বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

মাদকবিরোধী অভিযানে ১৩ দিনে ১২২ নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: সারা দেশে মাদক নির্মূল অভিযানে দুই জেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর পবা এবং গাজীপুর শহরে নিহত ওই তিনজনই ‘চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারী বলে র‌্যাব ও পুলিশের ভাষ্য। মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে গত ১৩ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, মাদক কারবারিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে গুলী করায় পাল্টা গুলী করছে পুলিশ বা র‌্যাব। কথিত ওই বন্দুকযুদ্ধের মধ্যেই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। 
কয়েকটি ক্ষেত্রে গুলীবিদ্ধ লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের মৃত্যু হয়েছে মাদক চোরাকারবারিদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে।
তবে তাদের ওই বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সমালোচনার মধ্যেও মাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আমাদের সংবাদদাতারা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর কর্ণহার থানার করমজা এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ‘মাদক বিক্রেতা’ নিহত হন। তাদের একজন বেল্লাল ওরফে বেলাল হোসেন (৪০)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের কছের আলী ম-লের ছেলে। অন্যজন একই উপজেলার দবির মোল্লাপাড়া গ্রামের হারুন-অর-রশিদের ছেলে নাজমুল হক (৩৫)।
ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, অস্ত্র ও গুলী জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব-৫ এর সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হাসানুল ইসলাম, সিপাহী আলাউদ্দিন আলী ও কনস্টেবল আব্দুল লতিফ আহত হন। আহত র‌্যাব সদস্যদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। র‌্যাব বলছে, নিহত দুজনই রাজশাহী অঞ্চলের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এদের মধ্যে বেল্লাল ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত। মাদক ও ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে ৬টি করে মামলা ছিল। র‌্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কর্ণহার থানার করমজা এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এই দুজন গুলীবিদ্ধ হন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। রাতে করমজা এলাকায় টর্চের আলো ও কয়েকজন মানুষের আনাগোনা দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায় র‌্যাবের একটি টহল দল। তখন কয়েকজন দৌড়ে পালাতে শুরু করে। এ সময় র‌্যাব তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে অতর্কিত গুলীবর্ষণ শুরু করে। আত্মরক্ষায় র‌্যাবও তখন পাল্টা গুলী ছোঁড়ে। পরে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। তখন ঘটনাস্থলে বেল্লাল ও নাজমুলকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর আহতদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। বন্দুকযুদ্ধ এবং অস্ত্র ও গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে।
রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক নিহত : রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টেশন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম মো. শাহীন (২৫)। তিনি নগরীর চন্দ্রিমা থানার আসাম কলোনি এলাকার হযরত আলীর ছেলে।
রাজশাহী রেলওয়ে থানার পুলিশ জানায়, রাতে বাঘার আড়ানী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি লোকাল ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান শাহীন। ট্রেনের চাকা তার বুকের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে শাহীন ট্রেন থেকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। আবার আত্মহত্যাও করতে পারেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য শাহীনের লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর সংবাদদাতা : গাজীপুরে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের এক এসআই ও ৩ কনস্টেবল আহত হয়েছে। নিহতের নাম কামাল খান ওরফে কামু (৩২)। সে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকার মৃত সিরাজ খানের ছেলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়েরদিয়া গ্রামের মসজিদের পাশের রাস্তা থেকে ৪ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং একটি নম্বর বিহীন প্রাইভেটকারসহ কামাল খান ওরফে কামুকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় রাতেই তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাকে পুলিশের জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। পথে তারা শুক্রবার ভোর রাত আড়াইটার দিকে জয়দেবপুর থানার ভাদুন এলাকায় পৌঁছলে কামালকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য তার সহযোগিরা ডিবি পুলিশকে লক্ষ্য করে অতর্কিতভাবে হামলা করে এবং গুলী বর্ষণ করতে থাকে। এ সময় ডিবি পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলী ছুড়ে। এক পর্যায়ে কামু পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালাতে গেলে সহযোগি মাদক ব্যবসায়িদের গুলীতে আহত হয়। গুলীবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর ডেরিক স্টিফেন কুইয়্যা জানান, বন্দুকযুদ্ধে ডিবি পুলিশের এএসআই কাদের ও ও ৩ কনস্টেবলসহ মোট ৪জন আহত হয়েছে। আহতদের ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কামু এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি। তার বিরুদ্ধে টঙ্গীসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৪টি মামলা রয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ