গত ৪০ বছরে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে মাত্র ১০ বর্গকিলোমিটার ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে গেছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট)-এর পুরকৌশল বিভাগের আয়োজনে “জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল শনাক্তকরণ” (Detection of Bangladesh Coastline Change due to Climate Change) শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৬ মে বুধবার পুরকৌশল বিভাগের সেমিনার কক্ষে উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এতে গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রিয়াজ আকতার মল্লিক। পুরকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ মইনুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী। এতে গবেষণা সহকারী হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক জনাব কে.এম আশরাফুল ইসলাম।এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একাডেমিক পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণার তীর্থস্থান। চুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের সহযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগে চমৎকার সব গবেষণা কর্ম হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসী এখন উদ্বিগ্ন।
বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে গবেষণাধর্মী বক্তব্যের চেয়ে জনশ্রুতিনির্ভর আলোচনা হয় অনেক সময় বেশিই হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পুরকৌশলীদের এ সংশ্লিষ্ট গবেষণার মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে হবে। এই সেমিনার নিঃসন্দেহে তেমনি একটি ফলপ্রসু প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।
সেমিনারে অধ্যাপক ড. মোঃ রিয়াজ আকতার মল্লিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক মিথ (জনশ্রুতি) রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বিগত ৩০-৪০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বড় কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। একইসাথে উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টাল লাইন কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেটা কী ভূমির দিকে যাচ্ছে নাকি সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে- এসব নিয়ে কাজ করেছি। সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ভূমি তলিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায় নি। তবে আমরা এ নিয়ে আরো গভীরতম গবেষণার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সেমিনারে জানানো হয়- সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভূমি তলিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তেমন বড় ধরণের কোন পরিবর্তন দেখা যায় নি। বরং ভূমি তলিয়ে যাওয়ার তুলনায় নতুন করে ভূমি অথবা চর জেগে ওঠার হার তুলনামূলক বেশি। গবেষণায় দেখা যায়, গত ৪০ বছরে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে মাত্র ১০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১.৭৩ বর্গ কিলোমিটার নতুন করে ভূমি জেগে উঠেছে। পাশাপাশি ফেনী জেলায় প্রায় ৬৫ বর্গ কিলোমিটার ভূমি জেগে উঠেছে।