শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সাংবাদিক হত্যার বিচার নিভৃতে কাঁদছে

স্টাফ রিপোর্টার: প্রযুক্তির বিপ্লবের এ যুগেও সাংবাদিকতা পেশা হুমকিমুক্ত হয়নি। সবচেয়ে বড় হুমকি আসে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সাংবাদিকদের লেখনি বন্ধে পায়তারা চলছে। না শুনলে নেমে আসছে নির্যাতন। এমনকি হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করা হচ্ছে না। রাষ্ট্র ব্যবস্থা ঘুনে ধরেছে। সাংবাদিক হত্যার বিচার করার কেউ নেই। সরকার চায় না সাংবাদিক হত্যার বিচার হোক। পুলিশ তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করছে। বিচারপতি বিচার কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। সাংবাদিক হত্যার বিচার নিভৃতে কাঁদছে। বিচার পেতে হলে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে কাগজ কলম ও দৈনিক একাত্তর বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতিই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রধান অন্তরায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ সব মন্তব্য করেন।
দৈনিক একাত্তর বাংলাদেশের প্রধান সম্পাদক মো. সদরউদ্দিন চান্দুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের মহাসচিব ওমর ফারুক, সাবেক সহ-সভাপতি ড. উৎপল সরকার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি তরুণ তপন চক্রবর্তী, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. শেখ রেজাউল ইসলাম প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক কামরুদ্দীন হীরা।
ওমর ফারুক বলেন, বিচারহীনতার যে সাংস্কৃতি শুরু হয়েছিল তা আজও বিদ্যমান। বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যার বিচার আমরা আজও পায়নি। যে পুলিশ তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করে তার চাকরি থাকে কি করে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকার চেয়ে মফস্বলে সাংবাদিকরা বেশি অনিরাপদ। তারা আজ বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। কেননা দুর্বৃত্তরা তাদের বাড়ি-ঘর চেনে। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া এ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
তরুণ তপন চক্রবর্তী বলেন, সত্য কথা লেখার কারণে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা ঘুনে ধরেছে। সাংবাদিক হত্যার বিচার করার কেউ নেই। সরকার চায় না সাংবাদিক হত্যার বিচার হোক। পুলিশ তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করছে। বিচারপতি বিচার কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। সাংবাদিক হত্যার বিচার নিভৃতে কাঁদছে।
সরকার কিংবা বিরোধী দল সবাই সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ মনে করে। আমাদের কথা কেউ শুনতে চায় না। এ জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মরতে একদিন হবেই। তাহলে সত্য লিখেই মরবো। ভয় পেলে চলবে না। বিচার একদিন হবেই।
আবু জাফর সূর্য বলেন, কালো টাকার মালিকেরা তাদের পুঁজি পাহারা দিতে গণমাধ্যমের নিবন্ধন নিচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে তাদের ইচ্ছামতো সংবাদ পরিবেশন করতে সাংবাদিকদের বাধ্য করছে। এভাবে মুক্ত সাংবাদিকতার পথ বন্ধ করা হচ্ছে। এ জন্য দরকার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিককে তাদের পাওনাদি না দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা মামলা করলে তা ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য সাংবাদিকদের জন্য আলাদা শ্রম আইন এখন সময়ের দাবি।
সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। অথচ দীর্ঘ ৪৮ বছর পার হয়ে গেলেও সংবিধানের কোথাও সে কথা লেখা হয়নি। শুধু মুখে মুখেই রয়ে গেছে। সংবাদপত্রকে আলাদা শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু তার কোনো নীতিমালা আজও তৈরি করা হয়নি। সেটা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। যে দিন থেকে গণমাধ্যম ব্যবসায়ীদের কাছে চলে গেছে সেদিন থেকেই সংবাদপত্র শিকলে বাধা পড়ে গেছে। মালিক পক্ষ এবং মালিকপক্ষের কিছু দালালরা এটাকে আটকে রেখেছে। এখান থেকে সংবাদ মাধ্যমকে মুক্ত করতে হলে সংঘবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির বিপ্লবের এ যুগেও সাংবাদিকতা পেশা হুমকিমুক্ত হয়নি। সবচেয়ে বড় হুমকি আসে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। সাংবাদিকদের জন্য কালো আইন ৫৭ ধারার অপব্যবহার করে অনেক সাংবাদিককে জেলে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে বাধা দিতেই এ আইন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে উন্নয়ন আটকে যাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ