গাজীপুরে ভোট স্থগিতে সরকারের হাত নেই -আওয়ামী লীগ
স্টাফ রিপোর্টার : ভোটের নয় দিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতাদেশের ক্ষেত্রে সরকারের হাত থাকার অভিযোগ নাকচ করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, “আদালত স্বাধীন। আদালত রায় দিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের কিছু করার নেই।” গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের রিট আবেদনে হাই কোর্ট ভোট স্থগিত করে। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আদালতের রায়ে ভোট স্থগিত হয়েছে।
রোববার হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ আসার পরপরই গাজীপুরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এ পেছনে সরকারের হাত রয়েছে।
ঢাকায় আওযামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশের নির্বাচনী অফিসে দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির এক বৈঠক শেষে হাছান মাহমুদের কাছে এর প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, এটি নিয়ে আগেও একবার মামলা হয়েছিল। সেটাতে হাই কোর্টের কিছু নির্দেশনা ছিল। “যতটুকু জেনেছি, ছয়টি মৌজা যেটা সাভারের অংশ ছিল, সেটি গাজীপুরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ছয়টি মৌজার কারণে দুটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তারা দ্বৈত ভোটার হয়ে গেছে এবং ট্যাক্সের কিছু ব্যাপার দেখা দিয়েছে।” আদালতের উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকার কথা জানিয়ে হাছান বলেন, “আদালত যে কোনো জায়গায় যে কোনো কিছুর উপর রায় দিতে পারে। আদালত সরকারের বিরুদ্ধেও রায় দিয়েছে।”
আগামী ১৫ মে ভোটকে সামনে রেখে খুলনার পাশাপাশি গাজীপুর ছিল প্রচারে সরব। আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে লড়াই নিয়ে গোটা দেশবাসীরই দৃষ্টি ছিল। সাড়ে ১১ লাখ ভোটারের এই নগরে নির্বাচনের ফলাফল দুই প্রধান দলের জনপ্রিয়তা প্রমাণের সুযোগ ছিল। কিন্তু ভোটের নয় দিন আগে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের আবেদনের পর রোববার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ভোটে তিন মাস স্থগিত করে।
বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, আওযামী লীগ পরাজয়ের ভয়ে দল সমর্থিত চেয়ারম্যানকে দিয়ে রিট আবেদনে এই নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে। হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে প্রচ- আশাবাদী ছিলাম।” পার্বত্যাঞ্চলে সাম্প্রতিক সংঘাতের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াও জানান আওযামী লীগ নেতা।
‘হাছান মাহমুদ ছুটিতে তাই, উদ্ভট কথা বলার দায়িত্ব ওবায়দুল কাদেরের’- বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর এ মন্তব্যের সমালোচনাও করেন হাছান। বলেন, ‘আমি কোনো ছুটিতে নাই। গত রোববার এমনকি তার আগেও মিডিয়ার সামনে কথা বলেছি। উনি (রিজভী) কোনো খবরাখবর রাখেন না এর প্রমাণ হচ্ছে তার আজকের এমন বক্তব্য। তাদেরকে (বিএনপি) অনুরোধ জানাব, সকাল বিকাল মিথ্যাচার না করে জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
হাছান বলেন, বিএনপি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসী দল। কানাডার আদালত দুইবার তাদেরকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে রায় দিয়েছে। বিএনপি কোন ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠন তা আমরা ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমরা দেখেছি। তারা কেবল এখনই সন্ত্রাস করছে এমন নয়। ক্ষমতায় থেকে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্যা-এই সমস্যার কিন্তু সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। আর সেটিকে বরং বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির পক্ষ ক্রোড়পত্রসহ টেলিভিশনে প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিটির পক্ষ থেকে প্রচারের খসড়া কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির চেযারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সহ প্রচার উপকমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।