বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

চরমপন্থি-সন্ত্রাসীরা মহড়া দিচ্ছে ভোট ডাকাতির আশংকা

খুলনা অফিস : খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, ‘সরকার কেসিসির ভবিষ্যৎ নগর পিতা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। কেসিসি নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি পরীক্ষা হলেও ইতোমধ্যেই তারা ফেল করেছে।’ তিনি জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে না নিয়ে জনগণকে ফিরিয়ে দিয়ে ভীতিমুক্ত উৎসবমুখর পরিবেশে নগর পিতা নির্বাচিত করার পরিবেশ তৈরি করতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। গণগ্রেফতার ও পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর মিয়াপাড়ায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র প্রার্থী হিসেবে মঞ্জু ভোট ডাকাতির আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। জনগণ ও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনাও ছিল। নগরবাসীরও স্বপ্ন ছিল ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার। কিন্তু সরকার একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচনের আয়োজনে সবকিছুই ভেস্তে যেতে বসেছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের অতিউৎসাহী ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা ভোট ডাকাতির নির্বাচনের আয়োজনকে আরো ত্বরান্বিত করেছে।’
নগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর, টুটপাড়া, লবণচরা ও বানিয়াখামারসহ বিভিন্ন এলাকায় ভোট ডাকাতির আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই চরমপন্থি-সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা এসব এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। আগে থেকেই ব্যালট বাক্স ধরে রাখা, ভোটের আগের রাতে বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃস্টি এবং নেতা-কর্মীদের ওপর আরো কঠিন আঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা মহানায়কের ভূমিকা পালন করছে। সরকার বিএনপিকে বাইরে রেখে এক দলীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ দেশপ্রেমিক পুলিশ এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু কেসিসির শতভাগ ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এখনো সময় আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এখনই সকল ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী এবং প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করুন।’ একইসঙ্গে তিনি প্রতিটি কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের অবস্থান করে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
তিনি জানান, মেয়র প্রার্থী হিসেবে তিনি নিজেও শঙ্কামুক্ত নন। সাত দিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। শনিবার রাতেও হাজার হাজার কর্মীর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। নতুন করে আরো ১১ জনসহ দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্বাচনী এজেন্ট ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে গোটা নগরীতে আতঙ্ক ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নগরবাসী সার্বিক পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারপরও নগরবাসী ধানের শীষে ভোট প্রদানের মাধ্যমে আওয়ামী দুঃশাসনের সাড়ে নয় বছরের জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি ও তার দলের নেতা-কর্মীরা গত ১০ দিনে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখানো হচ্ছে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন নারী পুলিশ বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে নেতা-কর্মীদের পরিবারের নারী সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এজন্য সরকার, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কেউ দায় এড়াতে পারবে না। কারণ অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাক, এটি নগরবাসীর কাক্সিক্ষত নয়।’
নজরুল ইসলাম মঞ্জু আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে কেসিসি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে একটি করে ভোট প্রদানের জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, বিজেপির মহানগর সভাপতি এডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, জাপা (জাফর) মহানগর সভাপতি মোস্তফা কামাল, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, এডভোকেট বজলুর রহমান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা নাসির উদ্দিন, হাফেজ ওয়াহিদুজ্জামান, মুসলীম লীগের এডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, বিজেপির নগর সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, শফিকুল আলম তুহিন, শামসুজ্জামান চঞ্চলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ব্রিফিং শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন।
সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা
করুণ; ভোট কেন্দ্রে যান
একদিকে মেঘের গর্জন, বজ্রের ঝলসানি আর বৃষ্টির হানা, অন্যদিকে পুলিশ-ডিবির হাতে গণগ্রেফতারের আতংক। সাথে রয়েছে এলাকায় এলাকায় শাসক দলীয় প্রার্থীর কর্মীদের চোখ রাঙ্গানি, দেখে নেয়ার হুমকি আর নানা রকম ভীতি। সব কিছুকে মাথায় রেখেই কর্মীদের সতর্ক পদচারণা। এভাবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগে শেষ দিনের প্রচারণা চালালেন বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। নগরীর প্রবেশদ্বার খানজাহান আলী সেতু থেকে শুরু করা গণসংযোগ চলেছে দিন পেরিয়ে মাঝ রাত অবধি। এ সময় জনগনের উদ্দেশ্যে তার দৃপ্ত উচ্চারণ- আপনারা ভয় পাবেননা। হতাশ হবেননা। সাহসের সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করুণ। দলবদ্ধ হয়ে ভোট কেন্দ্রে যান। ধানের শীষে আপনার ভোট প্রয়োগ করুন। কোন শক্তি নেই জনতার সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে পরাস্থ করতে পারে। মঞ্জু বলেন, তাদের উন্নয়নের গালগল্প জনগন প্রত্যাখ্যান করেছে। উন্নয়নের নামে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ এনে লুটেপুটে খাওয়াই আওয়ামী লীগের ধর্ম। দেশের মানুষ তা জেনে গেছে। শহরে মাদক ব্যবসা, জমি দখল, ব্যবসা দখল, টেন্ডার সিন্ডিকেট, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আদায়, বাস টার্মিনাল দখল করে কারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করে তাও সবার জানা। নজিরবিহীন লুটপাটের এই সরকারকে জনগন আর ক্ষমতায় দেখতে চায়না। তারা উন্নয়নের মিথ্যা গল্প নয়, বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করে এবারের নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিতে চায়। মঞ্জু বলেন, জনগনের এই চাওয়াটা শাসক দল সমর্থিত প্রার্থী টের পেয়েছে। আর তাই খোদ প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যকে বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে খুলনায় পাঠানো হয়েছিল। তিনি প্রশাসনের সব মহলে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য। তাতেও লাভ হচ্ছেনা দেখে পুলিশ ও ডিবি লেলিয়ে নগরী জুড়ে বিভিষীকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ভোট দেয়ার আহবান জানান। 
গণসংযোগ কর্মসূচিতে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা এ কে এম আইয়ুব আলী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলান এমদাদুল হক, বিজেপি নগর সভাপতি এডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, মুসলিম লীগের মহানগর সভাপতি অধ্যাপক ফকির রেজাউদ্দিন রাজা, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, জেপি জাফর সভাপতি মোস্তফা কামাল, সিরাজউদ্দিন সেন্টু, মাওলানা নাসিরউদ্দিন, এডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, বিএনপি নেতা এডভোকেট বজলুর রহমান, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, ফখরুল আলম, শেখ আব্দুর রশিদ, শফিকুল আলম তুহিন, আজিজুল হাসান দুলু, হাসানুর রশিদ মিরাজ, শরিফুল ইসলাম বাবু, আফসারউদ্দিন মাস্টার, শহিদ খান, এ কে এম সেলিম, জাহিদ কামাল টিটু, রুহুল আজিম রুমি, এডভোকেট ইমদাদুল হক হাসিব, সাব্বির হোসেন, শেখ জামালউদ্দিন, বাচ্চু মীর প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ