ আসনে ১৯৯১ সালে আবু বক্কর শেরকোলী জামায়াতের এম.পি নির্বাচিত হয়। তিনি মারা যাওয়ার পর উপ-নির্বাচনে এম.পি হয় বিএনপির কাজী গোলাম মোর্শেদ। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হবেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর, সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যাপক বেলাল-উজ-জামান।
এদিকে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ও ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান।  ইসলামী আন্দোলনের চুড়ান্ত প্রার্থী দলের উপজেলা শাখার সেক্রেটারী শাহ্ মোস্তফা ওয়ালিউল্লাহ সেলিম। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই টেনশন বাড়ছে প্রার্থীদের। নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন প্রার্থীরা। আগামী নির্বাচন ঘিরে আলোচনাও শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগে রয়েছে স্বস্তি। বিএনপি অতিথি পাখি মেনে নেবে না। এর আগে সিংড়ার বাহিরে থেকে নেতৃত্বে দিলেও এবার সিংড়ার বাহিরে থাকা কোনো নেতার নেতৃত্ব মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছে বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূল বিএনপির কর্মীরা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ