শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চলনবিলে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেনি, বাড়ছে বেকারত্ব

সিংড়া (নাটোর) : মৎস্য ও শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল। ঐতিহাসিকভাবে চলনবিলের অধিবাসীদের এক সময় গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু এবং পুকুর ভোরা মাছ থাকলেও আজ তা অতীত। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সাথে চলনবিলের অধিবাসীরা কাঙ্খিতভাবে উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হন নাই। যে কারণে এই এলাকার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দারিদ্র্যের শ্রেণী বৈষম্য। কৃষি, শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসা বাণিজ্যে এ এলাকার জনগণ খুব একটা বেশী অগ্রসর হতে পারে নাই। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলে ও বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ এলাকায় কোন শিল্প, কলকারখানা গড়ে উঠে নাই, এমনকি কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে না উঠার কারণে এ এলাকার জনগণের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব হয়ে উঠে নাই।
এ এলাকার সকল জনগোষ্ঠী একমাত্র কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় অতিবৃষ্টি, বন্যা, খড়া, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, শিলা, ঝড় ইত্যাদির কারণে এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম না হওয়ায় অতি দরিদ্র্যের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের এক অভূত সম্ভাবনার চলনবিলের দারিদ্র্য বিমোচনে  পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবি উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাটির গুনাগুন পরীক্ষা, উন্নত বীজ, সুষম সার, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম), জৈব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার, পতিত জমির সদ্ব্যবহার, সাথী ও আন্তঃ ফসল চাষ, উন্নত কৃষি প্রযুক্তির ব্যবস্থাপনা ও সঠিকভাবে সেচ ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে কৃষির সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ এলাকার জনগণের দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য এবং মানুষ ও পশু পাখির পুষ্টি সরবরাহের জন্য পরিকিল্পতভাবে ফলজ, বনজ এবং কাষ্ঠল জাতীয় গাছের চারা রোপনের জন্য জমির আইলে, বসত বাড়ীর ফাঁকা জায়গায়, উচু পতিত ভিটায় উদ্যোগ গ্রহন আবশ্যক। একই ভাবে উঁচু ভিটাবাড়ীতে নার্সারী এবং শাকসব্জী চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।
সবচেয়ে নিরাপদ এবং স্ব্ল্পতম সময়ে গোবাদী পশু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি কর সম্ভব। একইভাবে চলনবিলে গো-খাদ্যের তেমন অপ্রতুলতা না থাকার কারণে দুগ্ধবতী গাভী পালনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান করা।
চলনবিলের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দিক হলো প্রতিটি বাড়ি বাড়ি হাঁসের খামার গড়ে তোলা। এ অঞ্চলে অসংখ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাল, ডোবা, পুকুর এবং অন্যান্য জলাশয় থাকার করণে হাঁস পালনের মাধ্যমে এ এলাকার জনগণের দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিচ্ছেবেকার যুবকরা। 
‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’ প্রবাদটি প্রযোজ্য চলনবিলের অধিবাসীদের জন্য। মাছ চাষ এবং বাজারজাতকরণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকায় এ এলাকার প্রতিটি পুকুর, ডোবা, জলাশয় ইত্যাদিতে মৌসুমী মাছ মাছ করে বিকল্প কর্ম-সংস্থান এবং দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সনাতনী পদ্ধতিতে মাছ চাষ না করে উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে একক, মিশ্র  ইত্যাদি পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে এ এলাকার যুবকরা স্বাবলন্বীর দিকে নজর দিলে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আধা-শিক্ষিত এবং শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য মোবাইল টেকনোলজি, টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদি বিষয়ে কারিগরী শিক্ষা কেন্দ্র (টিটিসি) থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহন করা যেতে পারে। একইভাবে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহন করে যে কোন একটি পরিবারকে  ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া একটি পরিবারে একজন সদস্যের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ঐ পরিবার আর্থিক এবং সামাজিকভাবে সাবলম্বী হতে পারে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দালালদের খপ্পরে পরে সর্বস্বান্ত না হয়। কারণ এ এলাকার অনেক যুবক বিদেশে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যার সমাধানে দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাত থেকে চলনবিলবাসীকে রক্ষা করার জন্য গণসচেতনা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ