শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শান্তির প্রস্তাব সৎ সাহস নিয়ে গ্রহণ করা সর্বকালের নীতি

২১ মে, আল জাজিরা : মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী তার কারাবাস, গণতন্ত্র এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন।

সমকামিতার অভিযোগে একদা জেলে যাওয়া আনোয়ার ইব্রাহিম এখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অপেক্ষায়।

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক নির্বাচনে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা শাসক দল ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।

৯২ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ আবারো দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন।

তিনি ইতোমধ্যে দেশটির জনপ্রিয় নেতা সাবেক রাজনৈতিক বন্দী আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাবেক এই মিত্রকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে মাহাথিরের হাত ছিল বলে সমালোচকরা বলে থাকেন।

তাদের মিত্র জোট মালয়েশিয়ার মর্যাদা ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। পাশাপাশি ভুয়া খবরের আইনসমূহ পুনর্বিবেচনা এবং পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ার ‘নতুন ভোর’ সম্পর্কে আনোয়ার ইব্রাহিম যা বলেছেন, তা হচ্ছে:

আল জাজিরা: একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে আপনার অনুভূতি কি?

আনোয়ার ইব্রাহিম: আমি যেমন বলেছি, যখন কেউ কারারুদ্ধ হওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করবে অথবা প্রথমে উপনিবেশ জীবন এবং তারপর মুক্ত হলেই কেবল সে স্বাধীনতাকে প্রশংসা করতে পারবে। এখানে আপনি বাইরের বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন।

এজে: আপনি ডা. মাহাথিরের সঙ্গে কাজ করার জন্য একটি চুক্তি করেছেন- যিনি এর আগে আপনাকে বরখাস্ত করেছেন, আপনাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে ‘দেশ শাসনের জন্য নৈতিকভাবে অযোগ্য’ বলে অবহিত করেছেন। আপনি কিভাবে তাকে বিশ্বাস করতে পারেন?

এআই: এটা আজ থেকে ২০ বছর আগের কথা। এর মধ্যে অনেক সময় গড়িয়েছে এবং এখানে অনেক কিছু রক্ষা করার বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। যেমন: দেশকে সীমাহীন দুর্নীতি থেকে রক্ষা করা, দেশের অধঃপতন রুখে দেয়া ইত্যাদি। এসব বিষয়গুলো নিয়ে তিনি আমার কাছে এসেছিলেন এবং আমাকে মিত্রতার প্রস্তাব করেন।

তাই আমি একজন মুসলমান হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে, এটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করি। কেউ যদি আপনার সঙ্গে শান্তির প্রস্তাব দেন, তবে তা সৎ সাহস নিয়ে আপনার গ্রহণ করা উচিত এবং এটাই হচ্ছে সর্বকালের নীতি। কিন্তু আমরা কি বিশ্বাস করতে পারি? হ্যাঁ, এটা সময় লেগেছে। এটি একটি যন্ত্রণাদায়ক সিদ্ধান্ত ছিল। এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল।

আমাদের মধ্যেকার বৈঠকগুলোতে আমি তাকে বলেছিলাম- আপনি জানেন আমি আপনাকে ‘ডক’, ডক্টর বলে ডাকতাম। কিন্তু এখন আমি তাকে তুন বলে ডাকি। আপনি জানেন যে তুন মানে হচ্ছে- এটি খুবই কঠিন এবং পরিবারের জন্য আরও কঠিন। কিন্তু আমরা মেনে নিয়েছি এবং তিনি তার দায়িত্বতার প্রমাণ দিয়েছেন।

তিনি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলেন। তিনি আমার মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। তিনি আমার মুক্তির প্রক্রিয়াটি সহজ করেছেন, যেটিকে অবশ্যই মানুষ বলছে, এটা শুধু টেকনিক্যাল। যাইহোক, আমার মুক্তির জন্য পথ তৈরি করে দেয়ার পর আমি মনে করি তাকে অবিশ্বাস করার আর কোনো কারণ নেই।

এজে: আবারো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য আপনি কি কারো সঙ্গে চুক্তি করতে ইচ্ছুক ছিলেন?

এআই: নীতিটি হচ্ছে এজেন্ডার। যদি কেউ সংস্কার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, যদি কেউ অবিচারের সমাপ্তি ঘটানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, যদি কেউ জনগণের নিপীড়নকে থামানোর জন্য নিশ্চয়তা দেন, সেক্ষেত্রে একজন আনোয়ার হিসেবে নয়, একজন ব্যক্তি হিসাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বা নির্দেশ করা উচিত।

এটি হচ্ছে জনগণ যারা হঠাৎ করেই বুঝতে পেরেছিল যে, এই চরম দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন থেকে একটি নতুন স্বাধীন সরকারে পরিবর্তন করার সময় এসেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে মালয়েশীয়রা ভোটের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদেরকে বেশ সাধারণ বলে মনে হয়েছে। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ভুল করেন নি।

এজে: মালয়েশিয়ার যুব শক্তি নতুন এই জোটকে ক্ষমতায় এনেছেন। আপনি এখন ৭০ বছর বয়সী, মহাথিরের বয়স ৯২, যিনি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নেতা। ভবিষ্যতে মালয়েশিয়াকে নেতৃত্ব দিতে পারে এমন কেউ কি নেই?

এআই: এখানে অনেক দক্ষ যুবক আছে। আমাদের চুক্তিতে তরুণ নেতাদের সম্পর্কে আমি মাহাথিরকে বলেছি। তাদেরকে প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

আমাদের ‘জাস্টিস পার্টি কিয়েদিলান’ পার্টিতে আপনি দেখতে পাবেন অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, মূল নেতারা সবই তরুণ।

এজে: কিন্তু আমরা ডাইম জাইনউদ্দিনের মতো একই পুরানো মুখ দেখেছি, যাকে আপনি মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে অভিযোগ করেছিলেন। এই সরকারের নতুনত্বটা তাহলে কি?

এআই: তাকে কেবল একজন উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এটা মহাথিরের সিদ্ধান্ত। তিনি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কিছু ধারণা দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু আমি প্রকাশ্যে সতর্ক করেছি। আমি তাকে বলেছি, ‘দেখো, আপনি ধারণা দিতে পারেন কিন্তু আপনার অতীতের কলঙ্ক এবং দুর্নীতির কথা স্মরণ রাখতে হবে।’

কিন্তু আমি এটা প্রকাশ্যে বলেছি কারণ এটি অন্যান্য নেতাদের জন্য এটা বলা সহজ নয়। আমি বলেছি, এটা মহাথিরের সিদ্ধান্ত হলেও আমি এটা নিয়ে নিতে পারি।

তিনি যে দুর্নীতি করেছিলেন তা আমরা স্বীকার করছি। তার অতীতের জঘন্য কাজের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তার কাছ থেকে পাওয়া ধারণাগুলি সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করতে হবে।

এজে: সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ব্যক্তিগত বাসভবনে অভিযান চালানো হয়েছে। আপনি আর্থিক দুর্নীতি, সংবিধানকে দুর্বল করা, বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। নাজিবের অপরাধ কি ক্ষমার যোগ্য?

এআই: এটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় চলবে। আমাকে অন্যায়ভাবে কারাদ- দেয়া এবং আমার বিরুদ্ধে সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করার আমি তার অপরাধ সম্পর্কে বলেছি। যাইহোক, আমি তাকে তাড়া করতে যাচ্ছি না।

তদন্তের নিরিখে এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্ভাব্য অভিযোগ অনুযায়ী তার বিচার চলবে।

জনগণ আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, কেন তার বিরুদ্ধে খুব তারাতাড়ি পদক্ষেপ নিচ্ছি না? আমি তাদের বলেছি, আমি এটা করব, তবে ভিন্নভাবে। আমি মনে করি আমাদেরবে কিছুটা সামঞ্জস্য করে নেয়া প্রয়োজন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ