শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নরকংকাল নিয়ে ভাবনা -এম এস শহিদ

ত্রিশ বৎসর ধরে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে নরকংকাল বিশেষজ্ঞরা শেষ অবধি বেশ কিছু রহস্য উদঘাটন করেছেন। তিনটি নরকংকাল সম্বন্ধে তারা যে তথ্য দিয়েছেন তা রীতিমতো বিস্ময়কর। বিজ্ঞানীরা এ তিনটি নরকংকালের নাম দিয়েছেন- গ্রিন লেডি, সিফিলিটিকে চাইল্ড ও আথ্রাইটিক মংক। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য অস্টিওলজিস্ট জেলিনা বেকভ্যালাক লন্ডনের রয়্যান মিন্ট থেকে সংগৃহীত গ্রিন লেডি নামের নারী কংকালটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। গবেষণা শেষে তিনি নিশ্চিত হন যে, গ্রিন লেডি নামের এ নারী কংকালটি ১৩৫০ থেকে ১৪০০ খৃস্টাব্দের মধ্যে যেকোন সময়ে সংগৃহীত হয়। এ কংকালটির ঘাড় তামার পাত দিয়ে মোড়ানো ছিল বলে মাথার খুলি ও দাঁত সবুজ রং ধারণ করেছে। সিফিলিটিকে চাইল্ড নামের দ্বিতীয় নরকংকালটি ১১ বৎসর বয়স্ক একটি শিশুর। গবেষকদের ধারণা এ কংকালটি ১৪০০ থেকে ১৫৪০ খৃস্টাব্দের মধ্যে যেকোনো সময়ে লন্ডনের সেন্ট মেরি স্পিটাল থেকে সংগৃহীত হয়। রেডিও কার্বন টেন্টের মাধ্যমে জানা গেছে, শিশুটি মায়ের প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের মাধ্যমে সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যা। এ ঘটনার সূত্র ধরে বৃটেনের বিজ্ঞানীদের মাঝে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কী বৃটেনে ১৪০০ খৃস্টাব্দেই সিফিলিস রোগের অস্তিত্ব ছিল? আথ্রাইটিক মংক নামের তৃতীয় কংকালটি বারমন্ডসে আবেইতে অবস্থিত একটি সমাধিক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত হয়। ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গবেষক জিল বেনার্ড জানান এ কংকালটি ছিল ৫০০ থেকে ৯০০ বৎসর আগে মৃত একজন ভিক্ষুর। ডান কটিদেশ মচকে যাওয়ায় ইনফেকশনে তিনি মারা যান। কংকালটির আরো একটি রোগ নির্ণয় করেন জিল বেনার্ড। তার মতে, মৃত ভিক্ষুর উভয় কাঁধে বাসা বেঁধেছিলো বাত। নরকংকাল নিয়ে সাম্প্রতিক ঐ গবেষণা রিপোর্টে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব মিলেছে বলে লন্ডন রয়্যাল ফিজিশিয়ান ফাউন্ডেশনের গবেষক অন্যাল্ড ট্রিডেকাস জানান। যা বিশ্লেষণে আরো অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। একই অভিমত ব্যক্ত করে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ গবেষক ডিকিন্স ফেয়ার্ড বলেন, এ ব্যাপারে আরো নিবিড় গবেষণার প্রয়োজন। তার মতে কংকাল নিয়ে এ যাবৎ ব্যাপক গবেষণা চললেও এবারই মিলেছে আনকোরা সব মূল্যবান তথ্য। নরকংকাল নিয়ে ত্রিশ বৎসর যাবৎ পরীক্ষা চালান। তার মধ্যে হাড় ও অস্থি বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা বেছে নেন ২৬টি নরকংকাল। তারা রেডিও কার্বন টেস্টের মাধ্যমে ২৬টি নরকংকালের উত্তরাধিকারী মানুষের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। গবেষকরা জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লন্ডনের ১৮৩ ইউস্টোন রোডস্থ ওয়েলকাম ট্রাস্টে উক্ত ২৬টি কংকালের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। গবেষকেরা মনে করেন, কংকাল নিয়ে আরো দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন। তাতে আরো মূল্যবান নানা অজানা তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ