শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি হলে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার : প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীরা। সাইবার অপরাধের শিকার হওয়াদের ৪৪ শতাংশই মনে করেন,সাইবার অপরাধীদের তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেওয়া গেলে দেশে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। বাকিদের মধ্যে ২৯ শতাংশের পরামর্শ হলো আইনের প্রয়োগ বাড়ানো। ২৭ শতাংশ সচেতনতা গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলছেন, সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় সচেতনতা দরকার। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে সাইবার অপরাধ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ)। অনুষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইলেকট্রনিক সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক যুগ্ম সচিব আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান এবং সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা এ কে এম নজরুল হায়দার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সংগঠনটির তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী মুস্তাফিজ।  গত ২ বছর ধরে ব্যক্তি পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে দক্ষ পর্যালোচনা এবং তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে ১৩৩ জন ভুক্তভোগীকে ৯ টি প্রশ্ন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ ব্যবহার করে থাকেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ১৫। এই ব্যবহারকারীদের বিশাল অংশ তরুণ, যাদের বয়স ১৮-২৪ বছর। ৭৮ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ শতাংশ নারী। তবে অসচেতনতার কারণে সম্প্রতি এই মাধ্যমটি ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠছে। ফলে এদের একটি বড় অংশ সহজেই দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সাইবার হামলার শিকার হচ্ছেন। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩ দশমিক ৭১ শতাংশ ৩০ থেকে ৪৫ বছর ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ৪৫ বছরের বেমি ৩ শতাংশ।
অ্যাকাউন্ট জাল ও হ্যাক করে তথ্য চুরির মাধ্যমে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ বাংলাদেশের নারীরা। গড়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হন ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ নারী। একই ধরনের অপরাধের শিকার হন ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ পুরুষ।
গবেষণা জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২১ শতাংশের মধ্যে ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নালিশ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর ২৩ শতাংশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ে পুরো বিষয়টিই চেপে যান। অন্যদিকে সামাজিক ভাবমর্যাদা রক্ষায় পুরো বিষয়টি গোপন রাখেন ১৭ শতাংশ এবং প্রভাবশালীদের ভয়ে নিশ্চুপ থাকেন ৫ শতাংশ ভুক্তভোগী। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে অভিযোগ করেও আশানুরূপ ফল পাননি ৫৪ শতাংশ ভুক্তভোগী। অবশ্য ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী ফল পেলেও ৩৯ শতাংশই এ বিষয়ে নীরবতা পালন করেছেন। আর ৩৭ দশমিক ৬১ শতাংশ ভুক্তভোগী প্রতিকারের জন্য প্রণীত তথ্য-প্রযুক্তি আইন সম্পর্কে জানেনই না।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইলেট্রনিক সার্টিফিকেট দাতা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক (যুগ্ম সচিব) আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এক জরিপে উঠে এসেছে, নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীরা সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন বেশি। আমরা ইতোমধ্যে ১০০টি স্কুলে সচেতনতামূলক বই বিতরণ করেছি। এই বই শুধু ছাত্রীদের জন্যই নেয়, তাদের বাবা-মা, ভাইদের পড়ার জন্যও।
তিনি বলেন, ‘যদি সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়, তাহলে ৫০ শতাংশ অপরাধ এমনিতেই কমে আসবে। এছাড়া ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ৯৯৯ জরুরি সেবা ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন তো আছেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম বন্ধে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আগে যে সম্পর্ক কিংবা লেনদেন ৬ মাসে হতো, ডিজিটাল অনলাইনের যুগে এখন একঘণ্টায় হয়। অল্প সময়ে অনেকে কিছু চিন্তা-ভাবনা না করেই অনেক কথা বলে ফেলেন। এরপরই তারা সাইবার হামলার শিকার হন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ সাইবার অপরাধ ফেসবুককেন্দ্রিক। আইসিটি বিভাগকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে, যেন কেউ হামলার শিকার হলে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ