প্রেমে দ্রোহে মৃত্তিকার কবি রফিক লিটন
তাজ ইসলাম: সমগ্র পৃথিবী একটি বাগান। বাগানে শত বৃক্ষ, শত ফল, শত ফুল। একেক ফলের একেক স্বাদ,একেক ফুলের একেক ঘ্রাণ, বৃক্ষেরও আছে বিচিত্র মনোলোভা দৃশ্য।
এই যে স্বাদে রূপে ঘ্রাণে বিরাজমান ভিন্নতা,এটিই স্রষ্টার রহস্যময় সৃজন ক্ষমতা। কবির মনোজগতে আছে স্রষ্টা প্রদত্ত সেই সৃজন সত্ত্বা। যার বদৌলতে তিনি নির্মাণ করেন সুশোভিত কাব্যসমাহার। প্রথমত একবাক্যে কবিতা রচয়িতাকে বলা যায় যে, তারা কবি। তবে একেকজন কবির কবিতাতে আছে ভিন্ন স্বাদ,ভিন্ন মেজাজ,ভিন্ন ম্যাসেজ। বস্তুুত সকল কবির কবিতাতেই আছে ভিন্নতা,আছে সৃজন দক্ষতার বৈচিত্রতা। মেধাহীনদের কথা অবশ্য ভিন্ন। রফিক লিটন মেধাবী তরুণ কবি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ প্রেমে তুমি দ্রোহে তুমি “ মেজাজ ম্যাসেজে অন্য রকম অনুভূতি নিয়েই হাজির হয়েছে কবিতার দহলিজে। পাঠকমাত্রই তার কবিতা পাঠে পুলকিত হবে বলে আশা করা যায়। রফিক লিটন কবি,তারও আগে তিনি মানুষ। মানবিক সব দোষে গুনেই গড়ে ওঠে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। ভালবাসা, প্রেম মানব জনমের এক অপরিহার্য্য অনুষঙ্গ। কবির আকুলতা তাই তার প্রেমিকার প্রতি “ আফ্রোদিতি, ভুল করে চাই তোমাকেই/ জোলেখার মত যদি ভালোবাসা দিতে/( উপকারীকে বাঘে খায়)।
খরায় জরায় অগ্নিদগ্ধ ইনসান,বিপন্ন মানবতা, বিরহের বিষাদগীতি,শঠতা,প্রেমের নামে ছলনা, জীবনের দূূূর্বিসহ যন্ত্রণা, যাপিত জীবনে ন্যুনতম উপলব্ধিতে যখন টের পান “ যৎসামান্য বাসা ভাড়া,তাও বাকি “ তখন কবির কন্ঠে নৈরাশ্যের প্রতিধ্বনি বেরিয়ে আসে “ ঈশ্বরের প্রতি আস্থা / সূচকের তলানিতে এসে আসন গাড়ল / “ স্বভাবতই প্রশ্ন আসে তাহলে কি কবি ক্রমান্বয়ে ঈশ্বরে অনাস্থায় স্থীর হয়ে গেছেন! এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য রফিক লিটনকে অধ্যায়ন করা জরুরি। কৌতুল নিবৃত্ত হবে তার “তোমার কাজে সকাল- সাঝে / সিজদায় পড়ি আমি / তোমার প্রেমে অন্তর কাঁদে / তুমি অন্তর্যামী। / প্রেমে তুমি দ্রোহে তুমি নেইতো দ্বিধাদ্বন্দ্ব / এ ব্রম্মান্ডের যেদিক দেখি / অপার তোমার ছন্দ। / ( প্রেমে তুমি দ্রোহে তুমি)। এখন আমরা নিশ্চিত হতে পারি কবির বিশ্বাস নিয়ে, ¯্রষ্ঠার প্রতি বিশ্বাসে কবির কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। তিনি বিশ্বাসী কবিদেরই একজন তরুণ প্রতিনিধি।
কবিদের কাছে অভিজাত কাব্য টেকনিক হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত সনেট ফর্ম। রফিক লিটন সে ফর্মে তার দক্ষতার প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছেন। লিখেছেন অনেকগুলো সনেটধর্মী কবিতা। অবশ্য এ নিয়ে আলোচনারও অবকাশ আছে বৈ কি। গুনীজন বলেন কেবল অষ্টক আর ষষ্টকে ভাগ করলেই সনেটের শর্ত পূরণ হয় না। বোঝাই যাচ্ছে সার্থক সনেটের জন্য আরো কিছু শর্ত রয়ে গেছে। রফিক লিটনের সনেটগুচ্ছ বোদ্ধামহলের নজরে আসুক, আলোচনায় আসুক তাদের বয়ানে তবে নিঃসন্দেহে রফিক সাহসের সাথেই চালিয়েছেন তার প্রতিভাবান কলম। সে কলমে বেরিয়ে এসেছে তার কবিতার ফসলের সম্ভার।
“ প্রেমে তুমি দ্রোহে তুমি “
কবিতার বইখানি তাকে চিহ্নিত করবে সম্ভ্রান্তদের একজন হিসেবে।
সজ্ঞানে শহিদ হয় যে, সে- ই মরদ-/ মননে
মজ্জায় সুন্দর চির সুন্দর / (সুন্দরের প্রতি)
এই কবিতারই আরও দুটো চরণ উল্লেখ করি.. “পিচ্ছিল পথে হেঁটে দু ‘পা হেরা গুহায় / এ জনম দিয়েছি ঈমানের খুঁটিরে। “
এ পর্যন্ত পাঠ করে আমি একজন
পাঠক হিসেবে ধারণা করতে পারি এ কবিতার রচয়িতা হেরার আলোয় আলোকিত,হেরার আলোর পক্ষের একজন শব্দ সৈনিক এবং তিনি যে সব শব্দ কবিতার শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন তাতে ধারণা আরো মজবুত হয়। “ সজ্ঞানে শহীদ হয় যে, সে- ই মরদ “ এটি সে পথের যাত্রীর বলিষ্ট উচ্চারণ। হেরার জ্যোতির কথা এসেছে যখন, তখন আরেকটু বলতে হয় হেরার আলোয় স্নান করেছিলেন কবি হাসান ইবনে সাবিত। তিনি কবিতা লিখতেন। তার কবিতা রাসুল (সাঃ) পছন্দ করতেন। তাঁকে স্থান করে দিলেন মসজিদে নববীতে। এ পথের পথিকের জন্য এটি একটি মডেল। শক্তিশালী শব্দশিল্পী ছিলেন ইমরুল কায়েস। লিখতেন কালোত্তীর্ন কবিতা কিন্তু সে শব্দে অশ্লীলতা কিলবিল করতো। শিল্পে তার স্বীকৃতি থাকলেও হেরার তোরণ তাকে গ্রহণ করেনি। এটি আরেকটি মডেল। আপনার জন্য স্বাধীনতা আছে কোনটি গ্রহণ করবেন। আপনি যখন স্বীকার করবেন “তাকওয়া অর্জন কাক্সিক্ষত লক্ষ / এর মধ্য দিয়ে সৌন্দর্য মেলে ধরি / ( কুরবানি)।
তখন ভাবতে হবে আপনার ভক্তের কথা,পাঠকের কথা,বন্ধু সতীর্থের কথা। তাদের রুচি ভালবাসার কথা। কবিতাতো সভ্য রুচিশীল, সচেতন বিবেকের ভাবনা মিশ্রিত পঙক্তি। এবং পুস্তক সেতো আপনার বর্তমানকে অতিক্রম করে ভবিষ্যতের আপনার উপস্থিতি। আজ যা প্রকাশ হলো তা আপনাকে পরিচিত করবে যুগযুগান্তর।
সালাত, সাওম, দরুদ, ফেরেশতা, এজাতীয় শব্দের আভিধানিক অর্থের তুলনায় পারিভাষিক অর্থের ব্যাপ্তিই ব্যাপক। একজন কবি বা সৃজনসত্তার যে কেউ উপমা বা রূপকার্থে ব্যাবহারের সময় অবশ্যই কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কেননা এখানে বিশ্বাসের বিষয়টিও জড়িত। রফিক লিটন বিশ্বাসী কবি। তাই তার কবিতায় বিশ্বাসের সাথে জড়িত শব্দ সমুহের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। জ্যামে আটকা পড়ে পিপাসায় যখন কাতর হন তখন ধৈর্যের “খানিক বাদে চিৎকার করি /
তারপর ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি। “
প্রতিনিয়ত নিহত হচ্ছে কারো না কারো স্বপ্ন, গ্রাস করছে সম্ভাবনার রাজ্যকে হতাশায়, সম্মুখে আশার দরওয়াজা ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে ক্ষীণ, নাগরিক জীবনের সংকট সমাধানে রাষ্ট্র দায়বোধে নির্বিকার। তাই কবির স্বগতোক্তি “ এমন ধ্বজ ভঙ্গ রাষ্ট্র আমি চাই নি / মৌল মানবিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত / (জনবিচ্ছিন্ন তরী)।
তরুণ প্রতিভাবান এ কবি ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা একজন সূধীজন। সাংবাদিকতা তার পেশা। তার কবিতার বইখানি পড়ে দেখুন। দেখবেন একজন তরুণের কলমে বেরিয়ে আসছে কাব্যিক স্ফুলিঙ্গ। তার ৪৮ পৃষ্ঠার বইয়ে স্থান পেয়েছে ৪২ টি সুখপাঠ্য কবিতা। বইটি প্রকাশ করেছে ইনভেলাপ পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ ধ্রুব এষা মুল্য ১২০ টাকা।