গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া
* বাম হাত নাড়াতে পারছেন না
* জরুরীভিত্তিতে ফিজিওথেরাপি দেয়া প্রয়োজন
* ৮ মে জামিনে মুক্তি পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী
স্টাফ রিপোর্টার : কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ থেকে ক্রমেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। বাম হাত তিনি নাড়াতে পারেন না, তা শক্ত হয়ে গেছে এবং ঘাড়েও তার সমস্যা আছে। গতকাল শনিবার পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, এই রকম একটি স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বন্দী থাকা অবস্থায় যেরকম অবস্থা হয় তাই ম্যাডামের হয়েছে। ম্যাডামের বয়সও চিন্তা করতে হবে, তার বয়স ৭৩ বছরের ওপরে। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি ম্যাডামের যে চিকিৎসা দরকার তা জেলখানায় সম্ভব নয়। ম্যাডামের চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে হওয়া দরকার। এদিকে আগামি ৮ মে জিয়া চ্যারিটেবল মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিন তিনি জামিন পাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খালেদা জিয়া।
গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, জামিনের বিষয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) জানতে চেয়েছিলেন। আমরা ওনাকে বলেছি, দেশে যদি বিন্দুমাত্র আইনের শাসন অবশিষ্ট থাকে তাহলে হাইকোর্ট যে রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে তাকে জামিন দিয়েছেন, সেই জামিন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ স্থগিত করার নজির নেই।
এদিন বিকাল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান, সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সন্ধ্যা ৭টার কিছুক্ষণ আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
আইনজীবীরা জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেন, আগামী ৮ মে সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে তিনি জামিন পাবেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার দ্রুত ফিজিওথেরাপি দেয়ার প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি বলেছেন, আমাকে (খালেদা জিয়াকে) রাজনৈতিক কারণে জেলে রাখা হয়েছে, হয়তো সাজা দিয়েছে, সেখানে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। কোনও চেকে আমি সাইন করিনি। অযথা আমাকে এই সাজা দেয়া হয়েছে। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। মানবিক কারণে হলেও বেগম জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এটা না করা সরকারের অমানবিক আচরণ। এ কারণে ক্ষুণœ হয়েছেন। কিন্তু তিনি মনোবল হারাননি। মিথ্যে মামলায় সঠিক হয়নি। এখনও বিশ্বাস করেন, মিথ্যে মামলায় দেয়া সাজা বাতিল হবে এবং তিনি জামিন পাবেন।
এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলেন, আমরা আইনজীবীরা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। জেল কর্তৃপক্ষের সুপারিশের পরেও আমরা যা জানতে পারলাম, তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে সরকার গড়িমসি করছে। এ কারণে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। সবচেয়ে বড় হচ্ছে, চেয়ারপার্সনের ফিজিওথেরাপি করা দরকার জরুরিভিত্তিতে। জেলখানায় ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা নেই। তার চিকিৎসকেরাও ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দিয়েছেন।
জামিনের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জামিনের বিষয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) জানতে চাইলেন, কী অবস্থা? আমরা ওনাকে বলেছি, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে এবং আমার ৫০ বছরের ক্রিমিনাল প্র্যাকটিসে পাঁচ বছর সাজার পর হাই কোর্ট বিভাগ যখন জামিন দেয় উচ্চ আদালত সেই জামিন কখনো স্থগিত করেননি। এখানে শুধু স্থগিতই করেননি, এখানে তারা পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য দীর্ঘ সময় দিয়ে তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। দেশে যদি বিন্দুমাত্র আইনের শাসন অবশিষ্ট থাকে তাহলে হাইকোর্ট যে রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে তাকে জামিন দিয়েছেন, সেই জামিন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ স্থগিত করার নজির নেই। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যেকোনও কারণেই হোক তার জামিন স্থগিত করেছেন। ৮ মে শুনানির দিন রয়েছে, আমরা আশা করি, ইনশাল্লাহ দেশে যদি বিচারের বিন্দুমাত্র পথ এখনও খোলা থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদের চেয়ারপারসনকে জামিন দেয়া হবে। এসময় তিনি আরও বলেন, ৮ তারিখে বেগম জিয়ার মূল মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলাগুলোতেও জামিন পাবেন।
বেগম জিয়ার আরেক আইনজীবী আবদুর রেজাক জানান, ম্যাডাম বলেছেন, আমি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ- এটা কোর্টকে জানাবেন। জেলে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকার কারণে দিন দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট- এটা সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপনের জন্য আমাদের তিনি বলেছেন।
আরেক আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা ম্যাডামকে দেখতে এসেছিলাম আইনজীবী হিসেবে যেহেতু আমরা মামলা করি সেই কারণে। ম্যাডাম খুবই অসুস্থ। তার যে বাম হাত তিনি নাড়াতে পারেন না, তা শক্ত হয়ে গেছে এবং ঘাড়েও তার সমস্যা আছে। অর্থাৎ এই রকম একটি স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বন্দি থাকা অবস্থায় যেরকম অবস্থা হয় তাই ম্যাডামের হয়েছে। ম্যাডামের বয়সও চিন্তা করতে হবে, তার বয়স ৭৩ বছরের ওপরে। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি ম্যাডামের যে চিকিৎসা দরকার তা জেলখানায় সম্ভব নয়। ম্যাডামের চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে হওয়া দরকার।
তিনি আরো বলেন, আপনারা দেখেছেন জেল কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখেছে তার চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দলের প্রধান, তিনি আজকে জেলখানায় আছেন, কী মামলায় আছেন তা আপনারা জানেন। একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলায় তিনি আজকে বিনা চিকিৎসায় জেলখানায় কষ্ট পাচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ-াদেশ দেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদ- এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে আছেন।